বিকার

অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার বা ওসিডি

হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন

অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিস‌অর্ডার বা ওসিডি কী?

সারাদিন হাড়ভাঙা খাটনির পর আপনি যখন ঘুমাতে যাবেন ভাবছেন, এমন সময় আপনার মনে হল যে আপনি সদর দরজা আটকাতে ভুলে গেছেন। আপনি দৌড়ে গিয়ে দেখলেন দরজা আটকানোই আছে এবং আপনি নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। এইরকম উদ্বেগ ভাল, কারণ এতে আপনারই সজাগ মানসিকতা প্রকাশ পায়।

কিন্তু কখনো কখনো এই উদ্বেগই সমস্যার কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। আপনি শুয়ে পড়ার পরেও বারবার উঠে দরজা বন্ধ কিনা দেখলেন। এই অত্যাধিক নেশাগ্রস্তের মত উদ্বেগ আপনার দৈনন্দিন জীবনযাপনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। ব্যক্তিবিশেষে নির্ভর করে আলাদা আলাদা উদ্বেগ লক্ষ্য করা যায়। কেউ কেউ হয়ত মিনিটে মিনিটে হাত ধোয়ার পরেও বীজাণুমুক্ত হওয়া নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারেন না।

নেশাগ্রস্তের মত একই কাজ বারবার না করা অবধি এঁরা মানসিক শান্তি পান না। এতে যখন তাঁর জীবনে চলাটাই আটকে যায় তখন সেই ব্যক্তি ওসিডিতে আক্রান্ত বলে বুঝতে হবে।

ওসিডির উপসর্গগুলি কী?

আপনি যদি আপনার পরিচিত কারোর মধ্যে নিম্নলিখিত চালচলন লক্ষ্য করেন তবে তাঁকে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে উৎসাহ দিন।

  • পরিচ্ছন্নতা: নোংরা হবার ভয়ে বারবার হাত ধোয়া বা ঘর মোছা।

  • গোছানো: এঁরা জিনিষপত্র একদম ফিটফাট সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে ভালবাসেন। ফলে বারংবার বাসনপত্র গোছানো, বই গোছানো, বালিশ-গদি বা শতরঞ্চি সাজানো।

  • জমানো: অকারণে পুরানো জামা-কাপড়, খবরের কাগজ, চিঠি ইত্যাদি জমানো।

  • গোনার অভ্যাস: বারবার নিজের জিনিসপত্র গুনে দেখা বা করিডরের সিঁড়ি আর লাইট গোনার অভ্যাস। গুনতি ভুলে গেলে এঁরা ফেরত গিয়ে আবার প্রথম থেকে গোনা শুরু করেন।

  • নিরাপত্তা: নিরাপত্তা সংক্রান্ত অবাস্তব ভয়। বারবার দরজা-জানলা বন্ধ আছে কিনা দেখা।

ওসিডি কেন হয়?

ওসিডির সঠিক কারণ আজও আমাদের অজানা। তবে দেখা গেছে যে নিম্নলিখিত কারণগুলিতে ওসিডি হবার সম্ভাবনা থাকে:

  • জিনগত কারণ

  • জৈবিক বা নিউরোলজিকাল কারণ: গবেষণায় দেখা গেছে যে মস্তিষ্কে সেরোটিনিন নামে এক রাসায়নিকের ভারসাম্যের অভাবে ওসিডির ঝুঁকি বেড়ে যায়।

  • জীবনযাত্রায় পরিবর্তন: বাচ্চার জন্মের পর বা নতুন চাকরিতে ঢুকে কাজের চাপে ওসিডির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

  • চালচলনের কারণ: অল্প বয়স থেকেই যারা একটু নিপুণ ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে কাজ করতে ভালবাসেন তাঁদের ওসিডি হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

  • ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা: ধরা যাক সামান্য ইঁদুর মারার বিষ ধরার জন্যে যদি প্রচণ্ড র‍্যাশ বেরিয়ে থাকে, পরবর্তীকালে মিনিটে মিনিটে তাঁর হাত ধোয়ার অভ্যাস হতে পারে।

ওসিডির চিকিৎসা

সঠিক চিকিৎসায় ওসিডির সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। রোগীর অবস্থা বুঝে বিভিন্ন ওষুধপত্র এবং থেরাপি দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রেই শুধু কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি আর অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধের সাহায্যেই এই অসুখ সারিয়ে তোলা যায়। 

ওসিডি রোগীর যত্ন

একজন ওসিডি রোগীর সাথে থাকা খুবই কঠিন। মনে রাখবেন রোগী ইচ্ছাকৃতভাবে আপনার অসুবিধা সৃষ্টির জন্যে এইসব করছেন না, বরং তাঁর দুশ্চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে কাজগুলো করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই ধৈর্য সহকারে রোগীকে আগে বোঝান। অনেক সমস্য তাঁরা নিজেদের চালচলন নিয়ে লজ্জা পান। সেই ক্ষত্রে তাঁর লজ্জা বা ভয় কাটিয়ে মনোবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবার দায়িত্ব কিন্তু আপনার।

নিজের যত্ন নিন

বিশ্বাসযোগ্য কোনও ব্যক্তিকে নিজের সমস্যার কথা খুলে বলুন। এতে আপনার রোগ সম্পর্কে ভীতি কেটে যাবে। বাজে দুশ্চিন্তা কমাতে খেলাধূলায় মন দিন। সবচেয়ে বড় কথা নিজেই মনোবিদের সাথে যোগাযোগ করুন। নির্দিষ্ট চিকিৎসা ছাড়াও তিনি আপনাকে আরও অনেক ভাবে সাহায্য করতে পারেন।