মাতৃত্ব

নতুন মাতৃত্ব: সন্তানের জন্মের পর মানসিকভাবে সুস্থ থাকা

হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন

যদি সন্তানসম্ভাবনার সময়টা মায়েদের হয়, তাহলে ঠিক তার পরের পর্যায়টার মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায় সদ্যোজাত শিশু। একটি বাচ্চার জন্মের পর অর্থাৎ প্রসব- বেদনার দীর্ঘ পর্ব অতিক্রম করার পথে একজন মায়ের কাছে সবচাইতে কঠিন কাজ হল সদ্যোজাত সন্তানের যত্নের জন্য যথাযথ দায়িত্বপালন করা । নতুন মায়েরা এইসময় নতুন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দিশাহারা বোধ করে। এই পরিস্থিতিতে একজন মা কীভাবে নিজের যত্ন নেবে সে সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হয়েছে-

  • বাচ্চার জন্মের পর একজন মায়ের ক্লান্ত বোধ করা স্বাভাবিক এবং এটা সন্তান জন্মানোর পর কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহের জন্য স্থায়ী হয়। কারণ বাচ্চার জন্ম দিতে গিয়ে মায়েদের শরীর থেকে যে রক্তক্ষরণ হয় তার ফলে তারা ক্লান্ত বা অবসন্ন হয়ে পড়তেই পারে। যেহেতু এইসময় মায়ের ওজন আচমকাই কমে যায় তাই তাদের পেট 'শূন্য' বা 'খালি' বলে মনে হয়। এজন্য জরুরি বাচ্চার জন্মের পর একজন মায়ের প্রথম ২ থেকে ৩ সপ্তাহ ভালোভাবে বিশ্রাম নেওয়া।

  • প্রচুর জল ও তরল খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এই পর্যায়ে শরীর যাতে শুষ্ক না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা একান্ত দরকার।

  • স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে জরুরি পুষ্টিকর আহার। খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ খাবারদাবার নতুন মায়েদের ক্ষেত্রে একান্ত আবশ্যক। এবিষয়ে অন্য লোকের চাইতে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে জরুরি। আমাদের সমাজে প্রথা-পার্বণকে ঘিরে নানারকম খাওয়াদাওয়ার নিয়ম চালু রয়েছে। সেক্ষেত্রে চেষ্টা করতে হবে বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসাশাস্ত্র সম্মত খাবার খাওয়া।

  • মাতৃদুগ্ধ পান বা স্তনপান: অধিকাংশ নতুন মায়েদের কাছে প্রসবের পর প্রথম কয়েকটা দিন খুবই কঠিন সময় হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই এইসময়ে হাসপাতালের ডাক্তার বা নার্সদের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন। এইসময়ে বাচ্চাকে স্তনপান করানোর ক্ষেত্রে নার্স বা ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনওরকম দ্বিধা বোধ করা ঠিক নয়। অথবা এবিষয়ে নিজের উপর অহেতুক চাপ দেওয়াও উচিত নয়। বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়ে মায়েদের উচিত সঠিক অবস্থান নেওয়া এবং আরামদায়ক চালচলন ও শান্ত মেজাজ-মর্জি বজায় রাখা। এটাই হল স্তনদানের সঠিক দিশা। যদি এক্ষেত্রে কোনও সন্দেহ থাকে তাহলে একজন ল্যাকটেশন কনসালট্যান্টের সঙ্গে কথা বলা ভালো।

  • বিশেষ করে বাচ্চার জন্মের পর প্রথম কয়েকটা দিন মায়ের মনে একটা দিশাহারা ভাব এবং বাচ্চাকে কেন্দ্র করে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর প্রতি অনেক প্রশ্ন থাকে। এইসময়ে মায়েদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের জন্য বাচ্চাকে দেখভাল করার ক্ষেত্রে অন্যের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।

  • প্রথম দু'মাস মায়েদের ক্লান্ত থাকা এবং কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেকে অক্ষম ভাবাটা একেবারেই স্বাভাবিক। এই সমস্যা প্রায়শই দেখা যায়। কিন্তু যদি এই ভাবনার ফলে বাচ্চার যত্নের ক্ষেত্রে অবহেলা হয় তাহলে অন্যের সহায়তা প্রয়োজন।

  • শরীরচর্চা: বাচ্চার জন্মের পর কয়েক সপ্তাহ মায়েরা হালকা শরীরচর্চা করতে পারে। এক্ষেত্রে নিজের শারীরিক অবস্থান অনুযায়ী কী ধরনের ব্যায়াম করা যেতে পারে সে বিষয়ে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা জরুরি।

  • একটি সদ্যোজাত শিশু তার মায়ের কাছ থেকে অনেক সময় ও মনোযোগ প্রত্যাশা করে। এর ফলে নতুন মায়েরা তাদের স্বামীদের সঙ্গে পর্যাপ্ত সময় কাটাতে সক্ষম না-ও হতে পারে। সে কারণে বাচ্চার দেখভালের জন্য বাবাকেও কিছু দায়িত্ব দেওয়া দরকার; আর এভাবে দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার ফলে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে কিছুটা সময় কাটাতেও সক্ষম হতে পারে।

  • যদি বাচ্চার যত্ন করতে গিয়ে খুব চাপের মধ্যে পড়তে হয় তাহলে চেষ্টা করতে হবে নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করা। আর দেখতে হবে সেই সময়ে অন্য কেউ যেন বাচ্চার দেখভালের দায়িত্ব নেয়।

  • যখন বাচ্চা আনন্দে ও শান্ত থাকবে তখন তার সঙ্গে সুন্দর সময় কাটানো প্রয়োজন।

কর্মরত মায়েদের জন্য করণীয় হল-

  • সবসময় উচিত বাচ্চার জন্মের আগে, জন্ম-পরবর্তী সময়ের কাজকর্মের পরিকল্পনা করে রাখা।

  • নিজের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অফিসের ম্যানেজার ও এইচআর-এর সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করা জরুরি। অনেক সময়ে নতুন মায়ের মধ্যে চনমনে ভাব উধাও হয়ে গিয়ে নিস্তেজ ভাব দেখা যায়। এক্ষেত্রে শরীর যখন বিশ্রাম চাইবে তখন এইচআর-এর সঙ্গে আলোচনা করে বিশ্রাম নিতে হবে। বাড়ি থেকে যাতে অফিসের কাজ করা যায় তার ব্যবস্থা করে রাখা জরুরি। সদ্য বাচ্চা রয়েছে এমন মহিলা কর্মীদের জন্য প্রত্যেক অফিসে কাজের নির্দিষ্ট নীতি ও সুযোগ-সুবিধা রাখা প্রয়োজন।

  • সাময়িক বিরতি: কাজের ফাঁকে দশ থেকে পনেরো মিনিটের জন্য কি একটু বিশ্রাম নেওয়া যায় না?

  • যখন মায়েরা বাড়ি থেকে দূরে কাজের জায়গায় থাকবে তখন বাচ্চার জন্য মায়ের বুকের দুধ সঞ্চয় করে রাখার কৌশল রপ্ত করা জরুরি

  • মানসিক চাপের প্রভাব মা ও শিশু - দু'জনের উপরেই পড়তে পারে। যদি অফিসের কাজের কারণে মানসিক চাপ বাড়ে তাহলে নিজের কাজের দায়িত্বগুলো পুনর্বিবেচনার জন্য ম্যানেজারের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে হবে। ঘোরাঘুরিজনিত ক্লান্তি এড়ানোর জন্য বাড়ি থেকে অফিসের কাজ করা বাঞ্ছনীয়। তাই নিজের কাজের সংস্থায় মাতৃত্বকালীন ছুটির সুযোগ-সুবিধা যথাযথভাবে ব্যবহার করা জরুরি।