শিক্ষা

কখন একজন ছাত্রের কাউন্সেলরকে প্রয়োজন?

হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন

কলেজ পড়ুয়াদের অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। কলেজে পড়তে ঢুকে একটি ছেলে বা মেয়ে নিজেকে বয়সের দিক থেকে বড় বলে ভাবতে শুরু করে এবং কোনও শাসনের তোয়াক্কা না করে নিজেরা স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার চেষ্টায় মেতে ওঠে। এই বয়সের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে সব বিষয় নিয়েই প্রচুর সন্দেহ জেগে ওঠে। আর এই সন্দেহই শেষ পর্যন্ত তাদের আচরণগত সমস্যা সৃষ্টি করার জন্য দায়ী হয়। তাই ক্লাসরুমের ভিতরে বা কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে অনেক ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যেই আচরণগত বহু অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায়।

যদি কোনও ছাত্রের শরীরে আঘাত লাগে তাহলে একজন শিক্ষক সেই ক্ষতকে সারানোর জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। কারণ তাঁর চিন্তা থাকে যেন ক্ষত দূষিত না হয়ে যায়। ঠিক একইরকমভাবে একজন ছাত্রের মনেও আঘাত লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে তাদের মধ্যে ব্যর্থতা, পরীক্ষার জন্য ভয়, কাছের মানুষকে গ্রহণ করতে অস্বীকার, লক্ষ্যপূরণ করতে না পারার জন্য অপরাধ বোধে ভোগা, আত্মবিশ্বাসের অভাব প্রভৃতি দেখা দেয়। কলেজ পড়ুয়াদের মনের এহেন আঘাতজনিত ধাক্কা সামলানোর জন্য প্রাথমিকভাবে তাদের আত্মীয়-পরিজনরাই সাহায্য করে থাকে। ছাত্রদের মানসিক সুস্থতার জন্য একেবারে গোড়ার দিকে তাদের আত্মীয়স্বজনরাই সহায়তার জন্য এগিয়ে আসে।

যে সব ক্ষেত্রে সমস্যার গভীরতা তত বেশি থাকে না, যেমন— পরীক্ষায় পাশ করতে না পারা, লেখাপড়া সংক্রান্ত কোনও বিষয় বুঝতে না পারা, পড়াশোনার চাপ, কেরিয়ার গঠনের জন্য চিন্তা, ক্লাসরুমের ভিতর কোনও ছাত্রকে নিয়ে অন্যান্যদের ঠাট্টা-তামাশা ইত্যাদি নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে যখন একজন ছাত্র মানসিকভাবে  আঘাত পায়, তখন শিক্ষকরাই সেই আঘাত দূর করার জন্য কয়েকটি উপায় অবলম্বন করেন—

  • সময়ের সদ্ব্যবহার শেখানো এবং লেখাপড়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়-তালিকা তৈরি করে দিয়ে একজন শিক্ষক একটি ছাত্রকে সাহায্য করতে পারেন।

  • ছাত্রদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কাজে ব্যস্ত রাখা।

  • পড়াশোনার উন্নতির বিষয়ে ছাত্রদের ওয়াকিবহাল করা।

  • নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ছাত্রদের সঠিক পথ দেখানো।

  • ছাত্রদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করে তাদের দলগতভাবে কাজ করার সার্থকতা বোঝানো শিক্ষকের অন্যতম দায়িত্ব।

  • দুজন ছাত্রের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান এবং প্রকৃত বন্ধুত্ব গড়ে তোলার জন্য উভয়ের মধ্যে যোগাযোগের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া।

যাইহোক, একজন শিক্ষক যখন বুঝতে পারেন যে, কোনও একটি পড়ুয়ার সমস্যা সমাধানের জন্য একজন প্রশিক্ষিত কাউন্সেলরের সাহায্যের প্রয়োজন, তখন তিনি  ধীরে ধীরে কলেজের ভারপ্রাপ্ত কাউন্সেলরের সঙ্গে সেই বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করেন। পরিস্থিতি যখন ঘোরালো হয়ে পড়ে, যেমন— ছাত্রদের মধ্যে গুন্ডাগিরির প্রবণতা দেখা দিলে, কোনও নেশার দ্রব্যের প্রতি ছাত্রদের নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পেলে, যৌন নির্যাতন বা পড়ুয়াদের মধ্যে আত্মহত্যা করার মনোভাব জেগে উঠলে মনোবিদের সাহায্য একান্ত জরুরি হয়ে পড়ে। তবে, এইসব সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে কাউন্সেলরের সাহায্য গ্রহণের আগে একজন শিক্ষক ছাত্রদের মনের আঘাতের প্রাথমিক চিকিৎসা করতেই পারেন—

  • ছাত্রদের সমস্যা খুব মনোযোগ সহকারে শুনে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং সহমর্মী হয়ে ওঠা শিক্ষকের প্রাথমিক কর্তব্য।

  • আন্তরিকভাবে ছাত্রের পাশে দাঁরানোর জন্য শিক্ষকের উচিত নমনীয় মনোভাব দেখানো। যেমন — ''আমি তোমার সমস্যাটা বুঝতে পেরেছি'' বা ''তোমার সমস্যাটা দেখছি খুবই গুরুতর''— এইভাবে ছাত্রের সামনে শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া জানানো জরুরি।

  • তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা দরকার। কোনও একটি ছাত্রের সমস্যা নিজের সহকর্মী বা অন্য কোনও ছাত্রের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়াটা একজন শিক্ষকের পক্ষে একেবারেই যুক্তিসংগত কাজ নয়।

  • তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, মতামত দেওয়া বা ছাত্রদের বকাবকি করা এক্ষেত্রে একেবারেই উচিত নয়।

কিছু ছাত্র তাদের সমস্যা নিয়ে কলেজের কাউন্সেলরের সঙ্গে কথা বলতে না-ও চাইতে পারে। সেক্ষেত্রে একজন শিক্ষককেই ছাত্র এবং কাউন্সেলরের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। আর এইভাবেই একজন ছাত্রের কাছে কলেজের কাউন্সেলরের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।