কখন অভিভাবকদের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন?

কখন অভিভাবকদের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন?

সাধারণত বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে অনুষ্ঠিত শিক্ষক-অভিভাবকদের মিটিং-এর সময়েই একজন শিক্ষকের সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ির লোকেদের কথাবার্তা হয়। সেদিন অভিভাবকরা শিক্ষকদের কাছে জানতে চান তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার উন্নতির বিষয়ে।

যাইহোক, এই সময় ছাত্রদের বিষয়ে এমন কিছু কথা শিক্ষকরা ছাত্রদের অভিভাবকদের সঙ্গে বলতে পারেন, যা ছাত্রদের আচরণগত সমস্যা সম্পর্কিতও হতে পারে। আর এই বিষয়টি নিয়ে ছাত্রদের এবং কলেজের কাউন্সেলরদের সঙ্গে আলোচনা হওয়া সত্ত্বেও, এবং ছাত্রের আচরণগত সমস্যা সমাধান না হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষকরা ছাত্রদের বাবা-মা বা অভিভাবকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষককে বিশ্বাস করে বলা ছাত্রের কথার গোপনীয়তা রক্ষার প্রশ্নটি সামনে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে একজন শিক্ষক কীভাবে এবং কখন অভিভাবকদের কাছে ছাত্রদের সমস্যা খুলে বলবে সেটা একজন শিক্ষকের সিদ্ধান্তের উপরেই নির্ভরশীল।

অধিকাংশ কাউন্সেলর কোনও ছাত্রের সঙ্গে কথা বলার আগে তার অভিভাবকদের কাছ থেকে সেই ছাত্রের মানসিক সমস্যা সম্বন্ধে তথ্য জোগাড় করার চেষ্টা করেন। কিছু ক্ষেত্রে এই প্রসঙ্গে আইন কতগুলি নির্দেশ জারি করতে পারে। যেমন—

  • ছাত্রদের নিজের সমস্যা

  • ছাত্রদের কারণে অন্যদের সমস্যা

  • ড্রাগ নেওয়া বা অস্ত্র রাখার মতো অবৈধ কার্যকলাপে ছাত্রদের জড়িয়ে পড়া

ছাত্রদের উপর নজর রাখার জন্য যদি অভিভাবকদের সাহায্যের দরকার হয় তাহলে একজন শিক্ষক এবং কাউন্সেলর সেই সাহায্য অভিভাবকদের কাছ থেকে নিতে পারেন। এই সাহায্য তখনই দরকার হবে যখন ছাত্রদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দেবে এবং মাঝে মাঝে তারা ক্লাসে অনুপস্থিত হতে শুরু করবে। এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সমস্যাগুলিকে প্রমাণ করার জন্য সেগুলি চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে।

কীভাবে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলা উচিত?

কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে যদি কাউন্সেলর উপস্থিত না থাকেন, তাহলে একজন শিক্ষক যদি কোনও ছাত্রের মধ্যে অস্বাভাবিক মানসিক অবস্থা, যেমন— বিপর্যয়, রাগ, আসক্তি প্রভৃতির লক্ষণ দেখতে পান, তাহলে তিনি সেই বিষয়গুলি অভিভাবকদের জানাতে পারেন। এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হল যে, শিক্ষক যখন ছাত্রের আচরণগত ত্রুটি নিয়ে চিন্তান্বিত হবেন, তখন অভিভাবকদের সেই কথা জানানোর সময়ে তাঁকে যথাযথভাবে অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। সেখানে নিজেকে জাহির করা বা ছাত্রের সম্পর্কে তাড়াতাড়ি কোনও সিদ্ধান্ত বা মতামত দেওয়া উচিত নয়।

যখন অভিভাবকদের সঙ্গে একজন শিক্ষক ছাত্রের মানসিক সমস্যা নিয়ে কথা বলবেন, তখন তাঁর নিরপেক্ষ বাক্য ব্যবহার জরুরি। যেমন — ''আমি লক্ষ্য করেছি যে ছাত্রের মধ্যে...'' বা ''আমি ছাত্রটির ওই বিশেষ আচরণের জন্য চিন্তা করছি...'' --  এইভাবেই একজন শিক্ষকের পক্ষে কথা বলা কাম্য। এছাড়াও একজন শিক্ষক এই বিষয়ে উদাহরণস্বরূপ তাঁর পুরনো কোনও অভিজ্ঞতার কথা ছাত্রদের বাবা-মা বা অভিভাবকদের কাছে বলতে পারেন। কীভাবে তাঁর এক পুরনো ছাত্র, যে এক ধরনের মানসিক অসুস্থতার শিকার হয়েছিল এবং সে সেই সমস্যা কাটিয়েও উঠেছিল একজন কাউন্সেলরের সাহায্যের দ্বারা, সেকথা শিক্ষক একজন ছাত্রের বাড়ির লোকেদের কাছে জানাতে পারেন। এর ফলে যে ছাত্রটি বর্তমানে কোনও আচরণগত সমস্যায় ভুগছে, তার বাড়ির লোকেদের কাছে শিক্ষকের অতীত অভিজ্ঞতা আশার আলো দেখাতে পারে।

ছাত্রদের সম্মতি জরুরি

যখন কোনও ছাত্র তার নেশার দ্রব্যের প্রতি আসক্তি, যৌন নির্যাতন বা আত্মহত্যার মতো কোনও সমস্যার কথা একজন শিক্ষককে বিশ্বাস করে বলে, তখন শিক্ষকের তাকে প্রাথমিকভাবে মানসিক চিকিৎসায় সাহায্য করার পর যদি সেকথা অভিভাবক বা কাউন্সেলরকে জানানোর দরকার হয়, তাহলে সেই ছাত্রের সম্মতি নেওয়া একান্তই প্রয়োজন। একজন ছাত্রের কাছে শিক্ষকের এহেন আচরণ খুবই গ্রহণযোগ্য এবং শিক্ষকের প্রতি ছাত্রদের বিশ্বাসও এর ফলে অনেক বেড়ে যায়। ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে সম্পর্কের বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। তবে, যদি কোনও কারণে ছাত্র সম্মতি না দেয় আর শিক্ষক যদি দেখেন যে, এর ফলে ছাত্রের কোনও বিপদ ঘটতে পারে, তাহলে শিক্ষকের উচিত ছাত্র-সম্পর্কিত সব তথ্য তার অভিভাবকদের কাছে পরিষ্কার করে জানিয়ে দেওয়া। যখন অভিভাবক বা কাউন্সেলরের সামনে একজন ছাত্রের এহেন মানসিক সমস্যার স্বরূপ স্পষ্ট হয়ে যায়, তখন তা সমাধানের জন্য তারা যথাযথ পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে। আর এর ফলে সমস্যায় আক্রান্ত সেই ছাত্রের উপরও তার সুপ্রভাব লক্ষ্য করা যায়।      

Related Stories

No stories found.
logo
হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন
bengali.whiteswanfoundation.org