অন্যের লেখা বা রচনা চুরি করে নিজের নামে দাবী করাকে আমরা প্লেজিয়ারিজম বা প্রতারণা বলি। নিজের সহপাঠীর হোমওয়ার্ক থেকে টোকা বা ইন্টারনেট থেকে নিজের স্কুলের প্রোজেক্ট কপি-পেস্ট করাও প্লেজিয়ারিজমের আওতায় পড়ে। চলতি ভাষায় আমরা একে বলি টুকলি।
একজন ছাত্রের এতে কী লাভ হয়? তখনকার মত হয়ত সে হোমওয়ার্ক করে জমা দিয়ে দেয়। কিন্তু পরবর্তীকালে বিশেষত চাকরি জীবনে এটা তার স্বভাব হয়ে দাঁড়ায়। চিরকাল তাঁরা নিজেদেরকে ঠগ এবং অপদার্থ বলে মনে করেন। আপাত দৃষ্টিতে হয়ত তাঁরা নিজেদের চতুরতায় মুগ্ধ হলেও আগামী জীবনের জন্য তাঁরা নতুন কিছু শিখে মাঠে নামার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন।
পড়াশোনার মূল উদ্দেশ্যই হল আমাদের চিন্তাশক্তিকে শানিয়ে তোলা। বাচ্চারা একমাত্র জিজ্ঞাসু মন তৈরি হলেই জীবনে এগোতে পারে কারণ মুখস্থ বিদ্যা বেশিদিন কাজে লাগে না। কাজেই নিজে মাথা খাটিয়ে হোমওয়ার্ক ও প্রজেক্ট করা প্রয়োজন।
একজন কিশোরের যদি যুক্তিসঙ্গত ভাবে বিশ্লেষণ করার অভ্যাস তৈরি হয় তবে সে যে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার আগে বিবেচনা করে দেখে। অ্যাপেলের সহ প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াক বলেছেন: “আপনি যখন মাদক সেবন করবেন তখন কাজগুলো আপনি আর মাদক একত্রে করবেন, তাই না? সেটা কিন্তু আপনি নন। আমি শুধু মাত্র আমার একার প্রতিভা এবং ক্ষমতার উপর নির্ভর করতে চাই”। যখন তাঁকে কিছু ছেলে মেয়ে মাদক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়, তখন তিনি জোর দিয়ে বলেন যে তাঁর মাদকের প্রয়োজন হয় না।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এমনই যে আমরা খুব সহজেই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যাই। পুরোটাই কেরিয়েরের পেছনে ইঁদুর দৌড়ে পরিণত হয়েছে। এর ফলে বাচ্চাদের উপর মানসিক চাপ এতটাই বেড়ে যায় যে তাঁরা অসৎ পথে পা বাড়াতে দ্বিধা বোধ করে না।
আমাদের জীবনে চালিকা শক্তি কী? কোনও কিছু করার উৎসাহ। আমাদের মস্তিষ্কে লিম্বিকতন্ত্র এই আবেগগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। সেটি আমাদের পুরোমস্তিষ্কে সংকেত পাঠায় যা আমাদের চিন্তাশক্তি এবং কল্পনাশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এইখানে উৎপত্তি হওয়া ইতিবাচক ভাবনা ও উৎসাহের জোরেই আমরা কাজ করি। এর জন্যই সব জিনিসে আমাদের সমান উৎসাহ হয় না। তাই, যদি অল্প বয়সে একটি শিশু অন্যের খাতা থেকে নকল করে নিজের পরীক্ষায় পাশ করার প্রবণতা তৈরি করে, তাহলে বড় হয়ে তাঁর মস্তিস্কে চিন্তা করার ক্ষমতা তৈরি হয় না। ফলে তাঁরা কলেজে কোনও একটি শাখায় বন্ধুদের দেখা দেখি ভর্তি হলেও পরে অবসাদ, ব্যর্থতা ও মানসিক চাপের ফলে ছেড়ে দেয়।
তাছাড়া নকল করার মানসিকতাটাও খারাপ। আজকাল অনেকে অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনা না করেই অন্যের জীবনযাত্রা অবধি নকল করার চেষ্টা করে। ফলে এঁদের অনেক সময় অ্যাংজাইটি এবং ডিপ্রেশনে ভুগতে হয় এবং চিকিৎসার মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের বদভ্যাস কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হয়।
সততার সাথে ছোটবেলা থেকে পড়াশুনা করলে আমাদের মস্তিষ্কে একটা প্রাঞ্জল চিন্তাশক্তি জন্ম নেয়। কৈশোরে এবং প্রাপ্তবয়সে এসে কাজের চাপ বা মানসিক উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে তা আমাদের সাহায্য করে।
ডাঃ শ্যামলা বৎসা বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত একজন মনোবৈজ্ঞানিক (সাইকিয়াট্রিস্ট) যিনি কুড়ি বছরেরও বেশী সময় ধরে এই পেশার সাথে যুক্ত। এই সংক্রান্ত আরো লেখা এখানে পাক্ষিকভাবে প্রকাশিত হবে। আপনাদের কোন বক্তব্য বা জিজ্ঞাস্য থাকলে তাঁকে columns@whiteswanfoundation.org তে লিখে জানাতে পারেন।