আমাদের সবার জীবনেই এমন কোনও বন্ধু থাকতে পারে যে কোনও সময়ে আমাদের কাছে এসে বলতে পারে যে সে কিছু বিষয় নিয়ে সত্যিই খুব চিন্তাগ্রস্ত রয়েছে। সেই শুনে আমরা ভাবি যে ঘটনাটা বোধ হয় তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই আমরা বিষয়টাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে থাকি। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেই সময়ে ওই বন্ধু তার নিজের চিন্তার কথা বারবার বলতেই থাকে। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে আমাদের প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত? আমাদের কি ওই বন্ধুকে সহানুভূতি দেখানো জরুরি? ধৈর্য ধরে তার কথা শোনা প্রয়োজন? অথবা তাকে কি বলা উচিত যে, সে সব সমস্যা কাটিয়ে উঠবে বা আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই সমস্যা থাকে।
কী হয়েছে ওই বন্ধুর যে পুরো সপ্তাহ ধরে বিষণ্ণ ছিল? তার কাছে গিয়ে কি আপনি জিজ্ঞাসা করবেন যে তার কী হয়েছে? অথবা তাকে শুধু বলবেন যে আনন্দ কর, খুশি থাকো, নাকি ভাববেন যে তাকে একা ছেড়ে দেওয়াই ভালো (কিছুটা হলেও এসব ঘটনায় আপনার নিজের মেজাজও খারাপ হয়ে যেতে পারে)? যখন একজন মানুষ তার আবেগানুভূতির সমস্যার কথা আমাদের কাছে বলে তখন আমাদের মধ্যে এধরনের প্রতিক্রিয়া জানানোটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের প্রতিক্রিয়াগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় -
আমরা তাদের সমস্যাকে তেমন গুরুত্ব দিয়ে বিচার করি না- এসব ক্ষেত্রে আমরা তাদের চিন্তাভাবনাকে অবাস্তব বা অবান্তর বলে চিহ্নিত করি অথবা বলি যে তার থেকেও অন্য আরেকজনের আরও বড় সমস্যা রয়েছে।
আমরা তাদের সমস্যাগুলোকে এড়িয়ে যাই- এসব ক্ষেত্রে আমরা নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখি। কারণ কী ঘটেছে তা আমাদের জানা থাকে না বা আমরা এবিষয়ে কিছু করতেও চাই না।
আমরা তাদের সাহায্য করতে চেষ্টা করি- তাদের সমস্যা আমরা ধৈর্য সহকারে শুনি এবং নিজেদের মতামত না জানিয়ে তাদের সমস্যা বোঝার চেষ্টা করি।
মানুষ তার আবেগানুভূতির সমস্যা অন্যের কাছে সহজে প্রকাশ করতে পারে না। এর উপর যদি অন্যদের প্রতিক্রিয়া ঠিকঠাক না হয় (এড়িয়ে যাওয়া বা গুরুত্ব দিয়ে বিচার না করা) তাহলে সমস্যায় পড়া মানুষটি আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর ফলে তারা নিজেদের সমস্যার কথা অন্যদের কাছে বলতে চায় না, নিজেরাই নিজেদের সমস্যার মোকাবিলা করতে চেষ্টা করে। অদূর ভবিষ্যতে এই ঘটনা তাদের মনে কলঙ্কের বোধ জন্মাতে সাহায্য করে। যদি মানুষ তার মানসিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা করতে না পারে তাহলে উদ্বেগ এবং অবসাদজনিত সমস্যায় তারা আক্রান্ত হতে পারে।
বিপর্যস্ত মানুষের সমস্যা ধৈর্য সহকারে ও নিরপেক্ষভাবে শোনা জরুরি। সমস্যায় পড়ে যখন একজন তার বিশ্বাসভাজন মানুষের কাছে নিজের সমস্যা কথা বলার জন্য যায় তখন উল্টোদিকের মানুষটির উচিত তার কথা সহানুভূতি সহকারে শোনা এবং তার সমস্যাকে গুরুত্ব না দিয়ে বিচার করা কখনোই বাঞ্ছনীয় নয়।