পরীক্ষার সময়ে অধিকাংশ মানুষই বেশ মানসিক চাপ ও উৎকণ্ঠা বোধ করে। চাপের মাত্রা যদি বেশি না হয় তাহলে তা মানুষের কাজে বাধার সৃষ্টি করে না বা তার চিন্তাভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং কার্যকরী করার ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটায় না। উপরন্তু, তার উন্নতিসাধনের পথেও কোনও সমস্যা হয়ে দেখা দেয় না। অভিজ্ঞতালব্ধ গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, চাপের মাত্রা যদি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে তাহলে তা মানুষের কর্মকুশলতা, মস্তিষ্কের উৎপাদনশীলতা এবং কাজের ধারাকে উন্নত করতে সহায়তা করে। কিন্তু মানসিক উদ্বেগ যদি লাগামছাড়া, অপ্রতিরোধ্য হয়ে যায়, তাহলে তা থেকে ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায়। আমাদের অধিকাংশের মধ্যেই পরীক্ষা সংক্রান্ত এহেন উদ্বেগ বা ভয় কম-বেশি রয়েছে। কিন্তু এটি তখনই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে যখন এই সমস্যাকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে উদ্বেগের সঠিক কারণ সন্ধান করে তা থেকে সৃষ্ট মানসিক চাপ কমাতে সচেষ্ট হওয়া জরুরি। আর এইভাবেই সমস্যার সমাধান করে নিজের প্রতি সুবিচার করা সহজসাধ্য হবে। যে যে কারণে পরীক্ষার সময়ে মানসিক উদ্বিগ্নতা বাড়ে, সেগুলি হল—
মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে যাওয়া ও বিনিদ্র রাত কাটানো।
মনের খিটখিটে ভাব বা অল্পতেই মেজাজ হারিয়ে ফেলা।
শরীরের বাহ্যিক লক্ষণগুলির মধ্যে মাথা ব্যথা, গা ম্যাজম্যাজ করা, পেটে একপ্রকার অস্বস্তি অনুভব করা প্রভৃতি দেখা দেয়।
হঠাৎ করে খিদে বেড়ে যাওয়া বা এর বিপরীত ঘটনা অর্থাৎ খিদে কমে যাওয়ার প্রবণতাও থাকে।
মানসিক উদ্বেগের এইসব লক্ষণগুলি যদি পরীক্ষার আগে দেখা দেয় তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো পরীক্ষার আগে এবং পরীক্ষা চলাকালীন পড়াশুনায় পদ্ধতিগত রদবদল আনা বাঞ্ছনীয়।
পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে করণীয় কাজগুলি হল—
পড়া হয়ে যাওয়া বিষয়গুলি প্রতি সপ্তাহেই একবার করে মনোযোগ সহকারে ঝালিয়ে নিলে ভালো। এর ফলে শেষ মুহূর্তে যেরকম পরীক্ষা ভীতি গ্রাস করে, তা এড়ানো সম্ভব। পড়াশুনোর ক্ষেত্রে সময়ের সদ্ব্যবহার একান্ত জরুরি বিষয়। লেখাপড়ার পদ্ধতি যদি বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানসম্মত হয়, তাহলে তা যেমন ক্লান্তিকর হয় না, তেমন আবার ফলপ্রসূ এবং উপযুক্তও হয়।
বাজার চলতি নোটের পরিবর্তে নিজের তৈরি নোট পড়া শ্রেয়। এর ফলে বিষয়গত দক্ষতা বাড়ে, পড়াশুনোর ক্ষেত্রে সক্রিয় মনোভাব গড়ে ওঠে এবং বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে বিষয়গত জ্ঞান গভীর হয়।
বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ এবং তা মনে রাখার জন্য ম্যাপ, ডায়াগ্রাম ও ফ্লো চার্টের সাহায্য অবশ্যই নিতে হবে। তথ্য সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল থাকতে বিষয়ের সারসংক্ষিপ্ত করা খুবই উপযোগী একটি পদ্ধতি।
নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর নোট তৈরি করে সেগুলি বারবার করে ঝালিয়ে নিতে পারলে তা পরীক্ষার সময় খুবই কাজে দেয়। এই ক্ষেত্রে পুরনো পরীক্ষার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারলে অত্যন্ত ভালো ফল হয়। নিজের ভুল ত্রুটি শুধরে নেওয়ার জন্য পূর্ববর্তী পরীক্ষার প্রশ্নোত্তর অনুশীলন কার্যকরী একটি ব্যবস্থা।
প্রয়োজন মতো ছাত্ররা তাদের শিক্ষকদের সাহায্য গ্রহণ করতে পারে। এই ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলতেই পারে। এর মধ্য দিয়ে চিন্তাভাবনার আদান-প্রদান সম্ভবপর হয়।
পড়ার ফাঁকে নিয়মিত বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের ছুটিতে আগের পড়াগুলো একবার ঝালিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এগুলিই আবার ২৪ ঘণ্টা পরে আরও একবার উল্টে-পাল্টে দেখতে পারলে ভালো। পড়াশুনোর সময়ে ছাত্রদের নিজের মনোযোগের সময়সীমার দিকে খেয়াল রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। সাধারণভাবে এর সময়সীমা ৪০ মিনিটের থেকেও কিছু কম হয়।
লেখাপড়ার পরিবেশ শান্ত হওয়া একান্ত জরুরি।
পরীক্ষার প্রস্তুতির সময়ে ছাত্রদের পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়া এবং প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া দরকার। খেয়াল রাখতে হবে যাতে ডিহাইড্রেশন না হয়ে যায়।
যথাযথ পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য নানাবিধ পন্থা ও পদ্ধতির সাহায্য নিতে হবে। যেমন—লিখতে, বলতে, দেখতে এবং শুনতেও হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, যদি কেউ দেখে শিখতে চায় তাহলে তাকে কোনও একটি বিষয়ের মূল তথ্যগুলি সাদা কাগজে সংক্ষিপ্ত আকারে লিখে সেটিকে দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখতে হবে। রঙিন পেন দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলিকে নির্দিষ্ট করতে হবে। পরে এগুলির মধ্যে যোগসূত্র রচনা করে পৃথকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ জরুরি। আবার কেউ যদি কানে শুনে শিখতে চায় তাহলে তথ্য রেকর্ড করে রেখে বারে বারে তা শুনতে হবে এবং এইভাবেই বিষয়কে আত্মস্থ করা সম্ভব।
বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করতে গেলে সমীক্ষা, আত্মজিজ্ঞাসা, বারবার একটি বিষয় নিয়ে ভাবার কৌশল রপ্ত করা জরুরি।
পরীক্ষা চলাকালীন যে যে বিষয় খেয়াল রাখতে হবে—
অধিকাংশ সময়ে মূল পরীক্ষা আরম্ভ হওয়ার আগে ১০ মিনিটের মতো সময় পড়ার জন্য নির্দিষ্ট থাকে। এই স্বল্প সময়টুকু যথাযথভাবে ব্যবহার করার জন্য নিম্নলিখিত উপায় অবলম্বন করা অতি অবশ্যই দরকার।
প্রশ্নপত্রের নির্দেশ খুঁটিয়ে এবং মন দিয়ে পড়া প্রয়োজন। এটি ছাত্রদের মধ্যে কোন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বাধ্যতামূলক বা কোন পর্ব থেকে ক'টি উত্তর লিখতে হবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা জন্মাতে সাহায্য করবে। এটি না করলে ভালো ছাত্রদের মধ্যেও মানসিক উদ্বেগ এবং চাপ দেখা দিতে পারে।
সমগ্র প্রশ্নপত্রটি ভালো ভাবে পড়া প্রয়োজন এবং যে যে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তা দাগ দিয়ে রাখতে হবে। প্রশ্নে ঠিক কী চাওয়া হচ্ছে সেদিকে মনোনিবেশ করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ শব্দ বা অংশ আন্ডারলাইন করে দিতে হবে।
ঘড়ি ধরে পর্যায়ক্রমে পরিকল্পনা মাফিক উত্তর লিখতে হবে। একবার লেখা শুরু করলে তা যথাসম্ভব নিখুঁত হওয়া প্রয়োজন। উত্তরগুলি প্রাসঙ্গিক এবং যথাযথ হওয়া একান্ত কাম্য।
সব শেষে পরীক্ষার্থীদের প্রতি রইল অনেক শুভেচ্ছা।