আপনি কি চান আপনার একজন কাছের মানুষ, যিনি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন, তিনি চিকিৎসার পর আবার নিজের কাজের জগতে আবার ফিরে যান? তাহলে বিশেষজ্ঞরা সেক্ষেত্রে কয়েকটি এমন বিষয় চিহ্নিত করে দিতে পারেন, যাতে আপনি বুঝতে পারবেন কখন একজন মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষ আবার কাজ করতে পারবে।
১. উপসর্গভিত্তিক সাড়া: একজন মানসিক রুগির মধ্যে চিকিৎসার পরেও কি মনোরোগের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে? এক্ষেত্রে একজন মনোবিদের কাছে সেই লক্ষণগুলির কথা জানাতে হবে এবং সেগুলো শুনে মনোবিদ যদি ওই লোকটিকে কাজে যাওয়ার কথা বলেন, তবেই তিনি কাজের জগতে ফিরতে পারবেন।
এসব ক্ষেত্রে বিভিন্ন মনের অসুখের প্রকৃতি বা ধরনগুলি গুরুত্ব পেয়ে থাকে। যেমন- একজন ওসিডি (অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার)-তে আক্রান্ত রুগির মধ্যে সঠিক চিকিৎসার পরেও যে ধরনের লক্ষণ দেখা যায় তার থেকে অনেক কম পরিমাণ লক্ষণ বা তেমন কোনও লক্ষণ দেখাই যায় না একজন সাধারণ অবসাদগ্রস্ত রুগির মধ্যে।
২. তাদের অভ্যাসের পরিবর্তন: তারা কি ভালভাবে খাওয়াদাওয়া করছে, ঘুমাচ্ছে এবং অসুখের আগে অন্যদের সঙ্গে তারা যেভাবে মেলামেশা করত অসুখের পরেও কি সেভাবে তারা মেলামেশা করছে? তাদের মধ্যে কি কাজ করার সদিচ্ছা প্রকাশ পাচ্ছে?
৩. দৈনন্দিন কাজকর্ম ঠিকঠাকভাবে করা: আপনি কি আত্মবিশ্বাসী যে আপনার কাছের মানুষটি মানসিক অসুস্থতা কাটিয়ে আবার কাজের জায়গায় ফিরতে পারবে এবং রুটিনমাফিক কাজ করতে সক্ষম হবে?
কখনও কখনও পরিচর্যাকারীরা তাদের কাছের মানুষ, যিনি মানসিকভাবে অসুস্থ, তাঁকে কাজকর্ম করতে দিতে চান না। কারণ পরিচর্যাকারীদের মধ্যে অসুস্থ লোকটির সক্ষমতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে বা রুগির মনের অত্যধিক চাপ নিয়েও পরিচর্যাকারীদের মধ্যে ভয় থাকে। কিন্তু অসুস্থ মানুষটিকে যদি কাজের সুযোগ দেওয়া যায়, তাহলে পরোক্ষভাবে তাকে সাহায্যই করা হবে। এক্ষেত্রে একজন পরিচর্যাকারীর করণীয় কাজগুলো হল—
অসুস্থ মানুষদের সহজভাবে চিন্তাভাবনা করতে দেওয়া যাতে তারা আবার নিজেদের কাজের জগতে ফিরতে পারে এবং অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা বা নিজের যত্নের দিকেও নজর দিতে পারে।
কাজের ক্ষেত্রে চাই সঠিক পরিকল্পনা ও যথাযথ সাহায্য। আপনি পারেন আপনার কাছের অসুস্থ মানুষর জন্য তার পছন্দের কাজের সন্ধান দিতে। যদি একজন মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি তার অসুখের আগে যেখানে কাজ করত সেখানেই আবার কাজ করতে চায়, সেক্ষেত্রে সেই সংস্থার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে। রুগির রোগের বিষয়ে আলোচনা করে তাকে কর্তৃপক্ষ কীভাবে সাহায্য করতে পারে সেই বিষয়ে কথা বলা যেতে পারে।
যদি আপনার কাছের মানুষ কাজ করার সুযোগ না পায় তাহলে তার মধ্যে নৈতিক অবক্ষয় দেখা দেবে। তার এই ভেবে মন খারাপ হবে যে তার আশপাশের সবাই খুব ভালোভাবে কাজকর্ম করছে, কিন্তু সে কাজ করতে পারছে না। এক্ষেত্রে একজন পরিচর্যাকারীর উচিত অসুস্থ ব্যক্তির আত্মবিশ্বাসকে চাঙ্গা করে তোলা। রুগির আগ্রহ ও দক্ষতা অনুযায়ী সঠিক কাজ করার উৎসাহ দেওয়াও এইসময় জরুরি।
কর্মজগতে ফেরার আগে এদেরকে বেশি করে সামাজিক দায়িত্ব ও মেলামেশা করার সুযোগ করে দিতে হবে, যাতে নিজের সম্পর্কে তাদের মূল্যবোধ জাগে। এর জন্য তাদেরকে নিয়ে বিয়েবাড়ি যাওয়া বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার মতো সামাজিক মেলামেশার সুযোগ করে করে দিতে হবে। এছাড়াও দরকার ঘরের কাজকর্মের ক্ষেত্রে তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া, বাজার করতে দেওয়া, বিল জমা দিতে দেওয়া প্রভৃতি। এই কাজগুলো আস্তে আস্তে করতে পারলে একজন অসুস্থ মানুষ দিশাহারা বোধ করবে না এবং সব দিক মানিয়ে গুছিয়ে নিয়ে চলতে পারবে।