শিক্ষা

পরীক্ষার সময় জরুরি পুষ্টিকর আহার

হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন

পরীক্ষার মরশুমে পুষ্টিকর খাওয়া-দাওয়ার সঙ্গে নিয়মিত শরীরচর্চা মস্তিষ্কের ক্লান্ত-অবসন্ন কোষগুলিকে সতেজ ও তরতাজা করতে সাহায্য করে। এই বিষয়ে হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আলাগাম্মাই মেয়াপ্পান কথা বলেছিলেন দিল্লির একজন পুষ্টিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য-বিষয়ক লেখক কবিতা দেবগন-এর সঙ্গে। একদল পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের কাছে থেকে পাওয়া বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরের উপর নির্ভর করে এই কথপোকথন রচিত হয়েছে।

আমি খুব স্বল্পাহারী। খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে আমার অনেক বাছাবাছি রয়েছে। তাই পুষ্টির অসম্পূর্ণতা দূর করার জন্য কি আমি কোনও ভিটামিন সাপ্লিমেন্টের সাহায্য নেব?

শরীরে ভিটামিনের গুরুতর ঘাটতি না থাকলে স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করাই ভালো। তবে ভিটামিনের পরিমাণ কম থাকলে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যেতে পারে।

এমন কোনও খাবার রয়েছে কি যা বিশেষ করে মস্তিষ্ককে শক্তিশালী করতে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে?

হ্যাঁ, এমন অনেক পুষ্টিকর খাবার রয়েছে, যা প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিতেই পারে। যেমন— কাগজি-বাদামে প্রচুর জিঙ্ক রয়েছে। আর এটি এমন একটি খনিজ পদার্থ, যা মস্তিষ্কের পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে। তাছাড়া মস্তিষ্কের পুষ্টির জন্য চিনেবাদাম, কাজুবাদাম, সূর্যমুখী এবং কুমড়োর বীজ উপকারী। প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ খাওয়া অবশ্যই দরকার। আর ঘি খেতে পারলে তো আরও ভালো। অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে শাঁসালো দানাবহুল ফল,
যেমন—টমেটো, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং বেদানা বা ডালিম জাতীয় ফল, যাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। খাদ্যতালিকায় হলুদ এবং দারুচিনি থাকলে তা মস্তিষ্কের বিভিন্ন কাজকে আরও শক্তিশালী ও উন্নত করতে সাহায্য করে। যদি কেউ মাছ-মাংস খান, তাহলে তার উচিত সপ্তাহে অন্তত দু'দিন মাছ খাওয়া। মাছের মধ্যে থাকা কোলাইন মানুষের মস্তিষ্কে গিয়ে অ্যাসিটিকোলাইনে পরিণত হয়, যা নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে মানুষের স্মৃতিশক্তি ও যুক্তি-বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে।

পরীক্ষার সময়ে কোন ধরনের খাবার এড়িয়ে চলা উচিত?

চা, কফির মতো উত্তেজক পানীয় এই সময় বেশি খাওয়া ঠিক নয়। কারণ এই সব পানীয় বেশি খেলে মানসিক উদ্বেগ, নার্ভাসনেস, পেটের গোলমাল, মাথা ব্যথা এবং ইনসমনিয়া বা অনিদ্রাজনিত সমস্যা দেখা যায়। ভাজাভুজি এবং মশলাদার খাবার একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। কারণ এই জাতীয় খাদ্য পুষ্টিকর নয়। পরীক্ষার সময়ে পরীক্ষার্থীর উচিত হালকা, স্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া করা, যা সহজে হজম করা যায় এবং পড়াশোনার জন্য বেশি শক্তি অর্জন করা সম্ভব হয়। অন্যদিকে মিষ্টি জাতীয় খাবার এই সময় একদমই চলে না, কারণ রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে গেলে ইনসুলিনের ছুঁচ শরীরে ফোটানো জরুরি হয়ে পড়ে। আর এইসবের ফলে মানুষ ক্লান্ত বোধ করে এবং ঝিমিয়ে পড়ে। তাছাড়া সুগারের আধিক্য মানুষের শরীরে অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে মানুষের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, প্রতিক্রিয়া জানানোর শক্তি, মনের একাগ্রতা এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। চর্বি-জাতীয় খাবার এবং সহজে হজম হয় না এমন খাদ্য খাওয়া এই সময়ে একেবারেই ঠিক নয়। কারণ এর ফলে মস্তিষ্কে ঠিকঠাক রক্ত সঞ্চালন হয় না। আর পরীক্ষার্থী অবসন্ন, ক্লান্ত বোধ করে। পরীক্ষার সময়ে দিনে চার থেকে ছয়বার কম পরিমাণে খাওয়া প্রয়োজন এবং সারাদিনে স্ন্যাক্স খেলে তা ভালো
ফল দেয়।

পরীক্ষার সময় কী ধরনের পুষ্টিকর স্ন্যাক্স জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে?

কাজু বাদাম, ফল, সিদ্ধ ভুট্টা প্রভৃতি খাবার স্ন্যাক্স হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া ডাবের জল এবং কালো রঙের চানা জলে মিশিয়ে তার সঙ্গে বিটনুন ও পাতিলেবু দিয়ে তৈরি একপ্রকার জলীয় খাবার এইসময়ে অত্যন্ত উপকারী।

পরীক্ষার সময়ে খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে আর কী কী বিষয় গুরুত্বপূর্ণ?

শরীরকে শুষ্ক হতে না দেওয়া-- শরীরে জলের পরিমাণ যাতে কমে না যায় তার জন্য তেষ্টা না পেলেও বেশি করে জল খাওয়া জরুরি। এর জন্য পড়ার সময়ে হাতের কাছে এক লিটারের জলের বোতল রাখা দরকার। নিদেনপক্ষে সারাদিনে এক লিটারের দু'টি জলের বোতল একজন পড়ুয়ার শেষ করা উচিত। কারণ মস্তিষ্কের প্রায় ৯০ শতাংশ অংশ যে জলে পরিপূর্ণ থাকে, তা ভুলে গেলে চলবে না।

খুব কম খাওয়া অথবা খাদ্যতালিকা থেকে প্রাতরাশ বা ব্রেকফাস্ট খাওয়া বন্ধ করা উচিত নয় — শিশু বা অল্পবয়সি ছেলে-মেয়েদের ক্ষেত্রে খুব কম ক্যালোরিযুক্ত  খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। কম ক্যালোরির খাবার খেলে মস্তিষ্কের গ্রহণযোগ্যতা এবং মনে রাখার ক্ষমতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কোনও কাজের প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যার সৃষ্টি হয়। এছাড়া মানুষ যখন ঘুমায় তখন তার মস্তিষ্কের শক্তি বেশি ক্ষয় হয়। তাই রাতে ঘুমানোর পরে সকালবেলায় উঠে একজন মানুষের দরকার পুনরায় মস্তিষ্কের শক্তি সঞ্চয় করা এবং মানসিকভাবে চনমনে হয়ে ওঠা। আর এর জন্য জরুরি হল পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর প্রাতরাশ বা ব্রেকফাস্ট খাওয়া।