কর্মক্ষেত্র

কর্মচারীদের আত্মহত্যা সম্পর্কিত বিষয়ে মোকাবিলা

Sriranjitha Jeurkar

একটা আত্মহত্যা চারদিকে আলোড়ন ফেলে দেয়। একটা সংস্থা কীভাবে আত্মহত্যার মতো ঘটনার মোকাবিলা করবে এবং এই ঘটনায় যে সব কর্মচারীরা তাদের সহকর্মীদের হারিয়ে শোকগ্রস্থ হয়ে পড়ে তাদের পাশেই বা কীভাবে দাঁড়াবে অথবা সহানুভূতিশীল হবে?

দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত ক্রমশ বেড়ে চলা মানসিক চাপের মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। আত্মহত্যা প্রতিরোধে কর্মক্ষেত্র এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। কর্মক্ষেত্রে  ঘটা এমন চারটি আত্মহত্যা প্রতিরোধের ঘটনার মধ্যে এই শেষ ঘটনা সম্পর্কিত প্রবন্ধে শ্রীরঞ্জিতা জেউরকর দেখিয়েছেন যে, কীভাবে একটি সংস্থা আত্মহত্যার মতো ঘটনা রুখতে পারে এবং ওই সংস্থার কর্মচারী, যারা সংস্থার পক্ষে অপরিহার্য, তাদের পাশে দাঁড়াতে পারে বা সহানুভূতিশীল হতে পারে।

অজয়, ৩৫ বছর বয়স। পাঁচ বছর ধরে একটি বড় সফটওয়্যার ফার্মে চাকরি করতেন। পরিশ্রমী কর্মী হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল এবং তিনি তাঁর কাছের মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়ও ছিলেন। অজয়ের সহকর্মীরা এই কথা শুনে খুব অবাক হয়েছিলেন যে এক সপ্তাহ ধরে অজয় অফিসে আসছে না। তাঁরা ভেবেছিলেন অজয় হয়তো অসুস্থ। তাঁরা একথা ভাবতেও পারেননি যে, অসুস্থতা ছাড়া অন্য কোনও কারণ অজয়কে এতদিন ধরে তাঁর কাজ থেকে দূরে রাখতে পারে। অজয় যেখানে চাকরি করতেন সেই সংস্থা চেষ্টা করত অজয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার এবং  অফিসে অজয়ের এই নিয়মবর্হিভূতভাবে অনুপস্থিতির কারণও তারা খোঁজার চেষ্টা করত। অজয়ের পরিবারের কাছ থেকে তারা জানতে পেরেছিল যে, অজয় আত্মহত্যা করেছে।

 কর্মক্ষেত্রে আত্মহত্যা প্রতিরোধমূলক বিষয়

  • কেন আমার সংস্থা আত্মহত্যা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেবে?

  • সংস্থার কর্মচারীদের সাহায্যার্থে নেওয়া ব্যবস্থার মধ্যে কেন আত্মহত্যা প্রতিরোধের বিষয়টি জায়গা পাবে?

  • আপনি পারেন আপনার সহকর্মীর জীবন বাঁচাতে

ধীরে ধীরে অজয়ের সহকর্মীরা তাঁর মৃত্যুর কারণ খোঁজার চেষ্টা শুরু করেন। অফিসে অজয়ের সবচেয়ে কাছের বন্ধু অজয়ের মারা যাওয়ার খবরে খুব ভেঙে পড়েছিলেন এবং কাজকর্মে একেবারেই মন দিতে পারছিলেন না। অজয়ের আত্মহত্যা নিয়ে গুজব ছড়াতে শুরু করে। কেউ কেউ বলেন অজয়ের আত্মহত্যার পিছনে রয়েছে অতিরিক্ত কাজের চাপ, আবার অন্য কেউ কেউ বলেছিলেন সম্পর্কের জটিলতাজনিত সমস্যা রয়েছে আত্মহত্যার পিছনে। এই পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার আগে তা কীভাবে মোকাবিলা করা যায় সে বিষয়ে সংস্থার পরিচালন কর্তৃপক্ষ কোনওভাবেই নিশ্চিত হতে পারছিল না।

(বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়ে এই কাল্পনিক ঘটনাটি তুলে ধরা হল। বাস্তব জীবনে এই ধরনের সমস্যার প্রভাব বোঝানোর জন্য এহেন ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।)

একটি সংস্থায় কর্মরত কোনও কর্মচারীর এরকম আত্মহত্যার ঘটনা অন্যান্য  কর্মচারীদের মধ্যে আলোড়ন ফেলে দেয়। অফিসে কর্মরত আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির সহকর্মী, ম্যানেজার, মানবসম্পদ বিভাগ (এইচআর) এবং সংস্থার কর্তৃপক্ষের মধ্যে এই মৃত্যুর প্রভাব পড়ে। সংস্থার কর্মচারী এবং কর্তৃপক্ষ তাঁদের সহকর্মী, যিনি তাঁদের খুবই কাছের মানুষ, তাঁকে হারিয়ে একেবারে ভেঙে পড়েন। অথবা তাদের   মধ্যে জাগে অপরাধ বোধ (''আমি তাকে সাহায্য করতে পারতাম… বা ''যদি শুধু''), দুঃখ বা বিষণ্ণতা (বন্ধুকে হারিয়ে) এবং রাগ (এমন কী ঘটনা ঘটল যাতে লোকটাকে আত্মহত্যা করতে হল)।

যখন কোনও মানুষের আত্মহত্যার পিছনে কাজ বা কাজের চাপকে দায়ী করা হয়, তখন তার ফলাফল অনেক সুদূরপ্রসারী হয়। আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির সহকর্মী ও দলের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে এমন আবেগ দেখা দেয় যার ফলে তাদের কাজকর্মের উপর তার কুপ্রভাব পড়ে। অধিকাংশ সময়ে অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে নানা গুজব ছড়ায় এবং কেন এমন ঘটনা ঘটল তা নিয়ে মানুষের মনে কত কল্পনা বা আন্দাজ করা শুরু করা হয়। এই সবের ফলে কর্মচারীদের নৈতিকতা এবং সংস্থার ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।  

আত্মহত্যা পরবর্তী গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা?

এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সেই সব শোকাতুর মানুষকে মানসিক দিক দিয়ে সান্ত্বনা বা চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করা হয় যাদের প্রিয়জন বা কাছের মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। অধিকাংশ সময়ে আত্মহত্যাকারীর পরিবার বা বন্ধুদের ক্ষেত্রেই এই সাহায্য করা হয়ে থাকে। আত্মহত্যার পিছনে যে কারণই থাকুক না কেন, একজন আত্মহত্যাকারীর সহকর্মীর উপরেও এই ঘটনার মারাত্মক প্রভাব পড়ে।

একটি সংস্থার শোকাতুর কর্মচারী, কর্তৃপক্ষকে আত্মহত্যা-পরবর্তী সময়ে যেমন মানসিকভাবে চাঙ্গা বা সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় , তেমন আবার এর মধ্যে দিয়ে অন্য আর একটি আত্মহত্যা প্রতিরোধ করারও উদ্দেশ্য থাকে। কাছের মানুষের আত্মহত্যার ফলে অন্যান্য শোকগ্রস্ত মানুষের মধ্যে আত্মহত্যা করার ঝুঁকি খুব বেশি থাকে। আত্মহত্যা-পরবর্তী গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থার লক্ষ্য হল:

১. সংস্থার কর্মচারীর মৃত্যুর বিষয়ে ঠিকঠাক তথ্য তুলে ধরা এবং মৃত্যু নিয়ে সীমাহীন গুজব ছড়ানো বন্ধ করা বা ভুলভাল তথ্য না দেওয়া।

২. শোকাতুর কর্মচারীদের সান্ত্বনা দেওয়া এবং তাদের মনে আত্মহত্যাজনিত আতঙ্ক দূর করতে সাহায্য করা। এই সাহায্য ওই সংস্থায় বা অফিসে আর একটি আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে পারে।

৩. আত্মহত্যার সঙ্গে সম্পর্কিত কলঙ্ক দূর করা।

৪. কর্মচারীদের স্বাভাবিক মানসিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করা, তাদের সুস্থ করে তুলে দায়িত্বপালনে সক্ষম করা।

এই সব কারণে কোনও সংস্থা বা অফিসে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে আত্মহত্যা-পরবর্তী গ্রহণীয় ব্যবস্থা খুবই কার্যকরী এবং গুরুত্বপূর্ণ।

কোনও সংস্থায় বা অফিসে আত্মহত্যা-পরবর্তী গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা আত্মহত্যা রুখতে একটি আদর্শ ব্যবস্থা হওয়া উচিত। সংস্থার কর্তৃপক্ষ বা মানবসম্পদ বিভাগ একযোগে মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করে সংস্থার কর্মচারীদের আত্মহত্যা রোখার বা আত্মহত্যার পদক্ষেপ করা থেকে দূরে রাখতে পারে। কোনও সংস্থার কাছে এই ব্যবস্থার গুরুত্ব খুব কম বা নাও থাকতে পারে। এতদসত্ত্বেও, এই ব্যবস্থা কোনও সংস্থা বা অফিসের কর্তৃপক্ষ এবং কর্মচারীদের কাছে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে খুবই অপরিহার্য ব্যবস্থা এবং এর সাহায্যে কর্মচারীদের মধ্যে আত্মহত্যাজনিত আতঙ্কও দূর করা যায়।

বিপর্যয়ের মোকাবিলা সংক্রান্ত ব্যবস্থা

আত্মহত্যা-পরবর্তী গ্রহণীয় পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে একটি সংস্থা বা অফিস বিপর্যয় বা বিপদের মোকাবিলার জন্য খুব তাড়াতাড়ি কয়েকজনকে নিয়ে একটা দল তৈরি করতে পারে। এই দলের সদস্যদের (এর মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ, কর্তৃপক্ষ বা অন্যান্য বিভাগও থাকে) একটা আত্মহত্যার খবর শোনার পর নিজেদের কী ভূমিকা এবং দায়িত্ব পালন করতে হবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকে। এই পরিকল্পনায় বিপর্যয়ের সময়ে কী কী নিয়ম মেনে চলতে হবে সে সম্পর্কে স্পষ্টভাবে লেখা থাকে। আত্মহত্যা-পরবর্তী সময়ের পরিকল্পনায় মূলত থাকে:

  • এমন একজন মানুষ থাকে যে মৃত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে

  • এমন একজন সদস্য থাকবে যে আত্মহত্যাকারী কর্মীর কাছের বন্ধু বা তার সহকর্মীদের কাছে সঠিক তথ্য জানাবে

  • এমন একজন সদস্য থাকবে যে সংবাদমাধ্যম বা মিডিয়ায় আত্মহত্যা সংক্রান্ত উপযুক্ত তথ্য প্রকাশ করবে

  • এই পরিকল্পনার মাধ্যমে সংস্থায় কর্মরত অন্যান্য কর্মচারীদের কাছে ঠিকঠাক তথ্য তুলে ধরে তাদের পাশে থাকার ব্যবস্থা করে (সংস্থার কাউন্সেলর বা অন্য মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা এই পরিকল্পনার অর্ন্তভুক্ত)।

মৃত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে আলোচনার পরে একটা সংস্থা তার কর্মচারীর মারা যাওয়ার খবর বাইরে প্রকাশ করতে পারে। প্রায়শই সামাজিক কলঙ্কের ভয়ে আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা মৃত্যুর কারণ বাইরে জানাতে চায় না। এক্ষেত্রে একটা সংস্থা পরিবারের ইচ্ছেকেই মেনে চলে। মৃত্যু সংক্রান্ত কতটা তথ্য বাইরে আনা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে সংস্থার কর্তৃপক্ষ মৃত ব্যক্তির পরিবারের মতামতকেই গুরুত্ব দেয়।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতো আত্মহত্যার তথ্য বাইরে প্রকাশ করার জন্য একটা সংস্থার উচিত 'হু' বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আত্মহত্যাজনিত ঘটনা বাইরে জানানোর জন্য লিখিত নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে চলা:

  • আত্মহত্যা বিষয়ক উত্তেজনাপূর্ণ ভাষা ব্যবহার না করা বা আত্মহত্যার সমস্যার সমাধান করা যেত কিন্তু করা গেল না, এমন কিছু বিষয় আলোচনা না করা

  • কীভাবে আত্মহত্যা করেছে আত্মহত্যাকারী তা বর্ণনা না করা

  • আত্মহত্যার ছবি বা ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার না করা

  • আত্মহত্যার ফলে শোকাতুর মানুষকে সান্ত্বনা বা সমবেদনা জানানো

  • আত্মহত্যার মতো সংবেদনশীল ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া

  • এমন তথ্য দেওয়া যাতে অন্যান্য কর্মীরা সাহায্য পেতে পারে

এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ হল, মৃত্যু সংক্রান্ত খুঁটিনাটি তথ্য পরিবারের লোক ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে আলোচনা না করা, যদি না তেমন কোনও গুরুতর কারণ থাকে। সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ না করাই ভালো। এতে পরিবারের গোপনীয়তা রক্ষা করা যায় এবং তার সঙ্গে মৃত ব্যক্তির অন্যান্য সহকর্মীরদের জীবনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা সম্ভব। এর আরও একটা গুরুত্ব রয়েছে। তা হল, একজনের আত্মহত্যার পিছনে অন্য কাউকে দোষ না দেওয়া, যাতে তার মনে হতে পারে যে হয়তো তার জন্যই কেউ আত্মহত্যা করল।

সংস্থার পক্ষ থেকে তার কর্মচারীদের একথাই জোর দিয়ে বোঝানো উচিত যে, আত্মহত্যার পিছনে কখনো একটা কোনও নির্দিষ্ট কারণ থাকতে পারে না। এটা খুবই দুঃখজনক এবং জটিল ঘটনা, যার পিছনে থাকে অনেক কারণ। আত্মহত্যার পরে মৃত ব্যক্তির কাছের মানুষ বা তার শোকাগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে আত্মহত্যার মতো দুঃখজনক খবর আদান-প্রদানের সময়ে সমবেদনা বা সান্ত্বনা থাকা অবশ্যই দরকার। আত্মহত্যাকারীর মৃত্যু নিয়ে গুজব যাতে না ছড়ায় এবং মৃত কর্মচারীর পরিবারের গোপনীয়তা যাতে বজায় থাকে সেদিকে নজর দেওয়া সংস্থার অন্যতম দায়িত্ব। এছাড়া ভিতরে এবং বাইরে মৃত্যু সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ করতে হবে বা বাদ দিতে হবে সে বিষয়ে কর্মচারীদের সতর্ক করাও একটা সংস্থার কর্তব্য। এমনকী, সোশ্যাল মিডিয়াতে কী করতে হবে বা কী করতে হবে না, সেবিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকাও একটা সংস্থার পক্ষে একান্ত দরকার।

হারানোর শোক

সংস্থায় কর্মরত আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির কর্তৃপক্ষ এবং সহকর্মীদের পারলৌকিক কাজে বা মৃত কর্মীর স্মরণ কাজে যোগদান করা অবশ্য কর্তব্য। এর ফলে অফিসের কর্মচারীরা একে অপরের সঙ্গে নিজেদের শোক দুঃখ ভাগ করে নিতে পারবে এবং তাদের মানসিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। সংস্থার পক্ষ থেকে আত্মহত্যার পরে যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে মৃত কর্মীর মৃত্যু নিয়ে কোনও বদনাম না ছড়ায় বা আত্মহত্যার ঘটনাটি নিয়ে অযথা উত্তেজনা না হয়। মৃত ব্যক্তির জীবন এবং মৃত্যুর মধ্যে একপ্রকার সচেতনভাবে পৃথকীকরণের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাটিকে। সংস্থার কর্তৃপক্ষ অন্যান্য কর্মচারীকে আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে দুঃখ বা শোক জ্ঞাপন করতে পারে। কিন্তু মৃত কর্মচারী কেন তার জীবন শেষ করে দিল তা নিয়ে কোনও মতামত প্রকাশ করা একটা সংস্থার পক্ষে সঠিক কাজ নয়।

যখন একটি সংস্থা আত্মহত্যার ঘটনায় সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গি দেখায়, তখন ওই সংস্থায় কর্মরত কর্মচারীরা খুব সহজেই তাদের মানসিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। এই সময়ে সংস্থা যদি মনে করে মৃত কর্মচারীর কোনও সহকর্মীর কাউন্সেলিং প্রয়োজন, তাহলে তারা তার ব্যবস্থা নিতে পারে। এবং সহকর্মীদের পাশে থেকে তাদের জীবনের নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারে।

সাহায্যের হাত বাড়ানো
আত্মহত্যার মতো বিপর্যয়মূলক ঘটনার মোকাবিলা করতে যারা যে দল কাজ করে তারা আত্মহত্যাকারীর সহকর্মী এবং বন্ধুদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে। শোকাতুর কর্মচারীদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে, তাদের হারানোর দুঃখকে বুঝতে পারা এবং তাদেরকে বোঝানো যে সব রকম সাহায্য করতে সংস্থা তৈরি। কর্মচারীদের কল্যাণের বার্তা তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং আত্মহত্যাজনিত কলঙ্ক দূর করা সংস্থার অন্যতম দায়িত্ব।
আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির সহকর্মীরা যদি মৃত কর্মীর পারলৌকিক কাজ বা স্মরণসভায় উপস্থিত হতে পারে তাহলে তাদের সহকর্মীকে হারানোর দুঃখ কিছুটা কমতে পারে। বিপর্যয়ের মোকাবিলা করার জন্য যে দল থাকে তারা সেই সব কর্মচারীদের চিহ্নিত করবে, যাদের অতিরিক্ত সাহায্যের দরকার এবং তাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে যে তারা বড় কোনও বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়নি।
ভালো থাকার নিশ্চয়তা
আত্মহত্যা-পরবর্তী পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে একটি সংস্থা বিপর্যয় কাটিয়ে আবার নিয়মিত রুটিনে ফিরতে চায়। আমাদের প্রত্যেকেরই দুঃখ প্রকাশের ভিন্ন ভিন্ন পন্থা থাকে; কিছু মানুষ এর জন্য কয়েক সপ্তাহ সময় নেয়, আবার কেউ কেউ কয়েক মাস সময় নেয়। এই সময়ের মধ্যে, আত্মহত্যা-পরবর্তী পরিকল্পনা গ্রহণকারী দল সংস্থার কর্মীদের সাহায্যের দিকে নজর রাখে, যাতে তারা সহকর্মীকে হারানোর দুঃখ ভুলতে পারে বা তাদের মনের কষ্ট কমে।
এই বিষয়ে আরও তথ্য জানতে আপনি যোগাযোগ করতে পারেন এমপ্লয়ি অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রামের (ইএপি) সঙ্গে। নিমহানস্‌ সেন্টার ফর ওয়েলবিং এবং নিমহানসের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ কর্পোরেটজনিত মানসিক স্বাস্থ্য, আত্মহত্যা প্রতিরোধ এবং আত্মহত্যা-পরবর্তী সমস্যা নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করে। এই কর্মশালায় অংশ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করা যাবে এই ঠিকানায়— workshops.nimhans@gmail.com
এই ধরনের প্রবন্ধগুলির রচয়িতা হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিমহানসের এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান ড. গুরুরাজ গোপালকৃষ্ণ, নিমহানসের সাইকিয়াট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. প্রভা চন্দ্র , নিমহানসের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সীমা মেহেরোত্রা, নিমহানসের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের আরেক অধ্যাপক ড. পূর্ণিমা ভোলা এবং নিমহানসের সাইকিয়াট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেন্থিল কুমার রেড্ডি-র সক্রিয় সহযোগিতা।