কৈশোর

জীবন যখন বন্ধুদের কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে

ডাঃ শ্যামলা বৎসা

বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে, যৌবন বয়সে তাঁদের বন্ধুরাই জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়। তাঁরা স্কুল, কলেজ, কর্মক্ষেত্রে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান এবং বাড়ি ফিরেও আড্ডা চলতে থাকে। বন্ধুদের সংস্পর্শে এসে তাঁরা যতটা স্বতঃস্ফূর্ত, আনন্দিত অনুভব করেন সেটি তাঁদের জীবনের একটি অন্য অর্থ তৈরি করে।

হাইস্কুল, কলেজে, বা কর্মক্ষেত্রের সবচেয়ে নিচু অংশে থাকা কালীন আপনি হয়তো বেশিরভাগ তরুণ লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করেন। আপনি বুঝতে পারেন কাদের সঙ্গে মিশতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, কাদের সঙ্গে করেন না। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে শেখেন নিজেকে বা অন্য কাউকে কষ্ট না দিয়ে। সমাজের সকলের সঙ্গে মেলামেশা করলে আপনি মানসিক ভাবে একেবারে সুস্থ অনুভব করেন। 

তরুণদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্কটি হয় আবেগজনিত এবং সেটি একদম মজবুত হয়ে থাকে। ক্লাসে বা কর্মক্ষেত্রে কোনও সমমনস্ক ব্যাক্তি পাওয়া গেলে তা খুবই ভাল লাগে; আপনি তাঁদেরকে বলতে পারেন, “আমিও এটা করি, বা ওটা ভালবাসি।”

কোনও দলের সাথে জড়িত হলে, যাঁদের মতামত আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, সেটি আপনার ভাললাগার উৎস হয়ে উঠতে পারে। তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের তাদের চেয়ে একটু বয়সে বড় মানুষদের সাথে মিশতে ভাল লাগে, যারা তাঁর সদ্য পেরানো শৈশবের মেলামেশা করা লোকজনের থেকে আলাদা।

অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর মধ্যে ছেলেমেয়েরা প্রচুর দল তৈরি করে। কেউ কেউ আবার আলাদা হয়ে নিজেদের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক তৈরি করে। আশেপাশের ছেলেমেয়েদের কথা শুনে অনেকে অনেক কিছু করে, আবার কিছু ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েরা এ সব নিয়ে না ভেবে, পড়াশুনায় মন দেয়। এক একটি ছেলেমেয়ের সম্পর্কে একেক রকম ধারণা তৈরি হয়। যে বিশেষ সম্পর্কগুলি এই বয়সে তৈরি হয়, সেগুলি ভেঙ্গেও যেতে পারে। এই বয়সটাই হল নতুন কিছু করার। কেউ কেউ আবার তা করতে চায় না। কিন্তু ব্যাপারটা হল, সবাই ক্রমশ পালটাতে থাকে এবং নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, একটি পরিবারের সবচেয়ে ছোট সন্তানটি এবং সবচেয়ে বড় সন্তানটির কাছে, তাদের অভিভাবকদের বর্ণনা একেবারে আলাদা হবে।

আমি এটুকুই পরামর্শ দিতে পারি যে নিজের সারা দিনটিকে, মানে ১৬-১৮ ঘণ্টাকে একটি পিৎজার মত করে ভাগ করে নিন। দু থেকে ছটি টুকরো দিন নিজের বন্ধুদেরকে। বাকিটুকু থাকুক নিজের জন্যে। স্কুলের কাজ, পরিবার, কাজকর্ম যা আপনি একা করতে ভাল বাসেন, বা এমন কোন কাজ যা রোজ করা উচিৎ কিন্তু করতে পারেন না, যেমন নিজের কুকুরকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া, বা বাড়ির কাজে সাহায্য করা, ইত্যাদি তাঁর মধ্যে পড়বে। যদি এটি করতে পারেন, তাহলে আপনার জীবনে একটি ভারসাম্য বজায় থাকবে। মানুষ নিজের অনেকটা আবেগ এবং বিশ্বাস নিজেদের বন্ধুদের উপর খরচ করেন। তাই বিশ্বাসঘাতকতা হলে, যারা এতদিন একে অপরের সব ছিলেন, তাঁরাই দূরে সরে যেতে থাকেন। এই সব হলে, তা সম্পূর্ণ রূপে আপনাকে ভেঙ্গে দিতে পারে, কারণ এতদিন যা আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা সবই এখন অর্থহীন হয়ে যেতে পারে। এই সময় যদি আপনার দ্বাদশ শ্রেণী বা কলেজের ফাইনাল পরীক্ষা থাকে, তাহলে আপনার সাহায্যের প্রয়োজন হবে।

যখন আপনার বন্ধুরাও একই সাথে পরীক্ষা দিচ্ছেন তখন তাদের ঘাড়েও সবকিছু চাপিয়ে দেওয়া উচিৎ না। মা বাবা বা ভাই বোনরা তখন আপনার সবচেয়ে বড় সাহায্য হতে পারে, তা সে যতই তাঁরা আপনার সমালোচনা করুন না কেন। তাদের কাছ থেকে পারলে সাহায্য নিন। যাই হোক না কেন, ভেঙ্গে পড়বেন না। কারোর কাছ থেকে সাহায্য না পেলে স্কুলের কাউন্সেলর বা ডাক্তারের কাছে যান। তাঁরা আপনাকে আবার মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে পারবেন বা আপনার চিকিৎসার উপায় বাতলে দেবেন।

ডাঃ শ্যামলা বৎসা বেঙ্গালুরুর একজন মনোবৈজ্ঞানিক (সাইকিয়াট্রিস্ট) যিনি কুড়ি বছরেরও বেশী সময় ধরে এই পেশার সাথে যুক্ত। এই সংক্রান্ত আরো লেখা এখানে পাক্ষিকভাবে প্রকাশিত হবে। আপনাদের কোন বক্তব্য বা জিজ্ঞাস্য থাকলে তাঁকে columns@whiteswanfoundation.org তে লিখে জানাতে পারেন।