ডিসক্যালকুলিয়া কী?
সংখ্যা সম্বন্ধে সাধারণ তথ্য বা গণিতের পদ্ধতি মনে রাখতে না পারা, ধীরগতিতে অঙ্ক করা ইত্যাদি শিক্ষা সম্বন্ধীয় বিকারকে ডিসক্যালকুলিয়া বলা হয়। এর উপসর্গ প্রত্যেক শিশুর ক্ষেত্রে আলাদা। কেউ শব্দের মাধ্যমে ব্যক্ত অঙ্কের সমস্যা বুঝতে পারে না, কারোর অঙ্কের সমস্যার সমাধান করার পদ্ধতি ক্রম বুঝতে অসুবিধা হয়, আবার অন্য শিশু গণিতশাস্ত্রের বিশেষ কিছু ধারা বুঝতে পারে না।
কোন সমস্যাগুলো ডিসক্যালকুলিয়ার অন্তর্গত নয়?
সাধারণত অনেক শিশুর অঙ্ক বুঝতে অসুবিধা হয় আর কিছু শিশুর পড়াশোনা বুঝতে অন্যদের তুলনায় বেশি সময় লাগে। বারবার অনুশীলন করে তারা সমাধান পদ্ধতি রপ্ত করতে পারে।
অনেকের মধ্যে অঙ্ক করার ভীতি উদ্বেগ আর মানসিক চাপের সৃষ্টি করে, যা পরীক্ষায় খারাপ ফলের কারণ হতে পারে।
এইগুলো ডিসক্যালকুলিয়ার উপসর্গ নয়।
ডিসক্যালকুলিয়ার উপসর্গ কি?
প্রত্যেক শিশু নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী পড়াশোনা শেখে। পড়াশোনায় সাধারণ মানের শিশুদের নিয়মিত অভ্যাস দরকার গণিতের নিয়মাবলী বোঝার জন্য। শিক্ষকের বাড়তি প্রচেষ্টা আর নিয়মিত অনুশীলন সত্যেও যদি কোন শিশু যথাযথ উন্নতি না করে বা সমস্যার অবনতি ঘটে তাহলে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে শিশুটি ডিসক্যালকুলিয়ায় ভুগছে।
ডিসক্যালকুলিয়ার উপসর্গ এবং পর্যায় প্রত্যেক শিশুর ক্ষেত্রে আলাদা হয়।
স্কুল শুরু হওয়ার আগে
সংখ্যা গুনতে অসুবিধা হয়
বই-এ ছাপা সংখ্যা চিনতে অসুবিধা হয়
সংখ্যা জ্ঞানের সাথে সাধারণ জীবনের উপমার সম্পর্ক স্থাপন না করতে পারা
সংখ্যা সম্বন্ধিত তথ্য মনে রাখতে না পারা
বিভিন্ন ধরনের চিহ্ন, আকার বা সংখ্যাগত ছন্দের মধ্যে তফাত বুঝতে না পারা। যেমন এক বাক্সে রাখা গোল বল আর চৌকো টুকরো কে আকার অনুযায়ী আলাদা আলাদা বাক্সে রাখতে না পারা
স্কুলের প্রাথমিক এবং মধ্যস্তরে
সংখ্যা এবং চিহ্ন চিনতে না পারা
যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ করতে না পারা
শব্দের মাধ্যমে ব্যক্ত অঙ্কের সমাধান করতে না পারা
কোন বস্তুর মাপ নিতে না পারা
মৌখিক গণিত না করতে পারা
টেলিফোন নাম্বার মনে রাখতে না পারা
সংখ্যা সংক্রান্ত, বা যুক্তি এবং পরিকল্পনা প্রয়োজন এমন কোন খেলায় অংশগ্রহণ না করা
কিশোর বয়সে সমস্যা
জিনিষের দাম নির্ধারণ বা যোগ করতে না পারা
উচ্চ পর্যায়ের গণিত পদ্ধতি বুঝতে না পারা
টাকা পয়সার হিসেব রাখতে না পারা
কোন বস্তুর মাপ নিতে না পারা
স্থান, কাল এবং দূরত্বের সংজ্ঞা বুঝতে না পারা
মৌখিক গণিত না করতে পারা
একই সমস্যার বিভিন্ন সমাধান বার করতে না পারা
দূরত্ব আর গতির অনুমান করতে হয় এমন খেলা এবং গাড়ি চালানোর মতো কাজ করতে না পারা
ডিসক্যালকুলিয়া হওয়ার কারণ কী?
ডিসক্যালকুলিয়া হওয়ার সঠিক কারণ এখনো গবেষকরা জানতে পারেননি। অনুমান করা হয় যে বংশগত এবং জিনঘটিত কারণে ডিসক্যালকুলিয়া হতে পারে।
ডিসক্যালকুলিয়া কী করে নির্ধারণ করা হয়?
ডিসক্যালকুলিয়া চিহ্নিত করার বিশেষ কোন রোগ নির্ধারণ পরীক্ষা নেই। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কিছু বিশেষ ধরনের মূল্যায়ন পদ্ধতি দ্বারা পর্যবেক্ষণ করে ডিসক্যালকুলিয়া নির্ধারণ করেন।
ডিসক্যালকুলিয়ার চিকিৎসা
অন্যান্য রোগের ইতিবৃত্ত – ডিসক্যালকুলিয়ায় আক্রান্ত শিশুর মধ্যে অন্যান্য শিক্ষা সংক্রান্ত বিকার বা এ ডি এইচ ডি–র লক্ষণ থাকতে দেখা গিয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞ প্রথমেই শিশুর অন্যান্য সমস্যার কথা জেনে নিয়ে রোগ নির্ধারণ করেন।
রোগ নির্ধারণ - বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষা বিশেষজ্ঞেরা নানান পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ধারণ করেন। শিশুর শিক্ষাগত দক্ষতার মূল্যায়ন করা হয়। পড়াশুনা করার বিশিষ্ট পদ্ধতির সাহায্যে শিশুটিকে সমস্যার সাথে মোকাবিলা করতে শেখানো হয়।
স্কুল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা – বাবা-মায়ের উচিৎ স্কুলের শিক্ষকদের সমস্যার কথা জানিয়ে সাহায্য চাওয়া। শিক্ষকরা এই ক্ষেত্রে আলাদা করে শিশুকে একক ভিত্তিতে বেশি সময় ধরে পড়াতে বা সমাধান পদ্ধতি বোঝাতে পারেন। শিশুকে অতিরিক্ত কিছু বিশেষ সুযোগ দেওয়া উচিৎ যেমন পরীক্ষায় একটু বেশি সময় দেওয়া বা পরীক্ষায় ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে দেওয়া, ইত্যাদি। শিক্ষকদের শিশুর প্রগতির প্রতি নজর রাখা উচিৎ এবং আগের পদ্ধতি কার্যকারী না হলে অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিৎ।
মধ্যস্থতা প্রতিক্রিয়া – পড়াশুনায় যে শিশুদের গতি মন্থর তাঁদের জন্য কিছু স্কুলে এই ধরনের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে যাতে এই শিশুদের এককভাবে বা ছোট দলে আলাদা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ / কাউন্সেলার – যে কোন ধরনের শিক্ষা সংক্রান্ত বিকার শিশুর আত্মাভিমান এবং আত্মবিশ্বাসকে নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করতে পারে যার ফলে সে উদ্বেগ এবং মানসিক চাপে ভুগতে পারে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলার তাঁকে এই সমস্যার সাথে মোকাবিলা করতে সাহায্য করতে পারবেন।
ডিসক্যালকুলিয়ায় আক্রান্ত শিশুর পরিচর্যা
আপনার ভালবাসা এবং সহযোগিতা আপনার সন্তানকে সমস্যার সাথে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।
মনে রাখবেন সব শিশুর ব্যক্তিত্ব আলাদা এবং প্রত্যেকের নিজস্ব গুণ এবং প্রতিভা রয়েছে। আপনাকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চেষ্টা করে দেখতে হবে যে কোনও পরিবর্তন ঘটছে কি না।
আপনি আপনার শিশুকে নিম্নলিখিত ভাবে সাহায্য করতে পারেন –
ডিসক্যালকুলিয়া সম্বন্ধে জানা – ডিসক্যাল্কুলিয়া সম্বন্ধে জানুন। সমস্যার ব্যাপারে সচেতনতা আর জ্ঞানলাভ নিরাময়ের প্রথম ধাপ। শিশুর প্রতি আপনার ভালবাসা আর সহযোগিতা প্রকাশ করুন। ওকে বোঝান যে ওর সমস্যা-গত পরিস্থিতি সম্বন্ধে আপনি সচেতন।
খেলার ছলে অঙ্ক – শিশুকে ঘরে মজুত সাধারণ জিনিস যেমন ফল, সবজি, বাসন, খেলনা ইত্যাদির সাহায্যে সংখ্যাত বোঝান। ওকে ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে দিন। বিভিন্ন ধরনের গণিত সংক্রান্ত ক্রিয়ার সহযোগে চেষ্টা করে দেখুন কোনটায় সে উপকৃত হচ্ছে। যেহেতু অঙ্ক সাধারণ জীবনে রোজ ব্যবহৃত হয় তাই ওকে টাকা পয়সা হিসেব এবং সময়ের গতির সঙ্গে গণিতের সম্পর্কে বোঝান।
উৎসাহিত এবং সহযোগিতা করা – আপনার সন্তানের বৈশিষ্ট্য এবং গুন নিয়ে ওর সাথে কথা বলুন। ওকে নিজের পছন্দসই কাজ করতে উৎসাহিত করুন। এতে ওর আত্মবিশ্বাস এবং আত্মাভিমান বৃদ্ধি পাবে। আপনার অকৃত্রিম প্রশংসা আর স্নেহে ও সুরক্ষিত এবং পরিপূর্ণ অনুভব করবে।