মাতৃত্ব

বর্ণনা: সন্তানের জন্মের পর সুধার আচরণ বদলে গেল

প্রসব পরবর্তী অবসাদ সাময়িক সমস্যা এবং এর চিকিৎসা সম্ভব

ডাঃ প্রীতি এস

৩২ বছরের সুধার সব আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয়েছিল। সে খুব ভালো চাকরি করতো। তার স্বামী তার প্রতি যত্নশীল, দায়িত্ববান এবং অনুরাগী। ওদের যত্ন সহকারে সাজানো বাড়িতে সব সময় বন্ধুদের আনাগোনা লেগে থাকতো। সুধা হাসিখুশি, কথা বলতে ভালবাসেন এবং অন্যদের প্রতি সংবেদনশীল।

কিন্তু গর্ভধারণের সবরকমের প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হওয়ার ফলে মাতৃত্বের অপূর্ণ বাসনা তাঁকে হতাশ করে তুলেছিল। অনেক মাস ধরে ওষুধ সেবন আর চিকিৎসার পর, অবশেষে সুধা একদিন জানতে পারলেন যে উনি গর্ভবতী। মা-বাবা হওয়ার আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়লেন সুধা আর তাঁর স্বামী। নতুন দায়িত্ব নিয়ে দুজনেই খুব উৎসাহিত বোধ করছিলেন।

সঠিক সময়ে সুধা ফুটফুটে ছেলেকে জন্ম দিলেন। পুরো পরিবার আনন্দে মেতে উঠল। কিন্তু সন্তান জন্মানোর কিছুদিন পর থেকেই সুধার আচরণে লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা গেলো। মেজাজ সারাক্ষণ খিঁচিয়ে থাকায় ছোট ছোট কারণে স্বামীর সাথে ঝগড়া করতে আরম্ভ করেছিলেন সুধা।

মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে পড়তেন আর বিনা কারণে কাঁদতে আরম্ভ করতেন। তাঁর স্বামী বুঝতে পারলেন যে সুধার মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য প্রয়োজন এবং স্থানীয় একজন চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন।

সমস্যার সম্পূর্ণ বর্ণনা দেওয়ার সময় সুধা ডাক্তারকে জানান যে সন্তান জন্মানোর পর থেকে তাঁর মনে হচ্ছে যেন সব কিছু পালটে গিয়েছে। মানসিক অবসাদ তাঁকে নিরাশা বাদি করে তুলেছে আর তাঁর সারাক্ষণ মনখারাপ আর ক্লান্ত লাগে। যে সন্তানের জন্ম নিয়ে তিনি এত উৎসাহিত ছিলেন, এখন তাঁর প্রতি কোন টান অনুভব করছেন না, বাচ্চার দেখাশোনা করে কোন আনন্দ অনুভব করছেন না। বেঁচে থাকার কোন কারণ উনি আর খুঁজে পাচ্ছেন না। খাবারের প্রতি অনীহার দরুন সুধার ওজন ও কমে গিয়েছিলো।

সমস্ত উপসর্গ শোনার পর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জানালেন যে সুধা প্রসব পরবর্তী অবসাদে ভুগছেন। সন্তানের জন্মের পর শরীরে হরমোনের তারতম্যর জন্য, ভালো মতো ঘুমোতে না পারায়, মা হওয়ার দায়িত্ব জনিত উৎকণ্ঠা থেকে, জিন সম্বন্ধিত কারণে বা প্রথমবার গর্ভধারণের পর অনেক মহিলার মধ্যে প্রসব পরবর্তী অবসাদ দেখা দেয়।

কোন নতুন মায়ের মধ্যে এই ধরনের উপসর্গ যদি তাঁর স্বামী বা পরিবারের অন্য কোন সদস্য লক্ষ্য করেন, তাহলে সমস্যা বাড়ার আগেই তাঁর সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করা উচিৎ। সন্তান জন্মানোর পর শারীরিক এবং মানসিক নানা পরিবর্তনের জন্য অনেক মায়ের নিজের আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তাই এই সময় প্রত্যেক মহিলার তাঁর স্বামীর সংবেদনশীল-সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। কোন নেতিবাচক মনোভাবের ইঙ্গিত পেলে, স্বামীর উচিৎ স্ত্রীর সাথে সেই অনুভূতিগুলো নিয়ে খোলাখুলি ভাবে আলোচনা করে তাঁকে আশ্বস্ত করা যাতে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠে উনি মাতৃত্বের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। সমস্যার অবনতি ঘটলে বা উপসর্গ বৃদ্ধি পেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।

এই কাল্পনিক বর্ণনাটি স্পন্দনা ইন্সটিটিউট অফ মেন্টাল হেল‌থ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্স (এস আই এম এইচ এ এন এস) বেঙ্গালুরুর সঙ্গে যুক্ত মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ প্রীতি এস বাস্তব পরিস্থিতি বোঝানোর জন্যে তৈরি করেছেন। এটি কোনও ব্যক্তিবিশেষের অভিজ্ঞতা নয়।