আইন সংক্রান্ত

আইনি প্রশ্নোত্তরঃ বিবাহ এবং মানসিক অসুস্থতা

হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন

আমার মানসিক সমস্যা রয়েছে বা আমি বিক্ষিপ্ত মানসিকতার ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। আমি কি আইনের দিক থেকে বিবাহে সক্ষম?

ভারতে প্রত্যেকটি ধর্মমত অনুসারে বিবাহের নিজস্ব আইন রয়েছে। কয়েকটি ধর্মমতে বিবাহের বৈধতা থাকে না, যদি স্বামী বা স্ত্রীর একজনও বিক্ষিপ্ত মানসিকতার হয়। এই ক্ষেত্রে পরিস্থিতির ফলাফল হিসেবে বিবাহ স্বীকৃত হয় না। বিপরীতে যা বিচ্ছেদের একটি কারণ বলে ধরা হয়। এখানে প্রত্যেকটি ধর্মমতে মানসিক অসুস্থতা এবং বিবাহের বিষয়ে আলাদা অনুশাসন সক্রিয়।

হিন্দুদের অনুশাসন -  

আইনত হিন্দু বিবাহের প্রয়োজনীয় শর্তগুলি নির্ধারণ করে 'সেকশন হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট', যার ক্লজ-২ তে মানসিক অসুস্থতার বিষয়টি বলা হয়েছে।

বিবাহের সময় উভয় পক্ষই -

বৈধ সম্মতি প্রদানের ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যার বিষয়ে সত্য গোপন করবে না। বিবাহ ও সেই সংক্রান্ত কথাবার্তা এগোনোর সময় মানসিক অসুস্থতা বা ওই ধরনের সমস্যা আছে কি না অবশ্যই জানাবে। নিয়মিত বা নির্দিষ্ট সময় অন্তর পাগলামির লক্ষণ দেখা গেলে তা-ও জানাতে বাধ্য থাকবে।

ওই ধারার সেকশন ১২ অনুযায়ী, যদি উপরের শর্তগুলি ঠিকঠাক পূরণ না হয়, তবে আদালতে স্বামী বা স্ত্রী, যে কোনও পক্ষের প্রতারণার আবেদন অনুসারে সেই বিবাহ খারিজ বা বাতিল হয়ে যেতে পারে।
 

মুসলিম সমাজের জন্য -

মুসলিম আইন অনুসারে, মানসিক অসুস্থ এবং গুরুত্বহীন কোনও পক্ষ বৈধমতে অভিভাবকদের সম্মতি নিয়ে নিকাহ্‌ করতে পারে। এই ধরনের বিবাহ আইনত স্বাভাবিক বলেই ধরা হয়।

পারসি সমাজের জন্য -

পারসি আইনে এক পক্ষের মানসিক অসুস্থতায় বিবাহ বাতিল হবে না এবং ইহা আইনসম্মত।

খ্রিস্টান সমাজের জন্য -

খ্রিস্টান বিবাহ আইন মতে মানসিক অসুস্থতা বা সমস্যার বিষয়টি আদৌ আলোচ্য নয়। বিবাহের সময় কোনও এক পক্ষের মানসিক অসুস্থতার জন্য বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হতে পারে না।

স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টের অন্তর্ভুক্ত বিবাহ -  

স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুসারে ধর্মনিরপেক্ষ বিবাহের জন্য বিধিমতে বিবাহ বাতিল ঘোষণা  করার ক্ষেত্রে মানসিক অক্ষমতাকে কারণ হিসেবে ধরা হয়। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, বিবাহ তখনই খারিজ করা হবে, যদি বিবাহের সময় কোনও পক্ষ মানসিক অসুস্থতার বিষয়ে বৈধ সম্মতি জানতে না পারে। বৈধ সম্মতি দেওয়া হলেও, যদি বিবাহ বা কথাবার্তা চলাকালীন পাত্র বা পাত্রী মানসিক সমস্যায় প্রবলভাবে ভুগতে থাকে তাহলে ওই বিবাহ খারিজ হবে। নিয়মিতভাবে পাগলামির লক্ষণকেও এর মধ্যে ধরতে হবে। 

আমার স্বামী (বা স্ত্রী) চূড়ান্ত মানসিক অসুখে ভুগছেন, তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা আমার পক্ষে অসম্ভব। এই সমস্যা কি বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হতে পারে?

উপরের বক্তব্য অনুসারে বহুক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, মানসিক অসুস্থতা বা বিক্ষিপ্ত মানসিকতা বিবাহ খারিজ করার একটি বড় কারণ। যদিও 'পার্সোনল ল' বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক আইনানুসারে আমাদের দেশে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। এমনও হতে পারে, বিবাহের সময় স্বামী বা স্ত্রী-র মধ্যে কেউ কোনও মানসিক অসুস্থতার শিকার ছিলেন না। এই ধরনের সমস্যায় বিবাহ বিষয়ক ব্যক্তিকেন্দ্রিক আইনের ভিত্তিতেই সমাধান করতে হবে। যেমন -

হিন্দুদের জন্য - হিন্দু বিবাহ আইনের সেকশন ১৩ অনুসারে স্বামী বা স্ত্রীর পক্ষ থেকে বিবাহ বিচ্ছেদের দাবি করা যেতে পারে। যদি কোনও একজন নিয়মিত বা মাঝেমধ্যে চূড়ান্ত মানসিক অসুস্থতায় ভুগতে থাকে। কারণ এর ফলে কোনও একজনের পক্ষেই বিক্ষিপ্ত মানসিকতার শিকার অপরজনকে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব নয়।  

মুসলিম আইন - যে কোনও বিবাহিত মহিলার স্বামী যদি ন্যূনতম দু-বছর সময় ধরে পাগলামির শিকার হয়, তাহলে ওই মহিলা 'ডিসোলিউশন অফ মুসলিম ম্যারেজ অ্যাক্ট' অনুসারে বিবাহ বাতিলের আবেদন করতে পারেন।

পারসি আইন - যদি স্বামী-স্ত্রীর একজন বিবাহের সময় থেকে আদালতের সাহায্য নেওয়া পর্যন্ত মানসিক অসুস্থতার শিকার হয় তাহলে বিচ্ছেদ মঞ্জুর হবে। এক্ষেত্রে প্রমাণ করতে হবে, বিবাহের সময় বিষয়টি জানা যায়নি এবং বিবাহের তিন বছরের মধ্যে বিচ্ছেদের আবেদন করতে হবে। দুজনের কোনও একজন দু-বছরের বেশি মানসিকভাবে অসুস্থ থাকলে অথবা চূড়ান্ত মানসিক সমস্যার কারণে তার সঙ্গে স্বাভাবিক জীবনযাপনে সমস্যা হলে বিচ্ছেদের আবেদন করা যাবে।

খ্রিস্টানদের জন্য - ভারতীয় বিবাহ বিচ্ছেদ আইনে নীচের শর্তগুলি বিচ্ছেদের জন্য কার্যকরঃ -  স্বামী-স্ত্রী কোনও একজনের মানসিক অবস্থা সেরে ওঠার মতো নয় এবং সেই বিষয়ে চিকিৎসার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে।

বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করার আগে দুজনে কমপক্ষে দু-বছর দাম্পত্যজীবন কাটিয়েছেন।

ধর্মনিরপেক্ষ বিবাহের ক্ষেত্রে বিশেষ বিবাহ আইন - স্বামী বা স্ত্রী যে কোনও একজনের মানসিক সমস্যা বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে তখনই ধরা হবে, যখন কোনও একজন কোনও তাৎপর্যপূর্ণ  সময় মানসিক অসুস্থতার মধ্যে কাটিয়েছেন। যে অবস্থাকে অপর-পক্ষের মনে হয়েছে চূড়ান্ত এবং একসঙ্গে থাকার কোনও কারণ নেই।