কল্যাণ

সাক্ষাৎকার: যোগব্যায়ামের মাধ্যমে চিকিৎসা

যোগব্যায়ামের সাহায্যে মনোরোগের চিকিৎসা করা সম্ভব।

হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন

বিগত কয়েক বছরে গোটা পৃথিবী জুড়ে যোগব্যায়াম বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। মনোবিদরাও এর গুরুত্ব বুঝতে পেরে মানসিক রোগের চিকিৎসায় যোগব্যায়ামের ব্যাবহার শুরু করেছেন। নিমহ্যান্সের বিহেভিওরাল সায়েন্সেসের ডিন ডাঃ বি এন গঙ্গাধর, হোয়াইট সোয়ানের সদস্য প্যাট্রিশিয়া প্রীতম কে এই নিয়ে গবেষণার কথা জানালেন।

মানসিক রোগের চিকিৎসায় যোগব্যায়ামের ভূমিকা কী?

ডিপ্রেশন এবং অ্যাংজাইটির চিকিৎসার ক্ষেত্রে যোগব্যায়ামের সুফল পাওয়া গেছে। এমনকি স্কিৎজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসায় অবধি এর ব্যবহার প্রচলিত। যদিও স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় শুরুর দিকে যোগব্যায়াম করতে বলা হয় না, বরং পরবর্তি কালে অ্যান্টি সাইকোটিক ড্রাগের পাশাপাশি এর পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। কার্যত বর্তমানে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা নিয়মাবলী অনুযায়ী স্কিৎজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসায় যোগব্যায়ামের স্থান খুবই গুরুত্বপুর্ন। এছাড়া বিভিন্ন শিশুরোগ যেমন এডিএইচডি বা অটিজমের ক্ষেত্রেও আমরা যোগব্যায়ামের পরামর্শ দিয়ে থাকি। কগনিটিভ ডিস্‌ফাংশন বা ঘুমের সমস্যাতেও যোগব্যায়ামের সুফল পাওয়া গিয়েছে।

যোগব্যায়াম আমাদের মস্তিষ্কে কীরকম প্রভাব ফেলে?

প্রথমত দেখা গেছে যে, যারা নিয়মিত ধ্যান করেন তাঁদের মস্তিষ্কের কিছু কিছু অংশ বাকিদের তুলনায় ভাল থাকে। দ্বিতীয়ত, বয়স্ক ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে যোগব্যায়াম করিয়ে দেখা গেছে যে মাত্র ৬ মাসে মস্তিষ্কের সংবেদনশীল অংশগুলির উন্নতি ঘটেছে। কিন্তু এই নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। যোগব্যায়ামের ফলে আমাদের মস্তিষ্কে ক্ষতিকর কর্টিসলের মাত্রা হ্রাস পায়। নিয়মিত যোগাসন করলে রক্তে নিউট্রোফিক ফ্যাক্টর বলে এক ধরণের প্রোটিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। দেখা গেছে যে এটি আমাদের মস্তিষ্কের কোনও ক্ষতি হওয়া থেকে আটকায় এবং নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী সারিয়েও তোলে।

যোগাসনের কিছু পদ্ধতি যেমন ‘ওঁ’ জপ করলে মাথা ঠাণ্ডা থাকে বলে দেখা গেছে। তাঁর কারণ এতে মস্তিষ্কের আবেগপ্রবণ অংশগুলি আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে।

মনোরোগের চিকিৎসায় কোন ধরণের যোগব্যায়াম করানো হয়?

বিভিন্ন মনোবিদ বিভিন্ন রকম যোগাসন পদ্ধতির ব্যবয়ার করেন। যেমনঃ

জ্ঞ্যান যোগ – এই পদ্ধতিতে আমরা রোগীকে তাঁর মানসিক পরিস্থিতি শেখাই। এটা ঠিক জ্ঞ্যান যোগ না হলেও তাঁর একটা ধরন বলা যেতে পারে। রোগীর এবং তাঁর পরিবারের করনীয় কাজগুলো বুঝতে সাহায্য করাটাই মূল উদ্দেশ্য থাকে।

ভক্তি যোগ – যে কোনো সুচিকিৎসার বিশেষত মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য সবার আগে ডাক্তারের ওপর ভরসা এবং বিশ্বাস রাখা প্রয়োজন। তাই আমরা চেষ্টা করি যাতে ডাক্তার আর রোগীর মাঝের সম্পর্কএ উন্নতি ঘটানো যায়।

কর্ম যোগ – মানসিক রোগীদেরকে এখানে বিভিন্ন রকম কাজকর্ম করতে উৎসাহ দেওয়া হয়। আমরা নিমহ্যান্সে এই পদ্ধতিটি ভীষণ ভাবে ব্যবহার করি।

রাজ যোগ - রোগীর সাস্থের উন্নতির জন্য আমরা রাজ যোগের অন্তর্গত বিভিন্ন জিনিস যেমন যোগাসন, ধ্যান এবং প্রাণায়াম করিয়ে থাকি। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই যোগাসন বা প্রনায়াম করানো হয় কারণ সবাইকে মনঃসংযোগ করিয়ে ধ্যান করানো সহজ কাজ না।

সবাইকে যোগব্যায়ামে উৎসাহ দেবার জন্য কি করা উচিৎ? আপনি কি আমাদের পাঠকদের এই নিয়ে কিছু বলবেন?

যোগাসন করতে উৎসাহ দেওয়া একটু কঠিন কাজ। কারণ মুখে বলে কোন লাভ হয় না। তাঁদের সাথে আমাদের করতেও হয়। ধীরে ধীরে তাঁরা সুফল পেতে শুরু করলে নিজে থেকেই করে। নিমহ্যান্সের সকল ছাত্র ও কর্মীবৃন্দদেরকে আমরা এক মাসের কোর্স করিয়েছি যোগব্যায়াম নিয়ে। বাড়ীতে থেকে খুব সহজে করা গেলেও হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রে তা একটু কঠিন। সমস্ত সুযোগ সুবিধা এখানে উপলব্ধ থাকা সত্ত্বেও তাঁরা নিজেদের মানসিক পরিস্থিতির কারণে তা করে উঠতে পারে না। তাই তাঁদের হাতে ধরে করাতে হয়। আমার মতে খালি যোগব্যায়ামের গুণ শুনিয়ে লোককে উৎসাহ দেওয়া সম্ভব নয়। এটা মনে হয় সবাই বোঝে। একবার নিয়মিত যোগাসন শুরু করলে পড়ে তার গুনাগুণ সম্বন্ধে আগ্রহ বাড়ে।

আন্তর্জাতিক যোগা দিবস কী?

আমাদের দেশে হাজার হাজার বছর ধরে যোগব্যায়াম জনপ্রিয়। কাজেই বিভিন্ন দেশ থেকে একটা নির্দিষ্ট দিন যোগব্যায়ামের প্রতি উৎসর্গ করার দাবি বহুদিন ধরেই ছিল। বছর তিনেক আগে ব্যাঙ্গালুরুতে এইরকম একটি মিটিং এ আমি অংশগ্রহণ করেছিলাম। দেশ বিদেশের বহু যোগব্যায়াম শিক্ষক সেখানে এসেছিলেন। সবাই মিলে তখন ঠিক করা হয় যে ২১শে জুনকে আন্তর্জাতিক যোগা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হবে। কারণ ২১শে জুন বছরের সবচেয়ে লম্বা দিন। উত্তর গোলার্ধের ৮০ শতাংশ লোক এর সুবিধা পাবেন। যোগব্যায়াম, আমার মতে জ্ঞ্যানের উৎস। আমরা এখানে যোগা বলতে যোগাসন, ধ্যান এবং প্রাণায়ামের কথা বলছি। কিন্তু আসল যোগাভ্যাসে আমার স্থূল শরীর ও সূক্ষ্ম চিন্তার সমন্বয় ঘটে। কিন্তু তা আধ্যাত্মিক পথ। সেইভাবে যোগাভ্যাসের বহুবিধ সুফল পাওয়া সম্ভব।