বিকার

জেনেরালাইজ‌ড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার

হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন

জেনেরালাইজ‌ড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার (জি এ ডি) কী?

আমরা সবাই বিশেষ পরিস্থিতি - যেমন পরীক্ষার আগে, চাকরির ইন্টারভিউয়ের সময়, অফিসে কাজের চাপে বা ব্যক্তিগত অর্থ - নিয়ে মাঝেমধ্যে উদ্বেগ অনুভব করি। এইধরনের উদ্বিগ্নতা অনুভব করা স্বাভাবিক আর কিছু ক্ষেত্রে নিম্নমানের উদ্বেগ আমাদের ভাল ফল পেতে সাহায্য করে। জেনেরালাইজ‌ড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তি বিনা কারণে দীর্ঘ সময় ধরে প্রবল উৎকণ্ঠা বা উদ্বিগ্নতা অনুভব করেন। বিনা কারণে অনুভব করা উদ্বেগ অহেতুক জানা সত্ত্বেও রোগী আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। যেমন প্রাত্যহিক কাজ, যা তিনি প্রতিনিয়ত করেন, অথচ সেই কাজগুলো নিয়ে উৎকণ্ঠা অনুভব করেন সবসময়। 

জেনেরালাইজ‌ড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের উপসর্গ কী?

জি এ ডি-র উপসর্গ অন্যান্য অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের মতই। সাধারণ লক্ষণগুলো হল –

  • চারিত্রিক লক্ষণ: খিটখিটে হয়ে যাওয়া, সহজেই চমকে যাওয়া আর কোন কাজে মনোনিবেশ না করতে পারা

  • শারীরিক লক্ষণ: সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়া, মাথায় ও শরীরে ব্যথা অনুভব করা, গা গোলানো ভাব, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, নিঃশ্বাসের কষ্ট, ঝিমুনি ভাব।

আপনার পরিচিত কোনও ব্যক্তির মধ্যে যদি এই উপসর্গগুলো দেখতে পান, তাঁর সাথে কথা বলুন এবং অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলুন। 

জেনেরালাইজ‌ড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার হওয়ার কারণ কী?

অন্যান্য মানসিক সমস্যার মতই জেনেরালাইজ‌ড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার হওয়ার সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। গবেষণা থেকে অনুমান করা হচ্ছে যে মস্তিষ্কের কিছু অংশ আর স্নায়বিক সঞ্চালনার বিকার ভয় আর উদ্বিগ্নতা সৃষ্টি করে। যদি বাবা বা মা কোন মানসিক রোগে ভোগেন, সন্তানের মধ্যে উদ্বেগ-জনিত সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দৈনন্দিন মানসিক চাপ, কর্মক্ষেত্রে চাপ, আর্থিক সমস্যার মতো মানসিক ও সামাজিক কারণে জেনেরালাইস্‌ড এংজাইটি ডিস্‌অর্ডার হতে পারে। যদিও জেনেরালাইস্‌ড এংজাইটি ডিস্‌অর্ডার হওয়ার সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।

জেনেরালাইজ‌ড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা

জেনেরালাইজ‌ড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার রোগীর মধ্যে আকুলতা সৃষ্টি করতে পারে। এর চিকিৎসা ওষুধ বা সাইকোথেরাপি বা দুটোর সম্মিলিত পদ্ধতিতে করা হয়। কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (সি বি টি) জেনেরালাইজ‌ড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের চিকিৎসায় বিশেষভাবে উপযোগী। ওষুধ সেবন রোগীর উদ্বেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। 

জেনেরালাইজ‌ড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের রোগীর পরিচর্যা

আপনি যদি জেনেরালাইজ‌ড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত কোন রোগীকে চেনেন, আপনার সহযোগিতা তাঁকে সুস্থ হতে বিশেষভাবে সাহায্য করতে পারে। প্রথমেই এই রোগের ব্যাপারে বিশদে জানুন যাতে আপনি রোগীর সমস্যা ভাল করে বুঝতে পারেন। রোগীকে চিকিৎসা আর থেরাপির কার্যকারিতা সম্পর্কে জানান এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে উৎসাহিত করুন। দরকার বুঝলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ওঁর সঙ্গে যান। 

জেনেরালাইজ‌ড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের মোকাবিলা

যদিও অনেক প্রকারের উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণকারী প্রক্রিয়া আছে যা রোগী নিজে ঘরে অনুসরণ করে উপকার পেতে পারেন, প্রথমেই সেইসব না করে, আগে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞয়ের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ যাতে সমস্যার পূর্ণ বিশ্লেষণ করে সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়। ঘরোয়া প্রক্রিয়া আপনি অনুসরণ করতেই পারেন কিন্তু সেগুলো চিকিৎসার পাশাপাশি করা উচিৎ, চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে নয়। ধ্যান এবং মনকে শান্ত করার বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম উদ্বিগ্নতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপযোগী। এইধরনের যোগাভ্যাস মানসিক নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে সাহায্য করে। জীবন-শৈলীতে কিছু পরিবর্তন যেমন সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম করা, পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম জি এ ডি-র প্রভাবকে দমন করতে বিশেষভাবে উপযোগী।