অডিটরি প্রসেসিং ডিসঅর্ডার বলতে কী বোঝায়?
কার্তিকের অভিভাবকরা তার স্কুল ও পড়াশোনা নিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ১২ বছরের কার্তিক ছিল শারীরিকভাবে সুস্থ-সবল একটি ছেলে। সে তার বয়সের তুলনায় দু'ক্লাস নীচে, ক্লাস ফাইভে পড়ত। সে কত মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়ার করার চেষ্টা করত বা তার অভিভাবকরা বাড়িতে তার জন্য কত সংখ্যক শিক্ষকের ব্যবস্থা করেছিল তা আদৌ কোনও বড় বিষয় ছিল না। তবু কার্তিক ক্লাস ফাইভের পরীক্ষায় সফল হতে পারেনি। তার বাবা-মা তাকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত হয়ে উঠেছিল; দিনে-দিনে কার্তিকের নিজের উপর থেকে বিশ্বাস ও ভরসা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছিল। সে তার সমবয়সি অন্য বাচ্চাদের তুলনায় ক্রমে পিছিয়ে পড়ছিল। সেজন্য তার অভিভাবকরা তাকে একজন শিশু মনস্তত্ত্ববিদের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মনস্তত্ত্ববিদ নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিচার-বিবেচনা করেও কার্তিকের মধ্যে বৌদ্ধিক, বিকাশগত বা শেখার অক্ষমতা খুঁজে পায়নি।
কার্তিক সবসময়ে অভিযোগ করত যে অন্যরা তাকে যা বলে তা সে বুঝতে পারে না এবং সেজন্য অন্যের নির্দেশ মেনে কাজ করতে তার অসুবিধা হয়। প্রথম প্রথম সেকথা শুনে তার বাবা-মা ও শিক্ষকরা ভাবত যে এটা কার্তিকের একপ্রকার বদমায়েশি এবং সেজন্য সে শাস্তিও পেয়েছিল। কিন্তু ক্লাস ফাইভে পড়ার সময়ে তারা বুঝতে পেরেছিল যে অন্যের নির্দেশ বা কথা অনুযায়ী কার্তিকের কাজ না করতে পারার পিছনে সত্যিই কিছু কারণ রয়েছে। তখন একজন শিক্ষক তার বাবা-মাকে একজন অডিওলজিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়। সেই অডিওলজিস্ট কার্তিককে পরীক্ষা করে বোঝেন যে সে অডিটরি প্রসেসিং ডিসঅর্ডার-এ আক্রান্ত হয়েছে।
অভিভাবক বা শিক্ষকদের এই বিষয়টা সম্বন্ধে ভালোভাবে জানা আছে কি?
অডিটরি প্রসেসিং ডিসঅর্ডারকে (এপিডি) সেন্ট্রাল অডিটরি প্রসেসিং ডিসঅর্ডার বলেও চিহ্নিত করা হয়। এর ফলে বাতাসের মধ্য দিয়ে ভেসে আসা শব্দ আমাদের কানের ভিতর দিয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছতে পারে না। স্কুলে পড়ে এমন বাচ্চাদের ৫ শতাংশ এই সমস্যার শিকার হয়। অথচ এর পিছনে কিন্তু বাচ্চাদের কানের কার্যগত ও গঠনগত কোনওরকম দুর্বলতা বা অস্বাভাবিকতা থাকে না।
এপিডি-তে আক্রান্ত শিশুরা শব্দ ও ভাষার মধ্যে কোনও পার্থক্য করতে পারে না, এমনকী শব্দ খুব জোরে ও পরিষ্কার শোনা গেলেও তারা তা বুঝতে পারে না। তাদেরকে অন্যরা কী কথা বলছে তা তারা বুঝতে পারে না। কারণ তাদের কান ও মস্তিষ্কের মধ্যে সংযোগের অভাব থাকে। আসলে তাদের মস্তিষ্কে শব্দ, বিশেষত কথ্যভাষার চিহ্নিতকরণ ও তার সঠিক ব্যাখ্যা কিছু কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এছাড়া একটা শব্দ কোথা থেকে আসছে তা বলার ক্ষেত্রেও তাদের সমস্যা হয়। একটা শব্দের গতিপ্রকৃতি ও তার পরিপ্রেক্ষিত বোঝার ক্ষেত্রেও এইধরনের শিশুদের অসুবিধার মুখোমুখি হতে হয়।
সূত্র-
http://kidshealth.org/en/parents/central-auditory.html
https://ldaamerica.org/types-of-learning-disabilities/auditory-processing-disorder/
অডিটরি প্রসেসিং ডিসঅর্ডার-এর কী কী লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়?
নীচের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো দেখে বাচ্চাদের অডিটরি প্রসেসিং ডিসঅর্ডার চিহ্নিত করা যায়-
কী কারণে অডিটরি প্রসেসিং ডিসঅর্ডার হয়?
অডিটরি প্রসেসিং ডিসঅর্ডার (এপিডি)-এর কারণগুলো হল-
অডিটরি প্রসেসিং ডিসঅর্ডার নির্ধারণ
এটি এমন একটি জটিল সমস্যা যা নির্ধারণ ও চিহ্নিত করা তত সহজ হয় না। তবু অভিভাবক, পরিচর্যাকারী বা শিক্ষক হিসেবে আপনি বা আপনারা বাচ্চাদের লক্ষণ ও উপসর্গ দেখে তাদের অডিওলজিস্টদের কাছে নিয়ে যেতে পারেন। অডিওলজিস্ট নানারকম যন্ত্রপাতি ও বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাচ্চাদের এপিডি নির্ধারণ করতে সাহায্য করেন।
অনেক বাচ্চা এই দুর্বলতার কারণে লেখাপড়ার দিক থেকে অনেক বাধার মুখোমুখি হয়। এজন্য যত তাড়াতারি সম্ভব এই সমস্যা নির্ধারণ করা জরুরি।
অডিটরি প্রসেসিং ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা
যদি আপনি শিক্ষক হন তাহলে ছোট ছোট কিছু কৌশলের সাহায্যে আপনি আপনার এই সমস্যায় আক্রান্ত ছাত্রদের উন্নতি করতে পারবেন-
ছাত্রদের মধ্যে সবসময়ে মৌখিকতার ধারণা গড়ে তোলা, কথা বলার জন্য বেশি করে শব্দের ব্যবহার, নিয়মকানুন প্রভৃতি শেখানো জরুরি।