সমাজ ও মানসিক স্বাস্থ্য

সাক্ষাৎকার: আমাদের মনে রাখতে হবে, মানসিক স্বাস্থ্য সকলের দায়িত্ব

হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন

কোন শারীরিক অসুস্থতা দূর করাটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনই গুরুত্বপূর্ণ তার সঙ্গে যুক্ত মানসিক অসুস্থতা দূর করা। আমাদের দেশের সমস্যা সম্পর্কে ওয়ার্ল্ড সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রফেসর দীনেশ ভুগড়া কথা বলেছেন হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশনের প্রিয়াঙ্কা মান্ত্রিপ্রাগাডার সঙ্গে। মানসিক রোগের সাথে জড়িত কলঙ্ক, মানসিক রোগীদের সাথে খারাপ ব্যাবহার এবং এগুলি রোধ করায় সমাজের ভুমিকা কী, এই বিষয়ে তিনি কি বলেছেন দেখা যাকঃ

যারা মানসিক ভাবে অসুস্থ বা যারা মানসিক রোগীর পরিচর্যা করেন তাদের সমাজে কীরকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়?

আমার মনে হয় সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলির একটা হল চিকিৎসা উপলব্ধ করা – কোথায় চিকিৎসা করানো যায় বা কে এই চিকিৎসার খরচ দেয়। আমরা জানি যে নান সামাজিক কারণে মানসিক অসুস্থতা দেখা দেয় এবং এর পরিণতিও খারপ হতে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, যখন কোন ব্যাক্তি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে, আমরা দেখি অনেক সময় তার চাকরি চলে যায়। তাদের অনেক সময় বাড়ি বদল করতে হয়, সংসার থেকে বহিষ্কৃত হতে হয়। আমাদের এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে মানুষ একটি সামাজিক জীব এবুং কোন মানুষের মানসিক ব্যাধি দেখা গেলে তারা নিজেদের পরিবারের সদস্য বা সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য থাকেন না। এর ফলে তাদের নিজেদের আত্মমর্যাদা বা কোন কিছু করার ক্ষমতা হ্রাস পায়।

এই সমস্যাগুলির ফলে জীবনযাত্রায় কতটা প্রভাব পড়ে?

মানসিক অসুস্থতাই হোক বা শারীরিক অসুস্থতা হোক, যে কোন রোগীর একটি বড় সমস্যা হল যে সে একটি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চায়, চাকরি করতে চায়, ব্যাস্ত থাকতে চায়, নিজের বাড়িতে থাকতে চায়, বন্ধুবান্ধব সংসার প্রভৃতি চায়। কিন্তু তাঁদেরকে ঘিরে অন্যদের ভুল ধারণা থাকার দরুন, তাঁরা বাকি সমাজের সঙ্গে সাধারণ ভাবে মেলামেশা করতে বাঁধা পায়।

এমন কোন দেশ আছে কি, যেখানে অন্যরা এই সব ভুল ধারণা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন?

আমার মনে হয় না পৃথিবীতে এমন কোন নিখুঁত দেশ আছে। প্রত্যেকটি দেশের নিজস্ব সমস্যা রয়েছে এবং সমস্যাগুলি নির্ভর করছে সে দেশে কত অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে। যেমন ধরুন ভারতবর্ষে, জিডিপির ১ শতাংশরও কম দেশবাসীদের সাস্থের জন্য বিনিয়োগ করা হয়। তার মধ্যে থেকে ১০ শতাংশরও কম অংশ মানসিক সাস্থে ব্যায় করা হয়। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২১ শতাংশ জিডিপি খরছ করা হয় সাস্থের জন্য, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এটি ৮ থেকে ১০ শতাংশ। সুতরাং এটি অর্থ ব্যায়ের উপরে নির্ভর করে, কতটা খরচ করা হল মানসিক সাস্থের জন্য এবং কী খাতে খরচা হল– হাঁসপাতাল বা সংশোধনাগার বানাতে, নাকি সমাজকে সচেতন করতে, নিজেদের সাস্থ রক্ষা করতে।

ভারতবর্ষে এই ভুল ধারণাগুলি মেটানোর উপায় কি?

অন্য সব দেশের মতো ভারতেও নিজস্ব কিছু সমস্যা রয়েছে। এটি একটি সংস্কৃতি যা এখনও রূপান্তরিত হচ্ছে। পুরনো ঐতিহ্যগত পরিবারগুলি বদলাচ্ছে। বেশীরভাগ মানুষজনই গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসছে। আমরা যদি রোগীর প্রয়োজনীয়তা ও চিকিৎসাকে কেন্দ্রবিন্দু ধরি, তাহলে তাঁকে ঘিরে থাকে পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের দায়িত্ব বেশী কারণ তাঁরা নিজের প্রিয়জনের সুস্থ জীবন কামনা করে। আবার তাঁদেরকে ঘিরে আছে এই বৃহৎ সমাজ যাতে বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতা, নীতি নির্ধারক, পেশাদার ব্যক্তি, বিভিন্ন নেতা যেমন গোষ্ঠীর নেতা বা ধর্মগুরু বা শিক্ষক বাস করেন। কাজেই এটা সবসময় মাথায় রাখতে হবে সাস্থ, বিশেষত মানসিক সাস্থ, সবার দায়িত্বের বিষয়।

এই বিষয়ে মানুষজনকে আরও সচেতন করতে মনোবীদরা কি ভাবে সাহায্য করতে পারেন?

একজন মনোবীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল যে তাঁদের নিজেদের রোগীদের হয়ে সর্বদা কথা বলতে হয়। বেশীরভাগ মানসিক রোগীরা নিজেদের হয়ে কথা বলতে পারেনা। তাই তাদের পাশে কাউকে দাঁড়াতে হবে যে বলবে “এই এই জিনিসগুলি করা প্রয়োজন”।

এই জন্য মনোবিদ রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন পেশাদারদের সাথে রোগীর বিশেষ প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলতে পারেন। সঠিক সময়, সঠিক মাত্রায়, সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন। আমরা জানি যে আপনার যদি একই সাথে ডিপ্রেশন এবং ডায়াবিটিস থাকে তবে আপনার সাস্থের দ্রুত অবনতি ঘটবে। আমরা জানি যে আপনার যদি একই সাথে ডিপ্রেশন এবং উচ্চ রক্তচাপ থাকে তবে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। কাজেই, চিকিৎসক এবং শল্য চিকিৎসকে জানতে হবে কীভাবে ডিপ্রেশনকে চিহ্নিত করা সম্ভব যাতে তাঁরা মনোরোগের চিকিৎসায় সহায়তা করতে পারেন।