কী কী কথা বলবেন না
না, আপনি এর থেকেও বেশি শক্তিশালী!
অথবা: আপনি এটা অবশ্যই করতে পারবেন!
এইধরনের মন্তব্যে ব্যক্তির ভালোর বদলে খারাপ লাগার সম্ভাবনা বেশি। কারণ চারিত্রিক দুর্বলতার কারণে কেউ মানসিকভাবে অসুস্থ হন না। এমনও নয় যে সামগ্রিকভাবে শক্তিসম্পন্ন একজন মানুষের মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই। একজন মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি নির্দিষ্ট কয়েক মুহূর্তের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বা দুর্বল হয়ে উঠতে পারে এবং তাদের বলা যে চেষ্টা করলেই তারা শক্ত থাকতে পারেন বা এমন ব্যবহার এড়িয়ে যেতে পারেন তাদের মনে আঘাত করতে পারে।
এত মনখারাপ করছেন কেন?
অথবা: এইসব মন থেকে দূর করে দাও
এইধরনের কথাগুলো (অসাবধানতাবশত) বলার মানে দাঁড়ায় যে যিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বা বিপর্যস্ত বোধ করছেন তিনি এমনটা করতে চাইছেন তাই করছেন। একইরকম পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যিনি কোনও কারণে বিষণ্ণ হয়ে আছেন এমন একজন মানুষকে ভেঙে না পড়তে বা প্রতিক্রিয়া পাল্টাতে বলার অর্থ দাঁড়ায় যে তার অনুভূতিকে অস্বীকার করা হচ্ছে। এর ফলে তার মনে হতে পারে যে ওই পরিস্থিতি অনুযায়ী তার প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক।
যদি আপনি এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা না করেন তাহলে তা আপনার পক্ষে মঙ্গলজনক হবে।
প্রায়শই যখন কোনও মানুষ তার মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তার কথা আমাদের বলে তখন আমরা তাকে ওই বিষয়ে চিন্তা না করে ‘অন্য বিষয়’ নিয়ে চিন্তা করার কথা বলি। এটাকে আমরা একটা বিরাট সমাধানের পথ বলে মনে করি। কিন্তু আমাদের মনে আসা বিভিন্ন উদ্বেগগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া মানে মনের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করা। একজন মানুষ তার মনকে এমনভাবে তৈরি করতে পারে যার ফলে তারা তাদের চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে অনেক বেশি সচেতন হতে পারে। কিন্তু সেসব চিন্তাকে মনে থেকে একেবারে দূর করে দেওয়া সম্ভব নয়।
আপনি তো নিদেন পক্ষে রাম-শ্যাম-যদুর থেকে অনেক ভাল আছেন, তাদের কী হয়েছিল তা আপনার শোনা উচিত...
অনেকসময়ে একথা বলে আমরা কোনও মানুষের সামনে ভালো বা উজ্জ্বল দিকটিকে তুলে ধরতে চাই বা কোনও একটি পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আমরা তার মনে আশার আলো জ্বালাতে সাহায্য করি – কিন্তু এতে মনে হতে পারে যে আমরা তার সমস্যাটিকে ছোট করে দেখার চেষ্টা করছি। হয়তো তাদের সমস্যা মারাত্মক নয় কিন্তু এমন বক্তব্যে ব্যক্তির মনের যন্ত্রণাকে অবমাননা করা হয়।
আপনার এমন করা উচিত...
অনেকসময়ে আমরা অন্য কারোর ভালো করতে গিয়ে আগ বাড়িয়ে সমস্যার সমাধানের পথ দেখাতে চাই। কিন্তু এটা আমরা কখনোই ভেবে দেখি না যে ওই মানুষটি আদৌ আমাদের কাছ থেকে কোনও সমাধান সূত্র পেতে চাইছে কিনা। প্রায়শই আমরা নিজেদের জীবনে ঘটা কিছু ঘটনার কথা আমাদের বন্ধু বা আত্মীয়স্বজনের কাছে ভরসা করে বলি মন হালকা করার জন্য এবং সমানুভূতির জন্য। যদি সামাধান চাইবার আগেই সমাধানের রাস্তা বলে দেওয়া হয় তাহলে সেই মানুষটি ভাবতে পারে যে আমরা হয়তো তার সমস্যার কথাগুলো শুনতে মোটেই আগ্রহী নই।
মানসিক অসুখ বলে কিছু হয় বলে আমি বিশ্বাস করি না...
বা: আসলে মানসিক অসুস্থতা বলতে কিছুই নেই।
অথবা: আপনার ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
এই বক্তব্যগুলো মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের সমস্যা বা অভিজ্ঞতাকে একেবারে নস্যাৎ করে দেয় এবং তাদের লড়াই ও প্রতিবন্ধকতাকে স্বীকৃতি দেয় না। কোনও একটি বিষয় সম্পর্কে আমাদের সবারই নিজস্ব মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গী রয়েছে; সেই সঙ্গে প্রত্যেকটি মানুষ তার দেখভাল বা যত্নের ক্ষেত্রে নিজের পছন্দ ও বিশ্বাস অনুযায়ী কাজ করে এবং সেগুলোকেও আমাদের স্বীকার করা জরুরি। আসলে আমাদের মনে রাখা উচিত যে প্রত্যেকের অধিকার রয়েছে নিজেদের পথ বেছে নেওয়ার।
''কিন্তু আমি জানি না যে কী কথা বলতে হবে!''
যখন আমাদের বন্ধু বা প্রিয়জনেরা তাদের নিজেদের অসুখের কথা আমাদের কাছে বলে তখন তারা চায় তাদের কথা আমরা যেন সমানুভূতি সহকারে শুনি। এবং সেই সঙ্গে মানুষের একটা সাধারণ প্রবণতা হল অন্যদের সমস্যাটিকে একটা নির্দিষ্ট ছকে বেঁধে ফেলা, কারণ আমরাও সেগুলো নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত থাকি। এইধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য আমাদের কোনও প্রশিক্ষিত মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞের পরামর্শের প্রয়োজন নেই; এই পরিস্থিতিতে আমরা কী বলব এবং কেন বলব সেই সম্পর্কে সচেতন হতে কয়েকটি বিষয় আমাদের সাহায্য করে। এখানে কিছু পন্থা জানানো হয়েছে-
১. তাদের সমস্যাগুলো শুনুন, এবং সমাধানের পথ বা পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হন। যদি দেখেন যে আপনি পরামর্শ দেওয়ার জন্য অধীর হয়ে পড়েছেন তখন নিজেকে মনে করিয়ে দেবেন যে পরামর্শ দেওয়ার সময় তখন আসবে, যখন ব্যক্তির মনে হতে শুরু করবে যে তার মনের কথা কেউ শুনছে।
২. অসুস্থ ব্যক্তি আপনাকে যা কিছু বলছে তা পুরোপুরি আপনি না-ও বুঝতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে আপনি সৎ থাকুন। ''সত্যিই সমস্যাটি খুব কঠিন এবং আমি জানি না যে আমি কীভাবে আপনাকে সাহায্য করব। কিন্তু আপনার যদি আমায় প্রয়োজন হয়, তাহলে আমি আপনার পাশে থাকব।'' বা ''আমি পুরোপুরি সমস্যাটা বুঝতে পারছি না কিন্তু আমি এবিষয়ে আরও অনেক কিছু জানতে চাই।''-এভাবে কথা বলার চেষ্টা করুন।
৩. কাউকে পরামর্শ দেওয়ার আগে তার কথা মুক্ত মনে শুনুন।
৪. যদি কোনও ব্যক্তি আপনার কাছে নির্দিষ্ট সাহায্য না চায় তাহলে তাকে জিজ্ঞাসা করুন যে আপনি কীভাবে তাকে সাহায্য করতে পারেন।
৫. যদি তার সমস্যা শুনে আপনি দিশাহারা বোধ করেন এবং যদি দেখেন যে আপনি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনতে পারছেন না তাহলে তা সহজ করে এভাবে বলুন: ''আসলে তোমার সমস্যার কথা শুনে আমার নিজের কেমন যেন লাগছে। তোমার পক্ষে কি অন্য কারুর সাথে এই বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হবে?''
৬. তাকে বলুন যে আপনি তাকে ভালোবাসেন এবং তার যখনই প্রয়োজন হবে, আপনি তার পাশে থাকবেন।