মাতৃত্ব

গর্ভাবস্থা: এই সময়ে আমার আনন্দে ও চনমনে থাকার কথা, কিন্তু আমার খুব বিষণ্ণ লাগছে... আমি কি অবসাদে ভুগছি?

হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন

মেয়েদের জীবনে মাতৃত্ব সবচেয়ে জটিল একটা অধ্যায়। এইসময়ে মহিলাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বহু ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে। তাই এইসময়ে প্রতিটি হবু মায়ের প্রতি তার চারপাশের মানুষজনের যথাযথ মনোযোগ এবং সহানুভূতিশীল থাকা প্রয়োজন।

অধিকাংশ মহিলাদের কাছেই গর্ভাবস্থা একটা আনন্দের সময়। কিন্তু কয়েকজনের ক্ষেত্রে এইসময়ে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। নানারকম জৈবিক ও মনোগত অব্যবস্থার ফলে তাদের জীবনে অবসাদ, উদ্বেগ, ওসিডি এবং প্রসব-পরবর্তী সাইকোসিস-এর মতো বেশ কিছু মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা দেখা দেয়।

মানসিক সুস্থতা একজন সন্তানসম্ভবা মহিলার শরীর-স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমন তাদের গর্ভধারণকালীন সুরক্ষার দিকটিও এই বিষয়ের অর্ন্তগত।

গর্ভাবস্থা

ন'মাসের গর্ভধারণের পর্যায়টিকে গর্ভাবস্থাকালীন অধ্যায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।  এইসময়ে নানারকম জৈবিক ও মনোগত অব্যবস্থার ফলে মেয়েদের মধ্যে মানসিক  অবসাদ ও উদ্বেগ দেখা দেওয়ার ঝুঁকি থাকে। যদিও এইসময়ের মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাকে প্রায়শই নির্ধারণ করা হয় না, বরং তাকে অবহেলা বা অগ্রাহ্য করা হয়। কারণ এই পর্বের অবসাদের লক্ষণগুলোর সঙ্গে গর্ভাবস্থাকালীন বিভিন্ন মানসিক সমস্যা যেমন- খিটখিটে ভাব, ক্লান্তি, ঘুম ও খিদে না পাওয়া প্রভৃতির মিল রয়েছে বলে মনে করা হয়।

যেসব কারণে গর্ভাবস্থাকালীন অবসাদ দেখা দিতে পারে সেগুলো হল-

  • দুর্বল বৈবাহিক সম্পর্ক

  • অবাঞ্ছিত বা অপরিকল্পিত গর্ভধারণ

  • গার্হস্থ হিংসা (শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন)

  • অবসাদ, বাইপোলার সমস্যা, প্রসব-পরবর্তী সাইকোসিস বা অন্যান্য মানসিক অসুস্থতার পারিবারিক অথবা ব্যক্তিগত ইতিহাস

  • আগে থেকে হওয়া কোনও মানসিক অসুস্থতা গর্ভাবস্থার সময়ে আরও প্রকটভাবে দেখা দিতে পারে, যেমন- ওসিডি বা পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি)

  • গর্ভধারণের আগে নির্ধারিত হওয়া মানসিক অসুখের জন্য নির্দিষ্ট ওষুধ খাওয়া গর্ভাবস্থার সময়ে বন্ধ করে দেওয়া বা ওষুধ খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া

  • পূর্বের গর্ভাবস্থাজনিত বা শোকপূর্ণ কোনও ঘটনার অভিজ্ঞতা অর্জন করা

  • অর্থনৈতিক বোঝার মোকাবিলা করা

  • মদ্যপান, ক্ষতিকারক ওষুধের প্রতি আসক্তি

  • গ্রামীণ এলাকা বা জনবসতি ছেড়ে শহরে চলে আসা যেখানে নিজের পরিবার বা সামাজিক সাহায্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকা

  • অতিরিক্ত কাজের বোঝা সামলানোর জন্য মানসিক চাপের সম্মুখীন হওয়া

প্রতিটি মহিলার ক্ষেত্রেই গর্ভধারণের সময়ে কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ চোখে পড়ে যেগুলো মূলত হরমোনজনিত পরিবর্তনের ফলেই ঘটে।

গর্ভাবস্থাকালীন স্বাভাবিক পরিবর্তনগর্ভাবস্থাকালীন অস্বাভাবিক পরিবর্তন
গর্ভাবস্থার প্রথম পর্যায়ে বমি-বমি ভাব থাকেমেজাজ-মর্জির বদল, আবেগতাড়িত হয়ে পড়া
খিটখিটে ভাবআত্মনির্ভরতা কমে যাওয়া
দৈহিক ভাবমূর্তি নিয়ে চিন্তা করাগর্ভধারণের তৃতীয় পর্যায়ে ঘুমের সমস্যা
প্রথম ও তৃতীয় পর্যায়ে বেশি করে ক্লান্ত বোধ করাপ্রসবজনিত কারণে ও বাচ্চার সুস্থতা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকা
এইধরনের পরিবর্তন সাধারণত গর্ভধারণকালীন অবসাদের ফলেই দেখা দেয়গর্ভাবস্থায় শারীরিক ওজন হ্রাস বা ওজন বৃদ্ধি না পাওয়ার সমস্যা
মর্নিং সিকনেস' অতিক্রম করার পরেও খিদে কমে যাওয়ার সমস্যাঘুমের ধরনের রদবদল ঘটা
অস্থিরতা বা অধীর হয়ে যাওয়াক্লান্তি বা শারীরিক শক্তি হারিয়ে ফেলা
নিজেকে অপদার্থ ভাবা বা অপরাধ বোধে ভোগাআনহেডোনিয়া অর্থাৎ কোনও বিষয়েই আগ্রহ বা আনন্দ অথবা উপভোগ করার ইচ্ছে না থাকা
নজিরবিহীনভাবে মনঃসংযোগ কমে যাওয়ামৃত্যু বা আত্মহত্যার কথা বারবার চিন্তা করা

যদি কোনও সন্তানসম্ভবা মহিলা নিজের ক্ষেত্রে বা কোনও মানুষ যদি তার স্ত্রী অথবা মেয়ের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থাকালীন সময়ে এসব পরিবর্তন লক্ষ করে তাহলে তার উচিত অবিলম্বে একজন বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া।

বিশেষভাবে মনে রাখা জরুরি যে গর্ভাবস্থাকালীন অবসাদ সহজেই নির্ধারণ করা যায়। যদি সঠিক সময়ে অসুখ চিহ্নিত করে তার চিকিৎসা করা যায় তাহলে সন্তানসম্ভবা মায়েরা বাচ্চার জন্মের আগেই সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।