প্রতিবন্ধী শংসাপত্র কী?
প্রতিবন্ধীদের সমাজে সমান সুযোগ ও অধিকার দেবার উদ্দেশ্যে, ১৯৯৫ সালে ভারতীয় সংসদে ‘দ্য পার্সনস উইথ ডিসেবিলিটি অ্যাক্ট’ পাশ করা হয়। এই আইনে প্রথমবার নির্দিষ্ট প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়।
প্রতিবন্ধীদের সামাজিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়া আটকাতেই চিফ কমিশনার অফ ডিসেবিলিটিস এই পদক্ষেপটি গ্রহণ করেন। নতুন অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রতিবন্ধকতার তালিকায় মানসিক প্রতিবন্ধকতাও সংযোজন করা হয়েছে। যে কোনও প্রতিবন্ধকতা যদি এক ব্যক্তির মধ্যে ৪০%-এর বেশি পাওয়া যায় এবং তিনি সেই ভিত্তিতে শংসাপত্র আদায় করে থাকেন, তবে তিনি উক্ত সুবিধাগুলি ভোগ করতে পারেন।
আমি কি সেই শংসাপত্রের যোগ্য?
মানসিক প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি জটিল হবার কারণে সেই ক্ষেত্রে শংসাপত্র আদায়ে সমস্যা হতে পারে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পরিমাপ সহজ হলেও মানসিক প্রতিবন্ধকতার পরিমাপ খুবই কঠিন কাজ। বর্তমানে আমরা IDEAS বা ইন্ডিয়ান ডিসে্বিলিটি ইভালুয়েশন অ্যান্ড অ্যাসেস্মেন্ট স্কেল অনুসরণ করে থাকি।
মানসিক প্রতিবন্ধকতা পরিমাপ করার জন্যে সবার আগে একটি প্যানেল গঠন করা হয়। সমস্ত মনোরোগ চিকিৎসা সংস্থার কাছে সেই তথ্য উপলব্ধ থাকে। এই বিষয়ে আরও জানতে রাজ্য প্রতিবন্ধী কমিশনারের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যেতে পারে। এই প্যানেলটিতে নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে।
(ক) সেই সংস্থার প্রধান – এই ব্যক্তি কিন্তু সংস্থার চেয়ারপার্সন বা ডিন বা মেডিক্যাল সুপারিন্টেনডেন্ট বা তাঁদের মনোনীত কোনও ব্যক্তি
(খ) একজন মনোবিদ
(গ) একজন চিকিৎসক
আপনার পূর্ববর্তী চিকিৎসার ইতিহাসের সঙ্গে একটি ফর্ম ভরে আপনি প্যানেলের কাছে আবেদন করতে পারেন। আপনার যদি নূন্যতম ৪০% প্রতিবন্ধকতা না পাওয়া যায়, তবে আপনাকে সেই শংসাপত্রটি দেওয়া হবে না।
আমাকে কীভাবে পরীক্ষা করা হবে?
আইডিয়াস্ স্কেলের সাহায্যে মানসিক প্রতিবন্ধকতার পরিমাপ ৪টি অংশে করা হয়ে থাকে। এই অত্যন্ত জটিল পদ্ধতির মাপকাঠিগুলি সংক্ষেপে নীচে দেওয়া হল।
১. অসুস্থ ব্যক্তি নিজের যত্ন সঠিক নিতে পারেন কি না? পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকেন কি না? স্নান করেন কী না? শৌচাগার ব্যবহার করতে পারেন কি না? নিজের পরিচর্যা করতে পারেন কি না? পোশাক পরতে পারেন কি না? পর্যাপ্ত খাবার খান কি না এনং নিজের স্বাস্থ সম্বন্ধে সচেতন কি না?
২. ওই ব্যক্তি তাঁর চারপাশের লোকের সঙ্গে কীরকম ব্যবহার করেন? তিনি কি সুস্থ সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম?
৩. স্পষ্টভাবে নিজের বক্তব্য বলতে বা অন্যের কথা বুঝতে পারেন কি না? ব্যক্তি অন্যের সঙ্গে মৌখিকভাবে বা ইশারা-ইঙ্গিতে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হন কি না?
৪. ভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন কি না? নিজের কাজকর্ম, বাড়িঘর গোছানো,পড়াশুনা ইত্যাদির দায়িত্ব সামালাতে পারেন কি না?
মনে রাখবেন পরীক্ষা পদ্ধতিটি অত্যন্ত জটিল এবং সময় সাপেক্ষ। অতএব শংসাপত্র পাবার আগে আপনাকে একাধিকবার প্যানেলের সামনে বসতে হতে পারে।
আমার কি প্রতিবন্ধী শংসাপত্র নেওয়া উচিত?
প্রতিবন্ধী শংসাপত্র কোনও মতেই বাধ্যতামূলক নয়। যদি আপনার কাছে প্রতিবন্ধী শংসাপত্র থাকে তবে আপনি নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি উপভোগ করতে পারেন। এই সুবিধাগুলি রাজ্য সরকারের ওপর নির্ভরশীল।
১. গাড়িভাড়ায় ছাড়
২. পি ডি এস পরিকল্পনার অন্তর্গত রেশন ভাতা
৩. জমি বণ্টনের / আবাসন প্রকল্পের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার
৪. প্রতিবন্ধী ভাতা / বার্ধক্য ভাতা
৫. উক্ত অধিকারগুলি থেকে বঞ্চিত হলে ‘কমিশনার অফ ডিসে্বিলিটি’র (জাতীয় এবং রাজ্য স্তরে) কাছে অভিযোগ করার অনুমতি।
মনে রাখবেন এই সুবিধাগুলি কিন্তু আপনার আয়ের সঙ্গে জড়িত। আপনি যদি একটি নির্দিষ্ট মাত্রার থেকে বেশি আয় করেন তাহলে উক্ত সুবিধাগুলি আপনাকে না-ও দেওয়া হতে পারে।
বর্তমানে মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্যে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোনও রকম সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শংসাপত্রের কোনও প্রয়োজন নেই।
মানসিক প্রতিবন্ধী হবার অর্থ সাংবিধানিক অধিকার হারানো নয়। একজন মানসিক প্রতিবন্ধী মেন্টাল হেলথ্ অ্যাক্টের মধ্যে পড়েন না, সুতরাং তাঁর ওপর কোনও রকমের নজরদারি বা তাঁর নিয়মিত পরীক্ষা নিষ্প্রয়োজন। একজন মানসিক প্রতিবন্ধী কিন্তু পাগল নন। মানসিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি যদি আপনি বধির, দৃষ্টিশক্তিহীন ইত্যাদি হন, অর্থাৎ আপনার মধ্যে মাল্টিপল ডিসে্বিলিটি থাকে তাহলেও আপনি ন্যাশনাল ট্রাস্ট অ্যাক্টের (১৯৯৯) অন্তর্ভুক্ত সুবিধাগুলি লাভ করতে পারেন।
প্রতিবন্ধী শংসাপত্রের বৈধতা কি?
কিছু সুবিধা শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট রাজ্যে উপলব্ধ হলেও এই শংসাপত্র পুরো দেশে বৈধ। উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি দিল্লি থেকে সেই শংসাপত্রটি পেয়ে থাকেন এবং আপনার ট্রেনের যাত্রাপথে তামিলনাড়ু পড়ে, তাহলেও কিন্তু আপনি ভাড়ায় ছাড় অথবা প্রতিবন্ধীদের জন্যে বিশেষ কামরায় যাতায়াত করতে পারবেন।
এই শংসাপত্রটি সাধারণত আজীবন বৈধ থাকে। যেহেতু মানসিক প্রতিবন্ধকতা ভবিষ্যতে সেরে যাবার সম্ভাবনা থাকে, তাই এই শংসাপত্রটি নির্দিষ্ট সময়ের পর পুনর্নবীকরণ করে নিতে হয়।
আমাকে যদি শংসাপত্র না দেওয়া হয়?
যদি আপনি মনে করেন যে, আপনার শংসাপত্রের আবেদন অকারণে বা অন্যায় ভাবে খারিজ করা হয়েছে তবে আপনি রাজ্য কমিশনারের কাছে আপনার খারিজ করা আবেদনপত্রের একটি প্রতিলিপি সহ নালিশ জানাতে পারেন।
চেন্নাই-এর বাসিন্দা অম্বা সালেলকর পেশায় একজন আইনজ্ঞ এবং প্রতিবন্ধী সংক্রান্ত আইনে বিশেষ আগ্রহী।