পরিচর্যা

পরিচর্যাকারীর যত্ন নিন

হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন

এর আগের লেখাটিতে আমি পরিচর্যাকারীর জীবনের ওপর পড়া বিভিন্ন প্রভাবগুলি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। এই প্রচ্ছদটিতে আমি যে বিষয়ে আলোচনা করব তা বেশ পরিহাস মূলক - পরিচর্যা করার কারণে যত্ন নেওয়ার মানুষটির উপর শারীরিক প্রভাব। এটি আলোচনাটি জরুরি কারণ যত্ন নেওয়ার মানুষগুলি ফলস্বরূপ নানা শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করেন, এটি পরিহাস মূলক কারণ অন্য একজন কে সুস্থ করতে গিয়ে তাঁরা নিজেরাই অসুস্থ হয়ে পড়েন।

কেয়ারার্স ওয়ার্ল্ডওয়াইড দ্বারা একটি সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী, তারা যে সকল পরিচর্যাকারীদেরকে নিয়ে কাজ করে, তাঁদের মধ্যে ৬৯% মানুষজন (যারা মানসিক ভাবে অসুস্থ বা এপিলেপ্সি গ্রস্থ মানুষের যত্ন নেন) বলেছেন যে তাঁরা নিয়মিত মাথা যন্ত্রণা, গায়ে হাতে যন্ত্রণা, সর্দি কাশি ইত্যাদিতে ভোগেন। কিন্তু তাঁদের প্রতিবেশী ও সহকর্মীদের মতো তারা সময় পান না এই সমস্যা গুলিকে সারিয়ে তোলার। সবসময় তাঁদের কারোর যত্ন নিতে হয় আর তার পাশাপাশি নিজেদের কাজ করতে হয়। এর ফলে নিজেরা বিশ্রাম নেওয়ার সময় পান না।

এই সব ব্যাধির জন্য তাঁরা কোন চিকিৎসকের পরামর্শও নেন না। যখন তাদের প্রশ্ন করা হয়, তারা বলেন, “আমার সময় নেই” বা “আমাকে যদি হাঁসপাতালে ভর্তি হতে হয়, তাহলে আমার আত্মীয়র যত্ন কে নেবে?” বা “আমার কাছে ওষুধপত্র কেনার পয়সা নেই” বা “আমি যদি ক’রাত্রি ভাল করে ঘুমাতে পারি, তাহলে সুস্থ হয়ে উঠবো”। একটি সংসস্থা হিসাবে আমরা কিছু চিকিৎসকের সঙ্গে মিলে বোঝার চেষ্টা করছি এই সব মানুষজনের প্রত্যেকদিন কতটা কষ্ট সহ্য করতে হয়। যখন এই সব যত্ন নেওয়ার মানুষেরা তাঁদের অসুস্থ আত্মীয়দের নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন, তখন অসুস্থ ব্যাক্তিটির সাথে তাঁদেরও খোঁজখবর নেওয়া উচিৎ। তাঁদের প্রতি একটু সহানভুতিশীল হওয়া উচিৎ।

এভাবে আবার সমস্ত পরিচর্যাকারীর কাছে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তাঁদের বিষয় সচেতনতা ও তাঁদের উপর যত্ন শুরু হওয়ার কথা স্থানীয় কার্যালয়ে। এর আগের প্রচ্ছদটিতে আমি আপনাদের বলেছিলাম, আপনাদেরর আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীদের কথা ভাবতে এবং খুঁজে বার করতে বলেছিলাম এমন কাউকে যিনি অন্যদের পরিসেবা করেন। হয়তো আপনারা এমন কাউকে খুঁজে বারও করতে পেরেছেন। কিন্তু আপনারা হয়তো এখন পর্যন্ত ভেবে উঠতে পারেননি কি ভাবে তাঁর দিকে হাথ বাড়াবেন এবং তাঁকে সাহায্য করবেন। এটি একটি কঠিন কাজ- আপনি হয়তো জানেনই না তাঁকে কি বলবেন বা তাঁর কি প্রতিক্রিয়া হবে। আপনি তাঁর জন্য সময় বার করে একদিন তাঁর সাথে বসে কথা বলার চেষ্টা করুন। কে জানে? হয়তো আপনার সাথে কথা বলার পর তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারে একজন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে নিজের সর্দি কাশি বা নিজের মাথা যন্ত্রণার বষয়ে পরামর্শ নিতে। আপনি তাঁকে হয়তো তার নিজের জন্য কিছু কেনাকাটা করার ইচ্ছে জাগাতে পারেন, বা তাঁর গায়ে হাতে যন্ত্রণা বা জ্বরজারি সারিয়ে তোলার কোন সমাধান বলতে পারেন। আপনি যদি তাঁকে হাঁসি মুখে সম্বোধন করেন বা এগিয়ে গিয়ে তাঁদের সাহায্য করেন তাহলে তাঁদের ভার একটু হাল্কা হবে।

যদি তাঁদের কোন রকম চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা না হয় তাহলে এই রোগ গুলি ব্যাধি হয়ে দাঁড়াতে পারে। ক্রমশ তাঁদের উপর দেওয়া গুরুদায়িত্ব, মানসিক চাপ এবং তাঁদের অনিদ্রা একে একে তাঁদের কাজের উপর প্রভাব ফেলতে শুরু করবে যার ফলে তাঁরা ভাল করে অন্যের পরিচর্যা করতে পারবেন না। কেউ যদি তাঁদের যত্ন না নেন তাহলে তাঁদের সাথে সাথে যাদের যত্ন তাঁরা নিচ্ছেন তাদেরও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। এই সমস্যাটি শুরু হওয়ার আগেই আপনারা পরিচর্যাকারীর যত্ন নিতে এগিয়ে আসুন।

পরবর্তী প্রচ্ছদটিতে আমরা আলোচনা করব কি ভাবে যত্ন পরিচর্যাকারীর মানসিক সুস্থতার উপর প্রভাব ফেলে এবং কিভাবে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তাদের দেখাশোনা করা সম্ভব। 

ডাঃ অনিল পাটিল কেয়ারারস ওয়ার্ল্ডওয়াইডের প্রতিষ্ঠাতা এবং কার্যনিবাহী অধিকর্তা। এই সংস্থা মনোরোগীর পরিচর্যাকারী, যারা বিনামূল্যে সেবা করেন, তাদের সাহায্য করে থাকে। ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা শুধুমাত্র উন্নয়নশীল দেশগুলিতেই কাজ করে। ডাঃ পাটিল তাঁর সহকর্মী রুথ পাটিলের সাথে এখানে লিখছেন। আরও জানতে আপনি লগ ইন করতে পারেন www.carersworldwide.org তে অথবা লিখে পাঠান columns@whiteswanfoundation.org ঠিকানায়।

এই লেখাটিতে লেখক নিজের ব্যাক্তিগত মতামত প্রকাশ করেছেন এবং তা হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশনের মতামতের থেকে আলাদা হতে পারে।