একজন মা তার সন্তানকে যখন পৃথিবীর আলো দেখায়, তখন সেই সঙ্গে নিজের শরীর এবং মনে বহন করে আরও দু'টি সমস্যা। তাদের একটি হল মনের উদ্বেগ আর অপরটি হল মানসিক চাপ। যদিও এই সমস্যা দু'টি ক্ষণস্থায়ী ও সময়ের সঙ্গে তা দূরও হয়ে যায়। তবু একবার যে সব মায়েরা এই ধরনের উদ্বিগ্নতা ও মানসিক দুশ্চিন্তার শিকার হন, তাঁরা তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে ওই সমস্যা দু'টির কুপ্রভাব হাড়ে-মজ্জায় টের পান। আর এইভাবেই বাচ্চার জন্মের পর সদ্য মায়েরা পোস্ট-পার্টাম আংজাইটি বা প্রসবোত্তর সময়ের মানসিক উদ্বেগজনিত রোগের কবলে পড়েন। শিশুর স্বাস্থ্যের চিন্তা, বাচ্চাকে মায়ের দুধ খাওয়ানো বা এরকম আরও অনেক বিষয় নিয়েই মহিলারা এই সময় দুশ্চিন্তায় ভোগেন। যদি এই ধরনের উদ্বেগ ক্রমশ মনে এক অজানা আশঙ্কা বা ভয়ের জন্ম দেয়, তখনই একজন মায়ের উচিত বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরামর্শ গ্রহণ করা।
গর্ভাবস্থায় একজন মহিলা যে ধরনের মানসিক উদ্বিগ্নতার শিকার হন তার সঙ্গে প্রসব-পরবর্তী উদ্বেগের লক্ষণগুলির অনেক মিল রয়েছে। লক্ষণগুলির মধ্যে কয়েকটি হল—
সবসময় মনে একধরনের অশান্তি এবং বিরক্তি বা খিটখটে ভাব।
সারাক্ষণ নানা দুশ্চিন্তা এমনভাবে মনে চেপে বসে থাকে যে প্রাত্যহিক কাজকর্ম ঠিকঠাক করা যায় না।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং রাত্রে ঘুমের সময়ে নানা অসুবিধা দেখা দেয়।
ক্রমাগত উদ্বেগের ফলে বাচ্চা ভালো রয়েছে কি না, তা বারবার দেখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
এই মানসিক উদ্বিগ্নতার জন্য সন্তানকে ছেড়ে এক মুহূর্তের জন্যও অন্য কোথাও যাওয়া সম্ভব হয় না।
যদি কোনও সদ্য প্রসব করা মায়ের ক্ষেত্রে এই ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে তৎক্ষণাৎ তাঁর উচিত ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা। আর তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণও করতে হতে পারে।
পোস্ট-পার্টাম অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিস্অর্ডার বা ওসিডি
অনেক সময় নতুন মায়েদের ক্ষেত্রে মানসিক উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা এতটাই মাত্রাছাড়া হয় এবং বারেবারে ফিরে আসার প্রবণতা জন্মায় যে তাতে সাংঘাতিক বিপদের আশঙ্কা থেকে যায়। এই পরিস্থিতিতে তাদের মনে বাচ্চার ক্ষতির আশঙ্কা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এহেন পোস্ট-পার্টাম ওসিডি-র মূল লক্ষণগুলি হল—
বাচ্চাকে ঘিরে অজানা আশঙ্কা, ভয় ইত্যাদি কল্পনা করা।
এই ভয় কাটানোর জন্য এক কাজ বারবার করা। যেমন, যদি কোনও মায়ের মনে তার বাচ্চার সংক্রমণ হতে পারে বলে ভয় হয়, তাহলে দেখা যাবে যে, সে তার বাড়ি-ঘর বারবার ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করছে বা বাচ্চা ঠিক আছে কি না, তা বোঝার জন্য ক্রমাগত শিশুর উপর নজর রাখছে। এমনকী ঘুমের সময়ও এর অন্যথা ঘটে না।
বাচ্চাকে একা রাখার ক্ষেত্রেও মায়েরা এইসময় ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকে।
এহেন অতিরিক্ত সদা-সতর্ক মনোভাব মনের অস্থিরতাকে এমনভাবে বাড়িয়ে দেয় যে বিশ্রাম নেওয়াও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
রোগ নিরাময়ের চিকিৎসা
প্রাকপ্রসব পর্বের মতো প্রসব-পরবর্তী মানসিক উদ্বেগজনিত রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে অসুখের গুরুত্ব বা গভীরতার উপর। যদি অসুখের গভীরতা তেমন গুরুতর না হয় তাহলে সাধারণ চিকিৎসা এবং পরিজনদের আন্তরিক সহযোগিতাই যথেষ্ট। কিন্তু গুরুতর সমস্যার ক্ষেত্রে মায়ের দরকার উপযুক্ত চিকিৎসা আর সেই সঙ্গে সাইকোথেরাপি। এক্ষণে কগনিটিভ বিহেভিয়রাল থেরাপি বা ইন্টারপার্সোনাল থেরাপিই প্রযোজ্য। এই থেরাপির সাহায্যেই প্রসব-পরবর্তী পর্যায়ে একজন মায়ের মানসিক উদ্বেগজনিত রোগের উৎস চিহ্নিত করে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করা যায়।