বিকার

অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া

হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন

অনিদ্রা কী?

অনিদ্রা সবচেয়ে সাধারণ ঘুমের ব্যাধি। পর্যাপ্ত সময় আর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অনিদ্রায় আক্রান্ত একজন ব্যক্তির জন্য ঘুমিয়ে পড়া বা ঘুমিয়ে থাকা দুটোই কঠিন হয়ে পড়ে। এমনও ন্য যে তাঁকে রাতে দেরিতে ঘুমোতে হয়েছে বা সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হয়েছে। তবুও ভালো ঘুম হয়নি। অনিদ্রা ঘুমের মান ও মাত্রা দুটোকেই প্রভাবিত করে। ইনসমনিয়া বা অনিদ্রায় ভোগা ব্যক্তির সারাদিন ক্লান্ত এবং অবসন্ন লাগে।

আমাদের প্রত্যেকেরই মাঝে মধ্যে রাতে ভালো ঘুম হয় না। তার মানেই এই নয় যে আমরা অনিদ্রায় ভুগছি। দীর্ঘ সময় ধরে অনিদ্রায় ভুগলে আপনার কর্মক্ষমতা, ব্যক্তিগত সম্পর্ক, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রভাবিত হয়, এবং আপনার জীবনের গুণগত মানের উপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা একটি চিকিৎসাযোগ্য ব্যধি। এর জন্য যত তাড়াতাড়ি আপনি সাহায্য চাইবেন, তত দ্রুত আপনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।

অনিদ্রার উপসর্গ কী কী?

আপনার অনিদ্রা হয়ে থাকতে পারে যদি:

• আপনার রাতে ঘুমিয়ে পড়তে অসুবিধা হয়।

• আপনার দিনের বেলা নিয়মিত ঝিমুনি ভাব থাকে এবং আপনি সবসময় ক্লান্তি আর অবসাদ অনুভব করেন।

• আপনার যে কোন কাজে মনোযোগ বা মনোনিবেশ করতে অসুবিধে হয়। কখনও কখনও আপনি সাধারন জিনিস ভুলে যান। এর ফলে, আপনি প্রায়ই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি করে ফেলেন।

• আপনার মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে এবং আপনার সহ্যক্ষমতা কমে যায়।

• আপনি নিয়মিত মাথা ব্যথা বা পেট ব্যথা অনুভব করেন।

• আপনি ঘুমানোর অনেক আগে থেকেই ঘুমের চিন্তা করতে শুরু করেন।

আপনার চেনা জানা কেউ যদি দীর্ঘ সময় ধরে এই উপসর্গগুলোতে ভুগে থাকেন, তাঁর সাথে কথা বলুন এবং তাঁকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে উৎসাহিত করুন।

অনিদ্রার কারণ কী?

অনিদ্রা মূলত এই কারণগুলির জন্য হয় –

  • মানসিক চাপ – মানসিক চাপ সাধারণত অনিদ্রার একটি প্রধান কারণ। দৈনন্দিন সমস্যা যেমন কাজের চাপ, অর্থ বা স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদ্বেগের জন্য মানসিক চাপ হতে পারে। আবার বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যেমন প্রিয়জনের মৃত্যু, বিবাহবিচ্ছেদ, বা চাকরি খোয়ানোর জন্য মানসিক চাপ বাড়তে পারে।

  • অন্যান্য মানসিক সমস্যা – যারা মানসিক অবসাদ, দুশ্চিন্তা বা অন্যান্য মানসিক সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের মধ্যে অনিদ্রার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।

  • অন্যান্য শারীরিক সমস্যা – অসুস্থতাজনিত যন্ত্রণা বা শ্বাসকষ্ট থেকে অনিদ্রায় ভোগার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ক্যান্সার বা হৃদরোগে আক্রান্ত রুগী, বা সাধারণ শারীরিক সমস্যা যেমন এলার্জি, অ্যাসিড রিফ্লাক্স-এর জন্যও অনিদ্রা হতে পারে।

  • ওষুধ - অনেক ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে অনিদ্রা হতে পারে। ঠান্ডা লাগা বা বুকে কফ জমার জন্য ওষুধের দোকান থেকে সরাসরি কেনা ওষুধ এবং বিভিন্ন ব্যাথার ওষুধ যাতে ক্যাফিন থাকে, আপনার নিদ্রাচক্রকে বিঘ্নিত করতে পারে। এছাড়াও হার্টের সমস্যার ওষুধ, অ্যন্টিডিপ্রেসেন্টস, রক্ত ​​চাপের ওষুধ থেকেও অনিদ্রা হতে পারে।

  • মদ এবং মাদক দ্রব্য – মদ, ক্যাফেইন, নিকোটিন, এবং অন্যান্য মাদক দ্রব্যের নিয়মিত সেবনেও অনিদ্রা হতে পারে। অতিমাত্রায় ক্যাফেইন সেবনে ঘুমে ব্যাঘাত হয় কিন্তু মদ এবং অন্যান্য মাদক দ্রব্যের সেবন স্বাভাবিক ঘুমের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।

  • অনিয়মিত ঘুমের অভ্যেস এবং পরিবেশ – নিয়মিত ঘুমের সময় বজায় না রাখলে ঘুমের স্বাভাবিক অভ্যেসের ছন্দপতন ঘটে। অস্বস্থিকর পরিবেশে, অতিরিক্ত আলো বা শব্দের মধ্যে ঘুমালেও অনিদ্রা হতে পারে।

  • জীবনশৈলী – রাতের শিফ্‌টে কাজ করলে বা সম্পূর্ণ অন্য টাইম জোনে স্থানান্তরিত হলে শরীর সহজে নিজেকে নতুন ঘুমের পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনা।

  • বার্ধক্য – বয়েস বাড়ার সঙ্গে অনেক মানুষের মধ্যে অনিদ্রা দেখা দেয়। দিনের বেলায় ক্লান্ত লাগে, শারীরিক কার্যক্ষমতা কমতে থাকার ফলে ঘুমের ধরনও পাল্টাতে থাকে। এরই সাথে বার্ধক্যজনিত নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় যাতে অনিদ্রা দেখা দেয়।

অনিদ্রার চিকিৎসা পদ্ধতি

অনিদ্রায় ভুগলে আপনার জীবনে নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে, জীবনের গুনগত মান হ্রাস পেতে পারে, কিন্তু অনিদ্রা চিকিৎসায় সারিয়ে তোলা সম্ভব। আপনার যদি ঘুম নিয়ে ক্রমাগত সমস্যা হতে থাকে, দেরি না করে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

অনিদ্রার চিকিৎসার প্রথম ধাপ হল অনিদ্রার কারণ নির্ধারণ করা। ডাক্তার উপযুক্ত ওষুধের সঙ্গে সঙ্গে কগ্নিটিভ বিহেভিওরিয়াল থেরাপির পরামর্শ দিতে পারেন।

অনিদ্রা রোগীর পরিচর্যা

অনিদ্রা রোগী ভালো ঘুম না হওয়ার উদ্বেগে ভোগেন। তাঁরা খিটখিটে হয়ে যান ও হতাশায় ভোগেন। রুগির সঙ্গে আপনাকে ধৈর্য্যপূর্ণ ব্যবহার করতে হবে এবং তাঁদের সমস্যার সমাধান খুঁজতে সহযোগিতা করতে হবে। তাঁদের সাথে সমস্যা নিয়ে কথা বলুন, আলোচনা করুন। যদি কোন দুশ্চিন্তার ফলে অনিদ্রা হয়ে থাকে, সেই নিয়ে কথা বলে সমস্যা সমাধান হতে পারে। আপনার নাক ডাকা বা ঘুমের ধরণ পালটে যাওয়ায় যদি আপনার সঙ্গীর ঘুমে ব্যঘাত ঘটে থাকে, তাহলে আপনি কিছুদিন আলাদা শুয়ে দেখতে পারেন। যদি সমস্যা তীব্র হয়, ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।

অনিদ্রার সঙ্গে মোকাবিলা

অনিদ্রা আপনার দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে। কিন্তু আপনি আপনার জীবনে সামান্য কিছু রদলবদল করলেই অনিদ্রা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পেতে পারবেন। দিনেরবেলা নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং সচল থাকুন। এতে রাতে ভালো ঘুম হয়। চা কফি কম খান, বিশেষত রাতের দিকে। মদ, সিগারেট যথা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। ঘুমের পরিবেশ আরামদায়াক ও শান্ত হওয়া উচিৎ। ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিজেকে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করুন। আপনার সাধারণ কাজকর্ম যদি রাতে ঘুমের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নিন।