সরোজা নামক এক মহিলার কথা দিয়েই শুরু করি। এক সকালে সে দেরি করে কাজে আসে। তার চোখ ও মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারি যে, সে সারারাত জেগেছিল। সযত্নে তাকে পাশে নিয়ে গিয়ে কারণ জিজ্ঞেস করতেই জানতে পারি যে, সারারাত সে কেঁদেছে। সরোজা জানাল, তার স্বামী রোজ মদ খেয়ে বাড়িতে ফেরে আর বাচ্চাদের সামনেই এমন অসভ্যতা শুরু করে যা আর সে সহ্য করতে পারছে না। পরিস্থিতি এতটাই অসহ্য হয়ে উঠেছে যে, গত মাসেই সে নাকি একাধিকবার আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টাও করেছে। এই কথা শুনেই আমি সব কাজ ছেড়ে সরোজার মুখোমুখি বসে তার সঙ্গে এক বন্ধুর মতো কথা বলতে শুরু করি।
প্রথমেই আমি তাকে তার ক্ষমতা ও কার্যশক্তির কথা উল্লেখ করে বলি, 'তুমি একজন সৎ ও সাহসী মহিলা। তোমার সততা, নিষ্টা ও দক্ষতাকে আমরা সবাই এককথায় সন্মান দিয়ে থাকি। আমরা সবাই তোমার মতো একজন বিশ্বাসী মানুষকে পাশে পেয়ে নিজেদের ধন্য মনে করি।' একপরই আমি সরোজাকে আমার এক পরিচিত ডাক্তারের কাছে যেতে বলি তার স্বামীকে চিকিৎসা করানোর জন্য। একথা ঠিক যে, আমি সরোজার কোনও সমস্যা সেই মুহূর্তে সমাধান করতে পারিনি, কিন্তু আমার সঙ্গে কথা বলার পর সরোজা খুবই হালকা মনে বাড়ি ফিরে যায়। যাওয়ার সময় সে আমায় কথা দিয়ে যায় যে, আবার যদি তার মানসিক সমস্যা হয় সে আমার সাহায্য চাইবে।
আত্মহত্যা একটি কান্না, সাহায্যের জন্য কাতর আবেদন। কেন কেউ এই পথে পা বাড়াল সে কথা বলা খুব সহজ নয়। কারণ অধিকাংশই বহু জটিল সমস্যা আসলেও লড়াই করে বাঁচার পথেই চলে থাকেন। যাঁরাই আত্মঘাতী হন, তাঁরা একাধিক সমস্যার জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারান। তবে একথা পরিষ্কার যে, আত্মহত্যা করার কথা কেউ তখনই ভাবছে, যখন তার বেঁচে থাকাটাকে দুঃসহ বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু আত্মহত্যা করার কথা ভাবলেও সেই মানুষটি শেষ সময় পর্যন্ত মরতে চায় না। আসলে হতাশা আর নিরাশায় আচ্ছন্ন হয়ে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত মানুষ আর অন্য কোনও চিন্তাই করতে পারে না। যে কথা সরোজার ক্ষেত্রেও ঘটতে চলেছিল। যদি সঠিক সময়ে মানুষ মানসিকভাবে বিষাদে আচ্ছন্ন মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে আত্মহত্যার প্রবণতাকে অবশ্যই রোধ করা যেতে পারে।
মনে রাখতে হবে যে, আত্মহত্যা করার আগে মানসিক বিষাদগ্রস্ত মানুষ কিছু না কিছু হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করে। এই হুঁশিয়ারিকে যত্ন সহকারে সঙ্গে নিয়ে মানুষের পাশে দাড়ালে আপনি জীবন রক্ষক হয়ে উঠতে পারেন। জীবন রক্ষকের ভূমিকায় দাড়িয়ে যে কোনও মানুষ সযত্নে একটি জীবন বাঁচাতে পারেন। পাড়-পড়শি, শিক্ষক, সমাজকর্মী, সহপাঠী, দোকানি, মা-বাবা, নাইট-গার্ড, বাস কন্ডাকটর যে কেউই সতর্ক থাকলে জীবন রক্ষক হয়ে একটি মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারেন। যদি একজন আত্মহত্যাকামী মানুষ আপনার চোখে পড়ে তাকে সযত্নে মানসিকভাবে সাহস দিন। কখনই একথা জিজ্ঞেস করবেন না যে, সে কি মনে করে এই পৃথিবীতে বাঁচা যাবে না? বরং জানার চেষ্টা করুন সে কেন আত্মহত্যা করতে চায়। তার সঙ্গে বন্ধুর মতো ব্যবহার করলে তার পক্ষে খুবই সহজ হবে কারণটা বলা। কখনই একথা বলবেন না যে, আত্মহত্যা করা কাপুরুষের লক্ষণ। বরং তার মানসিক হতাশাকে আশার আলোয় ভরিয়ে দিন। তাকে সাহসী করে ও মানসিকভাবে দৃঢ় করে তুলতে প্রতিটি অসফলতাকে যুদ্ধ করে সফলতায় পরিণত করতে সাহায্যের তাহ বাড়িয়ে দিন। তাকে জীবন সম্বন্ধে আশাবাদী করে তুলতে ভাল ও ইতিবাচক কথা বলুন। মনে রাখবেন সেই ব্যক্তিটির সঙ্গে শ্রদ্ধা সহকারে কথা বলতে হবে। তাকে একা ছেড়ে দেবেন না। যতদিন না ব্যক্তিটি বিষাদ কাটিয়ে উঠছে, তত দিন তার পাশে থাকবেন।
যদি কেউ আরও বিশদভাবে জানতে চান তাহলে যোগাযোগ করুন এই নম্বরে (এন সি ডবলু বি) - ০৮০ - ২৬৬৮৫৯৪৮ / ৯৪৮০৮২৯৬৭০
পদ্মাবতী (এন সি ডবলু বি-তে এক সাইকিয়াট্রিক নার্সের পদে কার্যরতা ও ডাঃ প্রভা চন্দ্রা নিমহান্সে সাইকিয়াট্রির অধ্যাপক পদে প্রতিষ্ঠিত। আত্মহত্যার প্রবণতা রোধ করে কীভাবে মানুষ অন্যের জীবন বাঁচাতে পারে, এই বিষয়ে প্রতি দুই মাসে একবার নিমহান্স সেন্টারে (ব্যাঙ্গালোর) ট্রেনিং প্রোগ্রাম আয়োজন করা হয়। উপরোক্ত ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে যে কোনও ইচ্ছুক ব্যক্তি ট্রেনিং নিতে পারেন।