কাজে বেরোবার আগে কপিলের বেশ কিছুক্ষণ ধরে বারবার গাড়ি স্টার্ট দেওয়া এবং বন্ধ করা দেখতে দেখতে স্ত্রী সুনীতা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। ঘুমোতে যাওয়ার আগেও অদ্ভুত কিছু কাজকর্ম এবং বহুবার বাড়ির সব জিনিসপত্র ঠিক রয়েছে কি না, তা দেখাও ছিল কপিলের অভ্যাস। এই অবস্থায় এক বন্ধুর কাছ থেকে সুনীতা একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কথা জানতে পেরেছিলেন, যিনি তাঁদের বাড়ির খুব কাছে চিকিৎসা করতেন। স্ত্রী জোর করাতে কপিল সেই বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
সুনীতা ডাক্তারকে বলেছিলেন যে, বিয়ে হওয়ার পর থেকে তিনি কপিলকে ঘুমোতে যাওয়ার আগে অদ্ভুত কিছু কাজ বারবার করতে দেখেন। আঙুলগুলো মেঝেতে ঠোকা। তার পর একটা সময় বিছানায় এসে আবার বিছানা থেকে উঠে গিয়ে মেঝেতে আঙুল ঠোকা। অনেক সময় দুই থেকে তিন ঘণ্টা ধরে কপিল এরকম করতেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল তাঁর অফিস যাওয়ার আগে বারবার গাড়ি স্টার্ট দেওয়া এবং বন্ধ করার মতো ঘটনাও। এর ফলে প্রতিদিনই কাজে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছিল। সুনীতার ভয় হয়েছিল, হয়তো তাঁর চাকরি চলে যাবে। যেহেতু সুনীতার কোনও উপার্জন ছিল না এবং দুটি বাচ্চা ছিল, সেহেতু কপিলের যদি চাকরি চলে যায় তা খুবই চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছিল।
ওই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সুনীতার কথা মন দিয়ে শুনেছিলেন এবং কপিলকে তাঁর অদ্ভুত কাজকর্মের কারণ ব্যাখ্যা করতে বলেছিলেন। কপিল এই সময় অস্বস্তিতে পড়ে গেলেও কথা বলতে রাজি হয়েছিলেন। কপিল ডাক্তারকে জানিয়েছিলেন, তিনি যদি ঐসব কাজ না করেন তাহলে তাঁর মানসিক উদ্বেগ অসহ্য অবস্থায় পৌঁছে যায়। তারপর তাঁর ভয় হতে শুরু করে যে, তিনি যদি ঐসব না করেন তাহলে বাড়িতে অমঙ্গল ঘটবে। তাঁর বদ্ধমূল ধারণা হল যদি তিনি বারবার ওই কাজগুলো না করেন তাহলে তিনি আরও বেশি করে উদ্বেগের শিকার হবেন।
পরবর্তী প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে কপিল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আরও যে সব অদ্ভুত কাজকর্ম করেন, তার বর্ণনা দিয়েছিলেন। তিনি খুব ভালভাবেই জানতেন যে, এই সব কাজের ফলে তাঁর জীবনযাপনে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে তিনি অসহায় এবং এ হেন আচরণ বন্ধ করাও তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।
সব কথা শুনে ডাক্তার সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, কপিল অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিস্অর্ডারে (ওসিডি) ভুগছেন এবং ওই দম্পতির কাছে অসুখটির বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। তিনি এও বলেন, সমাজে বহু মানুষ এই অসুখে ভুগছেন এবং এর চিকিৎসাও রয়েছে।
কয়েক মাস ধরে ওষুধ এবং থেরাপির মিলিয়ে কপিলের চিকিৎসা চলে। সুনীতার মতে আগের থেকে প্রায় ৮০ শতাংশ ভাল হয়ে যান কপিল এবং এই বিষয়ে কপিলেরও একই মত ছিল। তিনি স্বীকার করেন যে, মাঝে মাঝেই তাঁর পুরনো অভ্যাস মতো কাজ করতে খুব ইচ্ছা করত। কিন্তু চিকিৎসার ফলে ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি তিনি অর্জন করতে পেরেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত সেগুলি বর্জনও করেছিলেন। চাকরির ক্ষেত্রেও তাঁর কোনও সমস্যা হয়নি।
এই কাহিনি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের এহেন রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। এটি শুধু কোনও বিশেষ একজন রোগীর জীবনের সমস্যা নয়। এমন অসুখে বহু মানুষ প্রায়ই আক্রান্ত হন এবং কপিল হলেন তাঁদেরই অন্যতম প্রতিনিধি।