আমার ৩১বছর বয়স এবং এই বিষয়টা আমার ক্ষেত্রে খুবই সংবেদনশীল। বিষয়টা আমায় ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল কারণ এর ফলে বৃহত্তর অর্থে আমার আত্মবিশ্বাস এবং আত্মনির্ভরতায় আঘাত লেগেছিল।
সারা পৃথিবীতে একজন মানুষকে কেমন দেখতে তা নিয়ে তাকে নানারকম মন্তব্য শুনতে হয়; আমিও এর ব্যতিক্রম নই। আমার মনে পড়ে আমার চুল, গায়ের রং এবং দৈহিক আকার-আয়তন নিয়ে আমাকে ছোটবেলা থেকেই অনেক মন্তব্য শুনতে হত। আমি যখন একদম বাচ্চা ছিলাম তখন আমার শারীরিক ওজন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। তাই সেই সময়ে আমার চারপাশের মানুষজন ভালোবেসেই হোক বা রাগ করেই হোক ব্যঙ্গ করে নানারকম নাম ধরে আমায় ডাকত। যেমন আমার পরিবারের লোকজন এবং বন্ধুবান্ধবরা আমায় ভালোবেসে বা স্নেহভরে থলথলে ভাল্লুক বলে ডাকত; আবার যখন তারা রেগে যেত তখন আমায় তারা জলহস্তী বলে ডাকত। এই দুটো নামের প্রভাবই আমার উপর একইরকমভাবে পড়ত। ওই নাম দুটো শুনে আমার খুব অস্বস্তি হত। আমার গায়ের রং কালো বলে লোকে আমায় কাক বলেও ডাকত। আমি ছিলাম আসলে দেশের উত্তর-পূর্ব অংশের লোক তাই আমার চুলগুলো খুব ফুলে থাকত, তাকে সামাল দেওয়া বেশ অসুবিধাজনক ছিল। আর সেটা দেখে বন্ধুরা আমায় সাইবাবা বলে ডাকত। আমি এইসব তথাকথিত 'ভালোবাসা-আদরমাখা শব্দগুলো'কে ক্রমশ আত্মস্থ করতে শুরু করেছিলাম। সেই সঙ্গে অন্যদের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতেও উঠে-পড়ে লেগেছিলাম।
আমি ক্রমশ আমার শরীরকে লুকিয়ে রাখতে শুরু করেছিলাম। কারণ আমার মনে একটা বিশ্বাস জেগেছিল যে যদি আমায় কেউ সশরীরে দেখতে না পায় তাহলে আমায় কেমন দেখতে তা নিয়ে কেউ কোনও মন্তব্য করবে না। আমি ক্রমে আমায় নিয়ে করা অন্যদের মন্তব্য বা বক্তব্যগুলোকে আত্মস্থ করার চেষ্টা শুরু করেছিলাম এবং সেই সঙ্গে আমার দৈহিক গড়ন যে মোটেই সুন্দর নয় তা নিয়ে আমার মনে একপ্রকার দৃঢ় বিশ্বাস গড়ে উঠেছিল। আমি কয়েকটি নির্দিষ্ট জামাকাপড় পরা এড়িয়ে চলতাম। যেমন হাতাকাটা জামা, যা পরলে আমার শারীরিক গড়ন ও ত্বক স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যাবে এবং হলুদ বা ম্যাজেন্টা রঙের জামাকাপড়, যার ফলে ভিড়ের মধ্য থেকেও আমায় স্পষ্টভাবে দেখা যাবে, সেসব জামাকাপড় আমি একদম পরতাম না। যেহেতু আমার ত্বকের উজ্জ্বলতা ছিল না সেহেতু আমি রংচঙে জামাকাপড় পরা ছেড়ে দিয়েছিলাম এবং হালকা রঙের জামাকাপড় পরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমায় দেখতে সুন্দর ছিল না বলে আমার মনে হত জীবনে আমায় অনেক পরিশ্রমসাধ্য কাজ করতে হবে। আমি কোনওরকম প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতাম না এবং কখনোই নিজের দৈহিক গড়ন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারতাম না। আমার মনে হত মোটা হওয়াটা অস্বাস্থ্যের লক্ষণ।
আমি আমার দৈহিক ভাবমূর্তি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা শুরু করলাম এবং ক্রমশ স্থূলতা ও অস্বাস্থ্যের মধ্যেকার পার্থক্য বোঝার চেষ্টা করতে লেগেছিলাম। আত্মবিশ্বাসে ভর করে আমি কাজকর্ম করা শুরু করেছিলাম। সেই সঙ্গে আমায় কেমন দেখতে, তা নিয়ে কে কী ভাবনাচিন্তা করছে, সেই বিষয়টাকে অগ্রাহ্য করা শুরু করেছিলাম। এখন আমি আমার নিজের পছন্দ, ভালো-মন্দগুলো সম্পর্কে যথেষ্ঠ সচেতন থাকি। ব্যক্তিগতভাবে আমার চাওয়া-পাওয়া বা কোন জামা পরব অথবা কোনটা পরব না সেগুলো নিজেই ঠিক করি। আমায় নিয়ে অন্যদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়াও আমি এখন বন্ধ করে দিয়েছি। আমি আমার নিজস্বতাগুলোকে এখন খুবই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করি। সেই সঙ্গে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছি যে আমি ঠিক যেরকম ঠিক সেভাবেই আমি নিজেকে ভালোবাসব।
হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশনের কাছে করা অনুরোধের দরুণ এই প্রবন্ধের লেখকের নাম প্রকাশ করা হল না।
এই রচনাটি দৈহিক ভাবমূর্তি এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রবন্ধের অন্তর্গত। টুইটার এবং ফেসবুকে #ReclaimOurselves নামক কথপোকথনের সাহায্যে পাঠকরা এই বিষয়টি সম্পর্কে বিশদে জানতে পারবেন।