মানসিক স্বাস্থ্যকে বোঝা

কখন একজনের হেল্পলাইনের প্রয়োজন?

হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন

হেল্পলাইন বলতে কী বোঝায়?

এটি এমন একটি ব্যবস্থা বা পরিষেবা, যা কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করেই মানুষের বিপদে-আপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। সাধারণত টেলিফোনের মাধ্যমেই মানুষ হেল্পলাইনের সাহায্য চায়। কয়েকটি হেল্পলাইন রয়েছে যেগুলি প্রত্যেক দিন চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করে। আবার কোনও কোনোটির ক্ষেত্রে কাজ করার নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। একজন ব্যক্তি, যিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, তিনি ফোন করে হেল্পলাইনের সাহায্য চাইতেই পারেন।

কেন দরকার হয় হেল্পলাইনের?

আমাদের সবার জীবনেই কম-বেশি মানসিক চাপ এবং নানা চ্যালেঞ্জ থাকে। কখনও কখনও এগুলি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অনেক সময় আমরা আমাদের সমস্যার কথা বন্ধু বা পরিবারের লোকজনদের কাছে বলতে পারি। আবার কখনও আমরা ভাবি যে আমাদের সমস্যা অন্য কেউ বুঝতে পারবে না, বা নিজেদের সমস্যার কথা বললে চারপাশের সবাই আমাদের সঙ্গে অন্যরকম ব্যবহার করবে, তারা আমাদের সমস্যাগুলির দ্বারাই আমাদের বিচার করবে। এইসব ভয় থেকেই আমরা অনেক সময় কাউকেই নিজেদের সমস্যার কথা বলে উঠতে পারি না। কিছু ক্ষেত্রে খুব সংবেদনশীল বিষয়ও আমরা আমাদের কাছের মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই না। আবার এমনও হয় যে, আমরা প্রিয়জনদের সঙ্গে বিষয়গুলি আদান-প্রদান করতে চাইছি, কিন্তু আমরা নিজেদের মনের বিপন্নতাকে তাদের সামনে তুলে ধরতে পারছি না বা মুখ ফুটে কোনও কথাও বলতে পারছি না। অনেক সময় একজন মানুষ যাঁকে আমরা নিজেদের সমস্যার কথা বলতে চাইছি, কিন্তু এর জন্য আমাদের কী করা উচিত বা কীভাবে তাঁকে নিজের কথা বলা উচিত, সে সম্পর্কে কোনও স্পষ্ট ধারণাই আমাদের থাকে না। এইসব ক্ষেত্রে অন্যের কাছে নিজেদের সমস্যাগুলি বোধগম্য করার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা তা করতে ব্যর্থ হই। এহেন পরিস্থিতিতে হেল্পলাইনের সাহায্য নেওয়া খুবই ফলপ্রসূ হয়। আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার চাইতেও এই ধরনের হেল্পলাইনগুলির সাহায্য গ্রহণ অনেক সহজ বলে বিবেচিত হয়। যখন কেউ একজন হেল্পলাইনের সাহায্য নেন, তখন তাঁর হারানোর কিছু থাকে না, বরং তিনি এই সাহায্য পেয়ে লাভবানই হন। বেশিরভাগ হেল্পলাইনই বিনা পয়সায় কাজ করে। এক্ষেত্রে ফোনের জন্য সামান্য টাকা খরচ করতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত কাউন্সেলর থাকেন, যাঁরা সাহায্যপ্রার্থীদের মানসিক সমর্থন জোগান। এখানে সাহায্যপ্রার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য গোপন রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। এই জন্য এখানে স্বাধীনভাবে মানসিক সমস্যার বিষয়গুলি সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা করা যায়। কোনোরকম ভয় না রেখেই মনের কথা খুলে বলার সুযোগ পাওয়া যায়। আর এই সবের উপর নির্ভর করেই হেল্পলাইনের কাউন্সেলররা মানুষের মনের চাহিদা বা প্রয়োজনীয়তাগুলিকে বোঝার চেষ্টা করেন।

শুধু বিপদে পড়লেই কি মানুষ হেল্পলাইনের সাহায্য চায়?

হেল্পলাইন শুধু বিপদের সময় সাহায্য করে বা মানুষের জীবনের দুঃসময়ে তার পাশে থাকে এমন নয়। একজন মানুষ যে কোনও সময়ে যে কোনও বিষয়ের সম্পর্কে তথ্য জানার জন্য হেল্পলাইনের দ্বারস্থ হতে পারে। এছাড়া অন্য কোনও ব্যক্তি যে হয়তো মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যায় ভুগছেন, তাকে সাহায্য করার জন্য একজন মানুষ সঠিক তথ্যের সন্ধানে হেল্পলাইনে ফোন করতে পারে।

সাহায্য পাওয়ার জন্য টেলিফোনই কি একমাত্র মাধ্যম?

কয়েকটি হেল্পলাইনের ক্ষেত্রে শুধু ফোনের ব্যবস্থাই রয়েছে। আবার মানুষকে মানসিক দিক দিয়ে সাহায্য করার জন্য এমন কিছু হেল্পলাইন আছে, যেমন টিআইএসএস' আই কল (TISS'iCall)-এর মতো ব্যবস্থায় ই-মেলও করা যায়। অন্যদিকে, 'পরিবর্তন' এবং 'স্নেহা'-র মতো হেল্পলাইন সংস্থায় মুখোমুখি কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থাও রয়েছে।

হেল্পলাইনের কাছে মানুষের কী ধরনের প্রত্যাশা থাকে?

একটি হেল্পলাইনের কাছে মানুষের স্বাভাবিক চাহিদা হলঃ

  • এমন একজন কাউন্সেলর বা স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে কথা বলা, যার কাউন্সেলিং সম্বন্ধে খুব সামান্য হলেও প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা রয়েছে।

  • কাউন্সেলর যেন তাঁর মতামত প্রকাশের আগে সাহায্যপ্রার্থীর কথা সহানুভূতির সঙ্গে শোনেন।

  • কাউন্সেলরের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিজের সমস্যা সম্বন্ধে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া।

  • নিজের সমস্যার কথা জানানোর ক্ষেত্রে যেন কোনো ব্যক্তির সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে।

  • সমস্যা সমাধানের জন্য উপযুক্ত তথ্য সংগ্রহ করা।

  • একজন বিশেষজ্ঞ, যিনি সাহায্য করবেন, তাঁর খোঁজ করা।

  • এছাড়া যে কোনও ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য হেল্পলাইনের সাহায্য নেওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, শিশু-নির্যাতনের ক্ষেত্রেও এই ব্যবস্থার দ্বারস্থ হওয়া যায়।

হেল্পলাইনে ফোন করে কী ধরনের প্রশ্ন করা যায়?

যখন কেউ হেল্পলাইনের সাহায্য চাইবে তখন প্রথমে কাউন্সেলররা তাঁদের পরিচয় দেন। তারপর সাহায্যপ্রার্থীর নাম জানতে চাওয়া হয় এবং সে কতক্ষণের জন্য ফোনে কথা বলতে চান তা জিজ্ঞাসা করা হয়। এক্ষেত্রে প্রতিটি হেল্পলাইনের নিজস্ব নিয়মকানুন থাকে ও সেই অনুযায়ী সাহায্যপ্রার্থীর সঙ্গে ফোনে কথাবার্তা চলে এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগে ফোনের লাইন কাটা যায় না। কাউন্সেলর একজন সাহায্যপ্রার্থীর বয়স এবং বাসস্থান সম্পর্কে খবর নিতে পারেন আর সেই তথ্য অনুযায়ী তাকে তার প্রয়োজন মতো সহযোগিতা করতে সচেষ্ট হন। এক্ষেত্রে যদি কেউ তার নাম বলতে অস্বস্তি বোধ করে, তাহলে তার অস্বস্তি কাটানোর জন্য হেল্পলাইনের পক্ষ থেকে খুব নমনীয় ব্যবহার করা হয়। এর ফলাফলও ভালো হয়। হেল্পলাইনকে দেওয়া সাহায্যপ্রার্থীর তথ্যের গোপনীয়তার বিষয়টিও এক্ষেত্রে পরিষ্কার করে জানানো হয়।

কোন ধরনের সমস্যায় সাধারণত হেল্পলাইনকে ব্যবহার করা যায়?

আমাদের চারপাশে নানা ধরনের হেল্পলাইন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেক্ষেত্রে নিজের দরকার অনুযায়ী এই ধরনের সংস্থা বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বেশিরভাগ হেল্পলাইনই মানুষের কথা শুনে তাকে সাহায্য করার জন্য কাজ করে। কিছু ক্ষেত্রে আবার মুখোমুখি বসে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা যায়। ভারতের মতো দেশে হেল্পলাইনগুলি কয়েকটি নির্দিষ্ট বিষয়কে সামনে রেখে তার কজে করে। যেমন—আত্মহত্যা ঠেকাতে, পারিবারিক হিংসা বন্ধ করতে, শিশুদের যৌন নির্যাতন রোধ বা এলজিবিটির মতো বিষয়ের ক্ষেত্রে হেল্পলাইনের সাহায্য নেওয়া যায়। সাহায্যপ্রার্থীদের যথাযথ তথ্য ও সূত্র জানিয়ে এহেন প্রতিষ্ঠানগুলি নিজেদের দায়িত্ব পালন করে থাকে।

পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের জন্যও এক্ষেত্রে সাহায্য চাওয়া যায় কি?

অবশ্যই যায়। একজন ব্যক্তি তার পরিচিত মানুষজনের সুস্থ থাকা বা অসুস্থতার বিষয়ে হেল্পলাইনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতেই পারে। আর সংস্থাগুলিও এক্ষেত্রে তথ্য ও সূত্র জানিয়ে সাধ্যমতো চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু কারও ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করা যায় না। একটি কাউন্সেলিং তখনই সফল এবং কার্যকরী হয় যখন মানুষ নিজের অন্তর থেকে সেই পদ্ধতিকে গ্রহণ করে। যাইহোক, হেল্পলাইনের কাউন্সেলররা মানুষের নানা ধরনের সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে থাকে এবং তাদের মনের ভয় ও উদ্বেগ দূর করতেও সক্ষম হয়।

হেল্পলাইনে ফোন করে একজন সাধারণত কার সঙ্গে কথা বলতে চাইবে?

অবশ্যই একজন প্রশিক্ষিত কাউন্সেলর, যিনি একজনের মানসিক সমস্যা দূর করতে সক্ষম, তাঁর সঙ্গেই যোগাযোগ করা এক্ষেত্রে জরুরি। তবে, একজন যোগ্য কাউন্সেলরের উত্তরগুলি সংশ্লিষ্ট হেল্পলাইনের নিজস্ব নিয়মকানুন মেনেই দেওয়া কাম্য। যেমন, ব্যাঙ্গালোরে অবস্থিত একটি কাউন্সেলিং, ট্রেনিং ও রিসার্চ সেন্টার হিসেবে পরিচিত 'পরিবর্তন' নামক সংস্থার হেল্পলাইনে ফোন করে যে কাউন্সেলরের সঙ্গে কথা বলা হয়, তাঁর বছর খানেকের কাউন্সেলিং-এর দক্ষতাতো রয়েইছে, সঙ্গে কাউন্সেলিং-এর আরও উন্নত প্রশিক্ষণও রয়েছে। আর এই দক্ষতার জন্যই তিনি শিশু, বয়ঃসন্ধি, দম্পতি বা একটি গোটা পরিবারের কাউন্সেলিং করতে সক্ষম। 'দি টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সাইন্সেস' আইকল-এর বিশেষজ্ঞরা ক্লিনিক্যাল বা অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজিতে মাস্টার ডিগ্রিধারী। কিছু হেল্পলাইন রয়েছে, যেগুলি স্বেচ্ছাসেবকরাই চালান। আবার কয়েকটি ক্ষেত্রে পূর্ণ সময়ের জন্য নিযুক্ত বিশেষজ্ঞরা থাকেন। তবে পদমর্যাদা যাই হোক না কেন, হেল্পলাইনে ফোন ধরার আগে একজন ব্যক্তিকে কাউন্সেলিং-এর প্রশিক্ষণ নিতেই হবে। এমন অনেক হেল্পলাইন রয়েছে, যেখানকার মানুষজন নিজেরা একসময়ে নানা বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে জীবন কাটিয়েছেন। পরবর্তীকালে তারাই অন্যদের সাহায্য করতে এগিয়ে  এসেছেন, যাদের তাদের মতো একইরকম বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।

এখানে কি তথ্যের আদান-প্রদান করা যায়?

তথ্য গোপন করাই হেল্পলাইনগুলির বৈশিষ্ট্য। অধিকাংশ হেল্পলাইন সাহায্যপ্রার্থীর নাম, ঠিকানা, যোগাযোগ নম্বর প্রভৃতি অন্য কাউকে জানাতে চায় না। যদি না সাহায্যপ্রার্থী তার নিজের জীবনের সমস্যার কথা তার পরিচিত-পরিজনদের নিজের থেকে জানাতে ইচ্ছুক হন। হেল্পলাইনে ফোন করার আগে যদি কেউ চান যে তার দেওয়া সব তথ্য যেন গোপন থাকে, তাহলে তারা সেই হেল্পলাইনের নীতি এবং নিয়মগুলি যাচাই করে নিতে পারে। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সংস্থাই তাদের ওয়েবসাইটে এই বিষয়টি বিশদে তুলে ধরে। তাই ফোন করার আগে সেগুলি ভালো করে পড়ে নেওয়া দরকার।

কেউ যদি মুখোমুখি কাউন্সেলিং-এ যেতে না চেয়ে হেল্পলাইনের সাহায্য চায়, তাহলে কি সে সাহায্য পাবে?

কোনও হেল্পলাইনই দীর্ঘমেয়াদি কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ার বিকল্প ব্যবস্থা নয়। তবে সবার ক্ষেত্রে সবসময়ে মনোবিদ বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রয়োজন না-ও হতে পারে। এক্ষেত্রে হেল্পলাইনের কাউন্সেলররাই বলে দিতে পারেন যে, একজনের অতিরিক্ত কোনও সাহায্যের দরকার রয়েছে কি না। এইসব পরিস্থিতিতে তিনিই সাহায্যপ্রার্থীকে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে উপযুক্ত তথ্য দিয়ে বা এই বিষয়ে তার এলাকায় বসবাসকারী কোনও বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিতে পারেন।

হেল্পলাইনের কাউন্সেলিং-এর মাধ্যমেই কি সমস্ত মানসিক স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান সম্ভব?

হেল্পলাইন কাউন্সেলিং-এর মধ্য দিয়ে সব ধরনের মানসিক সমস্যা দূর করা সম্ভব নয়। কিছু সমস্যার ক্ষেত্রে ওষুধ, থেরাপি এবং পুনর্বাসনের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের চিকিৎসাও দরকার।

হেল্পলাইনের সাহায্য চাওয়ার সময় কী করা ঠিক নয়ঃ

যখন কেউ হেল্পলাইনের দ্বারস্থ হবে তখন হেল্পলাইন কী করতে পারে আর কী পারে না, সে বিষয়গুলি মনে রাখলে ভালো। এখানে সেগুলিই আলোচনা করা হয়েছে—

  • একটি ফোন কলই সমস্ত সমস্যার সমাধান করে দেবে এমন আশা না করাই ভালো। কারণ কিছু সমস্যা এতটাই গুরুতর হয় যে, তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

  • নিজের সমস্যার দায় এড়িয়ে চলা ঠিক নয়। একজন কাউন্সেলরকে এটা বোঝানো দরকার যে, সমস্যা নিজে থেকে সৃষ্টি হয়নি। এর পিছনে যার সমস্যা হয়েছে তার দায়িত্ব কম নয়।

  • কাউন্সেলরের কাছ থেকে কোনও উপদেশ চাওয়া উচিত নয়। কারণ কাউন্সেলিং-এর লক্ষ্য হল সাহায্যপ্রার্থীকে তার সমস্যা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল করে তোলা এবং কীভাবে সেই সমস্যা কাটানো যায় তার পথ দেখানো। কিন্তু কাউন্সেলর সমস্ত সমস্যার সমাধান করে দেবে একথা ভাবা ঠিক নয়।

  • হেল্পলাইনে ফোন করে কাউন্সেলরকে কখনোই নিজের করা কাজগুলি বলা জরুরি নয়। কারণ একটি হেল্পলাইনের সুপারভাইজার জানিয়েছিলেন যে, অভিভাবকরা ফোন করে তাদের বাচ্চাদের কাজকর্ম এবং নিজেরা কী চাইছে সে সম্পর্কে কাউন্সেলরের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। এটা বাচ্চাদের জন্য ক্ষতিকর। কারণ বাচ্চারা যদি বুঝে ফেলে যে, বাবা-মা এবং কাউন্সেলর মিলে তার বিরুদ্ধে কোনও পরিকল্পনা করছে, সেটা একেবারেই কাম্য নয়।

  • সুযোগ-সুবিধার অপব্যবহার করা ঠিক নয়। হেল্পলাইনে ফোন করে কোনোরকম অপ্রীতিকর কথাবার্তা বা নিজের অদ্ভুত যৌন কল্পনার বিবরণ দেওয়া অনুচিত।

  • শুধুমাত্র গল্প করার জন্য হেল্পলাইনে ফোন করার প্রয়োজন নেই। কারণ একটি হেল্পলাইনের কাউন্সেলর একজন পেশাদার ব্যক্তি। তিনি কখনও কখনও স্বেচ্ছাসেবক হয়ে মানুষের সেবা করতে পারেন, কিন্তু তার সঙ্গে বন্ধুর মতো গল্প করা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে সম্পর্কের নির্দিষ্ট মাপকাঠি মেনে চলা উচিত। কেউ যদি হেল্পলাইনে ফোন করে গল্প করে তাহলে এমন হতেই পারে যে অন্য কেউ তার সমস্যার সময়োচিত সাহায্য পেল না।

কার ক্ষেত্রে কোন হেল্পলাইনের সাহায্য প্রযোজ্য, তা কী করে বোঝা যাবে?

এক্ষেত্রে অবশ্য কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। যে সাহায্য চাইছে সে হেল্পলাইনের সঙ্গে কথা বলে কতটা স্বস্তি বোধ করছে বা তার দেওয়া তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষিত হচ্ছে কি না, সে বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই ফোনের পর একজনের উচিত নিজের সন্তুষ্টির জন্য নিজেকেই হেল্পলাইনের বিষয়ে নানা প্রশ্ন করা। নিজেকে প্রশ্ন করে যদি উত্তর ইতিবাচক হয়, তবেই সেই হেল্পলাইনের সাহায্য নেওয়া উচিত। আর তা না হলে অন্য আরেকটি হেল্পলাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি। এক্ষেত্রে একজন সাহায্যপ্রার্থীর পছন্দই শেষ কথা বলে বিবেচিত হয়।

নীচে কয়েকটি হেল্পলাইনের তথ্য তুলে ধরা হল—

১। সহায়

অবস্থান— ব্যাঙ্গালোর

সহায়, নিমহানস, মেডিকো প্যাস্টোরাল অ্যাসোসিয়েশন এবং রোটারি ব্যাঙ্গালোর ইস্ট-এর সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করে

টার্গেট গ্রুপ— অনুভূতিগতদিক দিয়ে যারা বিপর্যস্ত

হেল্পলাইন নম্বর— ০৮০-২৫৪৯৭৭৭৭

কাজের সময়— সোম থেকে শনি, সকাল ১০টা থেকে সন্ধে ৬টা

ওয়েবসাইট বা ই-মেলঃ http://www.sahaihelpline.org

২। পরিবর্তন কাউন্সেলিং হেল্পলাইন

অবস্থান— ব্যাঙ্গালোর

পরিবর্তন একটি কাউন্সেলিং, ট্রেনিং এবং রিসার্চ সেন্টার

টার্গেট গ্রুপ—অনুভূতিগত দিক দিয়ে যারা বিপর্যস্ত

হেল্পলাইন নম্বর— ০৮০-৬৫৩৩৩৩২৩

কাজের সময়— সোম থেকে শনি, বিকেল ৪টে থেকে রাত ১০টা

কোন কোন ভাষায় কাজ হয়— ইংরাজি, কন্নড়, হিন্দি, তামিল, পাঞ্জাবি,মারাঠি, ওড়িয়া, বাংলা

ওয়েবসাইট বা ই-মেল—http://www.parivarthan.org

৩। আই কল

অবস্থান—মুম্বই

টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সাইন্সেস-এর হেল্পলাইন

টার্গেট গ্রুপ— অনুভূতিগত দিক দিয়ে যারা বিপর্যস্ত

হেল্পলাইন নম্বর—০২২-২৫৫৬৩২৯১ বা মেল করুন icall@tiss.edu

কাজের সময়— সোম থেকে শনি, সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা

যে যে ভাষায় কাজ হয়— ইংরাজি, হিন্দি, মারাঠি, পাঞ্জাবি, গুজরাটি, তামিল, মালায়ালম

ওয়েবসাইট বা ই-মেল—http://www.tiss.edu/TopMenuBar/field-action/projects/i-call-initiating-concern-for-all

৪। বয়স্কদের জন্য নিমহানস হেল্পলাইন

অবস্থান—ব্যাঙ্গালোর

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরো সাইন্সেস-এর হেল্পলাইন

টার্গেট গ্রুপ— বয়স্ক নাগরিক যারা অনুভূতিগত দিক দিয়ে বিপর্যস্ত

হেল্পলাইন নম্বর—০৮০-২৬৬৮৫৯৪৮ বা ০৯৪৮০৮২৯৬৭০

কাজের সময়— সোম থেকে শনি, সকাল ৯-৩০ থেকে বিকেল ৪-৩০

যে যে ভাষায় কাজ হয়— ইংরাজি, কন্নড়

ওয়েবসাইট বা ই-মেল— nimhans.wellbeing@gmail.com

৫। স্নেহা ইন্ডিয়া

অবস্থান—চেন্নাই

টার্গেট গ্রুপ— যারা আত্মহত্যাপ্রবণ

হেল্পলাইন নম্বর—০৪৪-২৪৬৪০০৫০; ৯১-৪৪-২৪৬৪০০৬০ বা ই-মেল—help@snehaindia.org

কাজের সময়— ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা। এছাড়া এই সেন্টারে মানুষ আসতে পারেন সোম থেকে শনি, সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত

৬। ১০৯৮

টার্গেট গ্রুপ— যে সব শিশুরা শারীরিক এবং মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত

হেল্পলাইন নম্বর—১০৯৮

কাজের সময়—৭ দিন, ২৪ ঘণ্টা

ওয়েবসাইট বা ই-মেল—http://www.childlineindia.org.in/1098/b1b-partnership-model.htm

৭। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বিহেভায়রল সাইন্সেস (এনআইবিএস)

অবস্থান— কলকাতা

টার্গেট গ্রুপ— যারা বিভিন্ন মানসিক রোগে আক্রান্ত

হেল্পলাইন নম্বর— ০৩৩- ২২৪৬-৯৬৬২/২২৮৬-৫২০৩

৮। বেদান্ত সেন্টার ফর হিলিং মাইন্ডস

অবস্থান— সল্টলেক সিটি, কলকাতা

সাইকিয়াট্রি এবং সাইকোলজি সেন্টার

টার্গেট গ্রুপ— যারা বিভিন্ন নেশায় আসক্ত

হেল্পলাইন নম্বর—০৩৩-৩০৫৬-৬৩৬৬ (ডায়াল এক্সটেনশন—৭৪৪, ৭৪৫)।