নিদ্রা বিকার

নিদ্রা বিকার

Q

নিদ্রা বিকার বলতে কী বোঝায়?

A

আমাদের সবারই মাঝে মধ্যে ঘুম নিয়ে সমস্যা হতে পারে। কিছু রাতে ঘুম আসতে চায় না, কখনো হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় মাঝরাতে আবার অনেক সময় দুঃস্বপ্ন ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়। এইধরনের ঘুমের বিভ্রাট অস্বাভাবিক না কারণ এই সমস্যাগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয় না। কিছু সময় পর আপনা আপনি মিটে যায়।

ঘুমের সমস্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, সপ্তাহ মাস পেরিয়ে বছরে গড়িয়ে যায়, তাহলে আপনার জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের সমস্যা আপনার কার্যক্ষমতা, মেজাজ আর মনঃসংযোগে প্রভাব ফেলে। পড়াশুনা, কাজকর্ম, গাড়ি চালানো, নিত্যনৈমিত্তিক কাজকর্ম বিঘ্নিত করে। দীর্ঘমেয়াদি ঘুমের সমস্যা আপনার পারিপার্শ্বিক সম্পর্ক আর সামাজিক জীবনেও প্রভাব ফেলে।

 

Q

নিদ্রা বিকারের উপসর্গ কী কী?

A

 

নিদ্রা বিকারের সাধারণ কিছু উপসর্গ হল:

  • দিনের বেলায় খিটখিটে ভাব আর ঝিমুনি

  • দৈনন্দিন কাজে মনোযোগ না রাখতে পারা

  • চুপ করে বসে থাকতে থাকতে বা গাড়ি চালানোর সময় হঠাৎ করে ঘুমিয়ে পরা

  • সারাদিন আলস্য বা ক্লান্তি বোধ করা

  • দিনের বেলায় জেগে থাকার জন্য প্রচুর পরিমাণে চা বা কফি পান করা

আপনার পরিচিত কোন ব্যক্তির মধ্যে যদি এইধরনের উপসর্গ দেখতে পান, তাঁদের ঘুম সংক্রান্ত কোন সমস্যা আছে কি না জেনে নিন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে উৎসাহিত করুন।

Q

নিদ্রা বিকারের কারণ কী?

A

নিদ্রা বিকার অনেক প্রকারের হয় এবং অনেক গুল কারণে ঘুমের বিকার হতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ হল –

  • অভ্যাস – সময়মত না ঘুমানোর ফলে ঘুমের বিকার হতে পারে। বেশি তাড়াতাড়ি বা অনেক রাত করে ঘুমলে বা দিনের বেলায় বিভিন্ন সময়ে ঘুমিয়ে পড়লে নিদ্রা-চক্রে ব্যাঘাত ঘটে।

  • শারীরিক অসুস্থতা – শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, ব্যথা-বেদনা, ফুসফুসের সংক্রমণ, বা এইধরনের দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক অসুস্থতার জন্য ঘুমের বিভ্রাট ঘটে পারে

  • অ্যাংজাইটি এবং ডিপ্রেশন - অধিকাংশ এংজাইটি আর ডিপ্রেশনের রোগীদের মধ্যে ঘুমের সমস্যা হতে দেখা যায়। অতিরিক্ত চিন্তা-ভাবনা করা বা মানসিক চাপের জন্যও ঘুমের বিভ্রাট হতে পারে

  • মাদকদ্রব্য আর মদের সেবন ঘুমে বাঁধা সৃষ্টি করে

  • পরিস্থিতি পরিবর্তন – সারা রাত জেগে কাজ করা বা অন্য কোনও দেশে স্থানান্তরিত হওয়া নিদ্রার মান এবং চক্র দুটোর ওপরেই প্রভাব ফেলে

  • ঘুমের পরিবেশ – আপনার শোওয়ার ঘরের পরিবেশের ওপর-ও কিন্তু আপনার ভাল ঘুম হওয়া নির্ভর করে। বেশি আলো বা শব্দের মধ্যে বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, বা কষ্টদায়ক বিছানায় ভাল ঘুম হয় না

  • নাক ডাকা বা দাঁতে দাঁত পেষা ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে

Q

নিদ্রা বিকার কত ধরনের?

A

নিদ্রা বিকার অনেক ধরনের হতে পারে। সাধারণত যে বিকারগুলো বেশিরভাগ রোগীর মধ্যে দেখা যায় সেগুলো হল:

  • অনিদ্রা – যখন কোন ব্যক্তির ঘুমিয়ে পড়তে অসুবিধে হয় বা ঘুমিয়ে পড়লেও বারবার ঘুম বিঘ্নিত হয়, হয়ত উনি নিদ্রাহীনতায় ভুগছেন। অন্য কোন মানসিক উপসর্গ যেমন এংজাইটি, মানসিক চাপ, ডিপ্রেশন বা অন্য কোন শারীরিক অসুস্থতা জন্য অনিদ্রা হতে পারে। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ক্যাফিন সেবন, বা ব্যায়ামের অভাবেও নিদ্রাহীনতা হতে পারে।

  • স্লিপ অ্যাপ্নিয়া – শ্বসনতন্ত্রের ঊর্ধ্বাংশের রুদ্ধতা নিশ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করে যার ফলে ব্যক্তির ঘুম বিঘ্নিত হয়। নাক ডাকা স্লিপ অ্যপ্নিয়ার একটা কারণ, যদিও আক্রান্ত ব্যক্তি নিজে এই সমস্যার কথা জানেন না আর পরের দিনের ক্লান্তি আর কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারেন না।

  • রেস্টলেস লেগস‌ সিন্ড্রোম (আর এল এস) - রেস্টলেস লেগস্‌ সিন্ড্রোমে ব্যক্তি পায়ে সুড়সুড়ি বা ব্যথা অনুভব করেন যা পা নাড়িয়ে বা ছোঁড়াছুড়ি করলে কমে।

  • নারকোলেপ্সি – দিনের বেলায় অতিরিক্ত ঘুম-ঘুম ভাব নারকোলেপ্সির প্রধান লক্ষণ। নিদ্রা আর জাগরণ নিয়ন্ত্রণকারী মস্তিষ্কের স্নায়বিক ক্রিয়ার সমস্যার জন্য নারকোলেপ্সি হয়। ঘুমের অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতে পারে যেমন কথা বলতে বলতে, কাজ করার মাঝে বা গারি চালাতে চালাতে আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাৎ করে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন।

  • অন্যান্য ঘুমের বিভ্রাট – এইসব ছাড়াও আর অনেক ধরনের ঘুমের বিভ্রাট হতে পারে যেমন ঘুমের মধ্যে হেঁটে বেড়ানো (স্লিপ ওয়াকিং), রাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়া, দুঃস্বপ্ন, বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করা, জেট ল্যাগ ইত্যাদি।

Q

নিদ্রা বিকারের চিকিৎসা

A

নিদ্রা বিকারের মারাত্মক প্রভাব স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, দুটোর ওপরেই পড়তে পারে বিশেষত যারা গাড়ি চালান, বা বিপজ্জনক পদার্থ নিয়ে কাজ করেন। অনেক সময় স্বল্পমেয়াদী নিদ্রা বিকার বিশেষ কোন পরিস্থিতির দরুন হতে পারে যা আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যায় আর শরীর নিজের স্বাভাবিক নিদ্রা-ছন্দে ফিরে আসে। যদি ঘুমের সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিদ্রা বিকারের ধরন আর গুরুত্ব বুঝে উনি চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করবেন যা ওষুধ বা থেরাপি বা দুটোর সংমিশ্রণ হতে পারে। চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়মিত ভাবে অনুসরণ করে ওষুধ খাওয়া উচিৎ। ওষুধ বা চিকিৎসা পদ্ধতির কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা নতুন কোনও উপসর্গ চিকিৎসকে অবিলম্বে জানানো উচিৎ। 

Q

নিদ্রা বিকার রোগীর পরিচর্যা

A

নিদ্রা বিকারে আক্রান্ত ব্যক্তি খিটখিটে আর মিতব্যয়ী হয়ে জেতে পারেন। যদি আপনার পরিচিত কেউ নিদ্রা বিকারে ভোগেন, আপনি তাঁকে সাহায্য করার জন্য যা করতে পারেন:

  • রোগী বদমেজাজি হয়ে পড়লেও আপনাকে ধৈর্য আর সহানুভূতির সাথে ওঁর সমস্যা বুঝতে হবে।

  • বাড়ির পরিবেশ শান্ত রাখুন যাতে ওঁর ঘুমোতে অসুবিধা না হয়।

  • যদি আপনার নিদ্রা-চক্রে বা নাক ডাকায় ওঁর ঘুমোতে অসুবিধা হয়, কিছু সময়ের জন্য ওঁর জন্য প্রয়োজনীয় শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে প্রাধান্য দিন। আপনি অন্য ঘরে ঘুমোতে যান যাতে ওঁর ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে।

  • রোগীর নিদ্রা অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে সাহায্য করুন। তাঁকে নিয়মিত ব্যায়াম আর ধ্যান করার জন্য উৎসাহিত করুন।

  • যদি দীর্ঘ সময় ধরে উনি নিদ্রা বিকারে ভুগে থাকেন, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলুন।

Related Stories

No stories found.
logo
হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন
bengali.whiteswanfoundation.org