কল্যাণ

প্রযুক্তির প্রতি আসক্তি— কয়েকটি প্রশ্ন ও উত্তর

হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন

যদি আমাদের চারপাশের কিশোর-কিশোরীরা বেশি পরিমাণে প্রযুক্তির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে, তাহলে কেন প্রযুক্তির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না?

ইন্টারনেট বা সেলফোনের মতো প্রযুক্তির ব্যবহার নিষিদ্ধ হলে অল্পবয়সিদের মনে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। তারা খুব খিটখিটে হয়ে যাবে বা রেগে যাবে। যদি উঠতি বয়সি ছেলে-মেয়েদের ফোন বা কম্পিউটার থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হয়, তাহলে তারা বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখবে এবং তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলাও বন্ধ করে দেবে। এই কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তির ব্যবহার একদম বন্ধ করে দেওয়ার পরিবর্তে তা সীমিত পরিমাণে চালু রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ''কোনও কিছু ব্যবহার করার প্রতি যদি কারও তীব্র আকর্ষণ জন্মায়, তাহলে তার ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দিলেই মনের আসক্তি কাটানো যাবে না। এক্ষেত্রে সিগারেটের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার দৃষ্টান্ত তুলে ধরা যায়। আসলে মানুষের মনের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা এবং লক্ষ্যে অবিচল থাকার মানসিকতাই এহেন সমস্যা সমাধানের প্রকৃষ্ট উপায়,'' নিমহানসের শাট (SHUT) ক্লিনিকের ডাক্তার মনোজ শর্মার এমনই মত।

নিজের আসক্তির বিষয়ে কীভাবে একজন নিশ্চিত হবেন?

যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত কেউ ফোনে কথা বলেন বা যথেচ্ছভাবে ফোন ব্যবহার করেন, তাহলেই তা একজনকে বুঝতে সাহায্য করবে যে, তার ফোন নামক বস্তুটির বা প্রযুক্তির প্রতি ক্রমেই আকর্ষণ বাড়ছে।

যদি কারও মনে হয় যে ফোন ব্যবহারের প্রতি তার আসক্তি জাগছে, তাহলে তা কাটানোর জন্য তার কী করা উচিত?

যদি কেউ ফোনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ বা কমাতে চান, তাহলে কতগুলি বিষয় মনে রাখা জরুরি—

  • একমাত্র প্রয়োজন হলেই ফোন ব্যবহার করা উচিত।
  • ফোনে কম সময় কথা বলা দরকার।
  • যখন কেউ পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাবে, তখন ফোনে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা না করাই ভালো।
  • গাড়ি চালানো, পড়াশোনা, খাওয়াদাওয়া, শরীরচর্চা প্রভৃতি কাজ করার সময় ফোনটাকে নিজের থেকে দূরে রাখা জরুরি।
  • ফোন ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট সময় এবং অর্থ ব্যয় করা বাঞ্ছনীয়। এবং প্রত্যহ নজর রাখতে হবে যে এই দুটির পরিমাণ যেন বেড়ে না যায়।
  • যদি কেউ ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে মনের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সক্ষম না হন তাহলে কাউন্সেলর বা মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা
    একান্ত কর্তব্য।
  • দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় ই-মেল, সেলফোন বা হোয়াটস্যাপের মেসেজ চেক করা উচিত। তবে সারাদিন ধরে এগুলির মধ্যে ডুবে থাকার মনোভাব ত্যাগ করতে হবে।

জীবনযাত্রায় বড়সড় পরিবর্তন আনতে পারলে তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে একটি স্বাস্থ্যপ্রদ ও কার্যকরী রুটিন মেনে চলা সম্ভব হবে।

উপরের তালিকাটির সূত্র— http://www.nimhans.kar.nic.in/ncw/leaflets2.pdf

সন্তানদের প্রযুক্তির আসক্তি থেকে মুক্ত রাখতে অভিভাবকরা কেমনভাবে দায়িত্ব পালন করবেন?

ইন্টারনেটের প্রতি সন্তানের অতিরিক্ত আকর্ষণ বা মনোযোগ বাবা-মায়ের চিন্তার অন্যতম কারণ। এর ফলে তাঁরা সন্তানের স্বাস্থ্য এবং পড়াশোনার বিষয়ে খুবই ভাবিত হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের করণীয় কাজগুলি হল—

  • অযথা আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। সন্তানের প্রযুক্তির প্রতি আসক্তি কমানোর জন্য উপযুক্ত সাহায্যের সন্ধান করা জরুরি।
  • সন্তানের সঙ্গে ইতিবাচক যোগাযোগ গড়ে তোলা একান্ত দরকার। প্রযুক্তির প্রতি বশবর্তী হওয়ার জন্য তাদের সমালোচনা না করে, স্বাস্থ্যকর আলাপ-আলোচনা করা বাবা-মায়ের উচিত।
  • সন্তানদের প্রযুক্তি ব্যবহারের ঝোঁক কমানোর জন্য অভিভাবকদের দায়িত্ব আন্তরিকভাবে পালন করতে হবে। এইক্ষেত্রে ছেলে-মেয়েদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন ঘটানো প্রয়োজন। এই কাজ করার জন্য সন্তানের সঙ্গে নিজেদের পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্ত আলোচনা করতে হবে।
  • প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়েদের চাহিদার বাড়বাড়ন্তের পিছনে কোন কারণ রয়েছে, সে সম্পর্কে বাবা-মায়ের মনে স্পষ্ট ধারণা গড়ে তুলতে হবে।
  • অভিভাবকদের চিন্তা এবং আতঙ্ক কমানোর জন্য সঠিক সহায়তা গ্রহণ করা কাম্য। এই সাহায্যের দ্বারাই সন্তানদের সমস্যা থেকে মুক্ত করা যাবে।
  • ছোটদের এহেন সমস্যার সঠিক স্বরূপ বুঝতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে বাড়ির বড়দের সচেতনতা সর্বাগ্রে জরুরি।
  • একটা নির্দিষ্ট সময় বেছে নিতে হবে যখন পরিবারের সবাই ইন্টারনেট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবে। খাওয়ার সময় বা সপ্তাহের শেষে কোনও একটি দিন এর জন্য ধার্য করা বাঞ্ছনীয়।
  • নির্দিষ্ট সময় মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারের সুইচ বন্ধ করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর অভ্যাস ছেলে-মেয়েদের মধ্যে তৈরি করে একপ্রকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করাও উপযুক্ত অভিভাবকদের কর্তব্য।