বিকার

বর্ণনা: আমার বোনের অদ্ভুত ব্যবহারে আমি চমকে গিয়েছিলাম

হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন

আমার বোনের অসুখটা ধরা পড়ার আগে অবধি আমি বাইপোলার ডিস‌অর্ডারের নাম শুনিনি। পড়াশুনা শেষ করে আমার বোন একজন শিক্ষিকা হিসেবে একটি স্কুলে যোগদান করে। যখন তার ২৪ বছর বয়স, তখন আমরা তার চালচলনে অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। রাতে সে ঠিকমত ঘুমাতে পারত না, মেরেকেটে হয়ত পাঁচ ঘণ্টাও না। সারারাত তার ঘর থেকে আসবাবপত্র টানাটানির শব্দ শোনা যেত। কোন কোন দিন সে খুব তাড়াতাড়ি কথা বলত, যার অর্ধেকেরই কোন মানে বোঝা দুষ্কর ছিল। স্নান করত না, স্কুলের পোশাক-বিধি অনুযায়ী পোশাক পরে যেত না, অকারণে হিংস্র এবং আক্রমণাত্মক ব্যবহার করত। এক কথায়, ও আর আমার আগের বোন ছিল না।

কয়েকদিন বাদেই তার স্কুলের প্রিন্সিপাল আমার বাবা-মাকে ডেকে পাঠিয়ে নালিশ করলেন। তাও তার অস্বাভাবিক ব্যবহারে কোনও পরিবর্তন না আসায় তাকে স্কুল কর্তৃপক্ষ ইস্তফা দেবার জন্য অনুরোধ করে। এরই মধ্যে একদিন সে অকারণে রেগে গিয়ে মায়ের সাথে মারামারি করে। তখনই আমরা একজন মনোবিদের পরামর্শ নিয়ে আমার বোনকে হাসপাতালে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নিই।

হাসপাতালে সে নিজেকে স্বর্গ থেকে আসা একজন দেবদূত বলে ঘোষণা করে এবং তাকে অবিলম্বে ছেড়ে দেওয়ার কথাও বলে। সমস্ত উপসর্গ এবং চিকিৎসার ইতিহাস দেখার পরে চিকিৎসকেরা জানান যে আমার বোন বাইপোলার ডিসঅর্ডারের শিকার, এবং সেই অনুযায়ী তার চিকিৎসা শুরু হয়। এক মাস হাসপাতালে থাকার পর যখন তাঁরা নিশ্চিন্ত হন যে আমার বোন আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ, তখন তাকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরে সে ওষুধ খেতে চাইত না বলে আরও হপ্তা দুয়েক তাকে হাসপাতালে কাটাতে হয়। এই বার আমার বোনও বুঝতে পারে যে ওষুধ খাওয়াটা তার পক্ষে সুবিধাজনক। এতে তার নিজেরই উপসর্গগুলি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

এরপর স্পেশাল এডুকেশনের ওপর আমার বোন একটা সার্টিফিকেট কোর্স করে এবং একটা ছোট্ট স্কুলে চাকরি নেয়। আর কোনদিন তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি। বর্তমানে সে বিবাহিত এবং এক সন্তানের মা।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় বিভিন্ন রোগীর অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এই কাল্পনিক বর্ণনাটি বাস্তব পরিস্থিতি বোঝানোর জন্যে তৈরি করা হয়েছে। এটি কোনও ব্যক্তিবিশেষের অভিজ্ঞতা নয়।