বিকার

পূর্ণবয়স্কদের মধ্যে অ-নির্ণীত অটিজমের সমস্যা

হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন

অন্যান্য সমস্যার মতোই অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (এএসডি) মানুষের যোগাযোগগত, ভাষাগত এবং সামাজিক বিকাশজনিত দক্ষতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সাধারণত বাচ্চাদের ক্ষেত্রেই এই সমস্যা দেখা দেয়। একটা বাচ্চার যখন ১২ মাস বয়স তখন তার অটিজমের সমস্যার লক্ষণগুলো ফুটে উঠতে দেখা যায় কিন্তু পাকাপাকিভাবে সেই সমস্যা চিকিৎসকের দ্বারা নির্ণয় করা হয় তিন বছর বয়সে। ভারতে প্রতি ৫০০ জনের মধ্যে ১ জনের ক্ষেত্রে অটিজমের সমস্যা দেখা দেয় এবং এটি ডাউন সিনড্রোম নামক অসুখের থেকেও বেশি দেখা যায়।

বিভিন্ন মাত্রায় অটিজমের বহিঃপ্রকাশ ঘটে, যেমন- অল্প, মাঝারি এবং গুরুতর। কিছু ক্ষেত্রে যখন রোগের লক্ষণগুলো তেমন প্রকটভাবে দেখা না দিয়ে হালকা বা অল্প পরিমাণে দেখা দেয় তখন অনেকসময়ে রোগটিকে সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায় না। কিন্তু পরবর্তীকালে সামাজিক যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলোই ভয়ঙ্কর সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

নীচে পূর্ণবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে এমন কয়েকটি লক্ষণের কথা বলা হল যাদের ছোটবেলায় অটিজমের সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তা সঠিকভাবে নির্ণয় করার অভাবে যথাযথ চিকিৎসা করা হয়না-  

  • সম্পর্কগত সমস্যা- অটিজমের সমস্যায় আক্রান্ত মানুষজন খুব উদাসীন থাকতে পছন্দ করে এবং কারোর সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্কের বন্ধনও এরা গড়ে তুলতে পারে না। এর একটা কারণ হল তাদের মধ্যে অ-মৌখিক সংকেত বা মুখে না বলা কোনও সংকেত বোঝার এবং আবেগময় যোগাযোগ স্থাপনের দক্ষতা থাকে না। তাই তারা কারোর সঙ্গে গাঢ় বন্ধুত্ব এবং প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে না।

  • আচরণ এবং ভাষা- অটিজমের সমস্যার শিকার একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হল একই আচরণ বারবার করা এবং এমন ভাষা ব্যবহার করা যা অন্যান্যদের কাছে খুবই অদ্ভুত বা উদ্ভট বলে মনে হয়। তারা একই শব্দ ও বাক্য বারবার বলতে থাকে। আচরণগত দিক থেকে তারা একই কাজ যেমন চেয়ারের উপর উঠে দোল খাওয়া বা হাততালি দেওয়ার মতো কাজগুলো বারেবারে করতে থাকে।

  • মনোযোগের সমস্যা- অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের মনোযোগের স্থায়িত্বকাল অত্যন্ত কম হয়। অর্থাৎ যে কোনও কাজ তাদের একনাগাড়ে মনোযোগ দিয়ে করতে সমস্যা হয় এবং তারা সব কিছু খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যায়।

  • আবেগানুভূতির সমস্যা- অন্য মানুষের প্রতি সমানুভূতি দেখানোর ক্ষেত্রে এদের দারুণ সমস্যা হয়। কারণ তাদের মধ্যে আবেগপূর্ণ অনুভূতি বোঝার কোনও ক্ষমতাই থাকে না এবং তাই অন্যের অনুভূতিগুলোর সঙ্গে তারা নিজেদের একাত্ম করতে পারে না।

  • কোনও বদল বা পরিবর্তন মেনে নিতে সমস্যা- অটিজমে আক্রান্তদের কোনও বদল বা পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে খুব অসুবিধা হয়। যদি তাদের দৈনন্দিন রুটিনে সামান্যতম কোনও বদল বা পরিবর্তন ঘটে তাহলে তারা খুব অধীর হয়ে ওঠে এবং পরিস্থিতি তাদের কাছে অত্যন্ত শোচনীয় বলে মনে হয়।

  • মৌখিক বা বাচনভঙ্গিগত সমস্যা- অন্যদের সঙ্গে মৌখিক আদান-প্রদান এবং অন্যদের ভাষা বোঝা- দুই ক্ষেত্রেই তাদের সমস্যা দেখা দেয়। তাদের মধ্যে অ-মৌখিক সংকেত বুঝতে পারার ক্ষমতা থাকে না এবং এর ফলে তাদের পারস্পরিক সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

যদি আপনার বা আপনাদের পরিচিত কারও মধ্যে এসব লক্ষণগুলো ফুটে ওঠে তাহলে সবচেয়ে ভালো হল একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা। অটিজমের সমস্যা একজন মানুষের ছোটবেলায় দেখা দিলেও যদি রোগটিকে প্রাথমিক পর্বেই নির্ণয় করা না হয় তাহলে পরবর্তীকালে সেই সমস্যাই খুব জটিল হয়ে উঠতে পারে।