অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার
অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার কি?
কখনও ভেবে দেখেছেন যে পরীক্ষার আগে হঠাৎ কেন আপনার হাত পা কাঁপত? কেনই বা ইন্টারভিউয়ের আগে আপনার হাতের চেটো ঘেমে যেত? এগুলো কিন্তু স্বাভাবিক।
একবার পরীক্ষা বা ইন্টারভিউ শুরু হয়ে গেলে পর, খানিকক্ষণের মধ্যে আপনি শান্ত হয়ে যেতেন। এত চাপের ফলে কিন্তু আমরা মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারি।
যদিও অনেকেই অকারণে, অযৌক্তিক ভয় পান। এবং তাঁরা চেষ্টা করেও সেই উদ্বেগ ও ভীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। তাদের উদ্বিগ্নতা দৈনন্দিন জিবনকে প্রভাবিত করে। তাদের ক্ষেত্রে, এংজাইটি ডিস্অর্ডার কথাটা প্রযোজ্য।
সাধারণ উদ্বেগ এবং অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের পার্থক্য
অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের উপসর্গ কী?
আমরা সকলেই কম বেশী ভয় পাই, দুশ্চিন্তা করি। কাজেই, চট করে এই রোগ ধরতে পারা মুস্কিল। কিন্তু দীর্ঘ সময় জুড়ে অকারণ দুশ্চিন্তায় জীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠলে একবার মনোবিদের পরামর্শ নেওয়ার কথা ভেবে দেখুন। নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি এই রোগে দেখা যেতে পারে:
হৃদস্পন্দন ও নিশ্বাস প্রশ্বাসের গতি বৃদ্ধি
শিরায় টান
বুকে খিঁচ ধরা
অস্থির মনোভাব এবং ক্রমাগত দুশ্চিন্তায় ভোগা
ফালতু জিনিস নিয়ে মাথা ঘামানো
যে সমস্ত কারণে অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার হয়ে থাকে তা হল:
পারিবারিক ইতিহাস - পরিবারে আগে কারোর কোনও মানসিক রোগ, যেমন ও সি ডি হয়ে থাকলে, অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।
মানসিক চাপ - কাজের চাপ, প্রিয়জনের মৃত্যু বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপড়েন থেকেও এই রোগ হবার সম্ভাবনা থেকে যায়।
শারীরিক সমস্যা - থাইরয়েড, অ্যাজমা, ডায়াবিটিস বা হৃদরোগও কখনও কখনও এই রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি, ডিপ্রেশন থেকেও অনেক সময় অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার শুরু হয়।
নেশা - অত্যাধিক মদ ও মাদকদ্রব্যের আসক্তিও কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ব্যক্তিত্ব ও মানসিকতা - যারা নিখুঁত কাজকর্ম করতে ভালবাসেন বা অন্যের পরামর্শ অনুযায়ী চলেন, তাঁদের পরবর্তীকালে অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার হবার ঝুঁকি থেকে যায়।
অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার কত প্রকারের হয়?
ক্ষেত্র-বিশেষে অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার বিভিন্নরকম হতে পারেঃ
সাধারণ অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার বা জি এ ডি
জি এ ডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা যে কোনও পরিস্থিতিতেই অত্যাধিক দুশ্চিন্তায় ভোগেন। সেই দুশ্চিন্তা তাঁরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না বলে একরকম মানসিক অস্থিরতায় দিন কাটান। এঁরা নিজেকে এক “দম দেওয়া পুতুলের” সাথে তুলনা করেন।অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার বা ও সি ডি
এঁরা নির্দিষ্ট ভয় বা দুশ্চিন্তা কাটানোর জন্য একই কাজ বারংবার করতে থাকেন। উদাহরণ স্বরূপ, জীবাণুর ভয়ে বার বার হাত-পা ধোয়া, কাপড় কাচা, বাসন মাজা বা ঘর মোছা।সামাজিক ভয় বা এস এ ডি
এঁরা সাধারণত লোকের সামনে কোনও কিছু করতে বা বলতে ভয় পান। কারণ এঁরা ভাবেন যে সবাই প্রতি মুহূর্তে তাঁদের খুঁটিয়ে লক্ষ্য করছে। সামান্য ভুল করলে তিনি হাস্যাস্পদ হয়ে উঠবেন। এমন কি নেমন্তন্ন বাড়িতে খেতেও ভয় পান।নির্দিষ্ট জিনিসে ভয় বা ফোবিয়া
এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তি অযৌক্তিক ও অবাস্তব ভয়ের চোটে নির্দিষ্ট জিনিসপত্র এড়িয়ে চলেন। প্লেনে চড়তে, উঁচু বাড়িতে উঠতে, ভিড়ের মাঝে বা মাকড়সা দেখেও ইনি ভয় পেতে পারেন।পোস্ট-ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বা পি টি এস ডি
অনেক সময় ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার স্মৃতি জনিত আতঙ্কে ব্যক্তির মানসিক শান্তি ও ঘুম নষ্ট হয়ে যায়।প্যানিক ডিসঅর্ডার
প্যানিকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনিয়ন্ত্রিত প্যানিক অ্যাটাকের ফলে বিভিন্ন শারীরিক উপসর্গ, যেমন মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট এবং অত্যাধিক ঘামতে দেখা যায়। এই সময় তাঁরা নিজেদেরকে অন্তিম লগ্নের সম্মুখীন মনে করেন ফলে, 'আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি' বা 'আমি মারা যাচ্ছি'র মত চিন্তা করতে থাকেন। এই অ্যাটাকের কোনও নির্দিষ্ট কারণ না থাকার ফলে ব্যক্তি সর্বদাই এক আতঙ্কের মধ্যে বাস করেন।
অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা
অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারকে জয় করা এমন কিছু কঠিন না। তাই বলে এই রোগকে হালকা ভাবে নেওয়া উচিত না। সঠিক ওষুধ এবং কাউন্সেলিং এর সাহায্যে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব।
অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের রোগীর যত্ন নেওয়া
আপনার পরিচিত কারুর যদি এই রোগ হয়ে থাকে, তবে আপনার সাহায্য পেলে উনি এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেন। যে কোনও অসুখের মতই প্রথমে এই রোগ সম্পর্কে আপনি স্পষ্টভাবে জেনে নিলে তাঁর পাশে দাঁড়াতে পারবেন। এই কাজে অসীম ধৈর্যের প্রয়োজন কারণ রোগীকে ক্রমাগত উৎসাহ যুগিয়ে যেতে হবে যাতে তিনি নিজের ভয় বা আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেন।
অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের সাথে মানিয়ে নেওয়া
ইতিবাচক মানসিকতা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের সাহায্যে অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের সঙ্গে সমঝোতা করা সম্ভব। তবে নিজে থেকে এই সমস্ত কিছু করে ওঠা আপনার পক্ষে কঠিন হতে পারে। তাই আপনার পক্ষে অভিজ্ঞ মনোবিদের পরামর্শ নেওয়াই সুবিধাজনক।