জীবনে দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের পিছনে থাকতে পারে আপনার কাজ হারিয়ে ফেলার ঘটনা। কীভাবে এই সমস্যার মোকাবিলা করবেন আপনি?
একটি প্রতিষ্ঠান খরচ কমানোর জন্য তার কর্মরত কর্মীদের যে কখন চাকরি থেকে বরখাস্ত করবে, সে কথা কখনোই নিশ্চিত করে বলা যায় না। যদি আপনি কয়েক মাস আগে বা সদ্য আপনার চাকরি খুইয়ে থাকেন তাহলে স্বভাবতই আপনি মনমরা থাকবেন, হতাশা বা দিশাহারা বোধ করবেন।
আমরা অধিকাংশই কাজ দিয়ে নিজেদের মূল্যায়ন করার চেষ্টা করে থাকি এবং কাজই আমাদের জীবনের লক্ষ্য ও সাফল্যের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। ফলে আমরা যদি সহসা কাজ হারিয়ে ফেলি তাহলে তার প্রভাব যে জীবনে কতটা পড়তে পারে, তা আমাদের চিন্তার অতীত। সদ্য চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়ে আপনার মনের অবস্থা ঠিক কীরকম-
যদি ঘটনাটা হঠাৎ ঘটে যায় তাহলে আপনি অপ্রস্তুত বোধ করবেন এবং মনে খুব আঘাত পাবেন
নিজেকে অসহায় ভেবে কী করবেন তা বুঝে উঠতে পারবেন না
ভবিষ্যৎ এবং নিজের দায়িত্ব, কর্তব্য সম্পর্কে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়বেন
কীভাবে নিজের পরিবারকে কাজ হারানোর খবরটা দেবেন তা নিয়ে দিশাহারা বোধ করবেন এবং নতুন কাজ না পাওয়া পর্যন্ত আপনি কোনও দিশা খুঁজে পাবেন না
এই অবস্থায় কীভাবে আপনি মানসিক চাপ ও উদ্বেগের মোকাবিলা করবেন-
মনে রাখা জরুরি যে, নিজের কাজের মূল্যায়নের সঙ্গে বরখাস্ত হওয়ার বিষয়টির কোনও যোগ নেই। বরং এর পিছনে আরও অন্যান্য অনেক বিষয় জড়িত থাকে। এই ঘটনাটিকে নিজের চরম ব্যর্থতা বা কর্মদক্ষতার অভাব হিসেবে না দেখার চেষ্টা করা উচিত। মনে করতে হবে যে, আপনি একটি বিশেষ পরিস্থিতি ও পরিবেশের শিকার হয়ে পড়েছেন, যা নিয়ন্ত্রণ করা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। চাকরি খোয়ানোর পিছনে থাকতে পারে ব্যবসায়িক সমস্যা, পরিচালন ব্যবস্থার ত্রুটি বা আপনার জীবনে হওয়া এমন কোনও চাপ, যার ফলে আপনি কাজের ক্ষেত্রে আপনার সেরাটা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন প্রভৃতি কারণ।
নিজের শক্তি ও দক্ষতাগুলিকে স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি।
মনে রাখতে হবে চাকরি হারানোর বিষয়টা জীবনের একটা সামান্য ঘটনা এবং এর ফলে যে সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল, তা নয়। এই ঘটনা দিয়ে জীবনের সামগ্রিক ব্যর্থতাকে বিচার করা ঠিক নয়। বরং ভাবা উচিত যে, যে কাজ আপনি করছিলেন তা শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি সফল হল না। এর সঙ্গে এটাও মনে করতে হবে যে, আমাদের চারপাশে আমরা এমন অনেক কাজ করে থাকি, যাতে আমরা সফল হই।
চাকরি ছাড়া জীবনের অন্যান্য এমন ক্ষেত্রগুলিকে গুরুত্ব দিতে হবে যার মাধ্যমে আত্ম-পরিচয় এবং জীবনের লক্ষ্য স্থির থাকতে পারে। এই বিষয়ে অগ্রাধিকার পেতে পারে আপনার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, শখ অথবা এমন কোনও কাজ, যা অর্থবহ এবং প্রাসঙ্গিক।
বন্ধুদের প্রতি বিশ্বাস রাখা জরুরি। কারণ চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার ফলে আপনার উপরে পরিবারের অনুভূতিগত ও অর্থনৈতিক চাহিদাগত চাপের সৃষ্টি হতে পারে। ফলে পরিবারের লোকজনের থেকে আপনি পর্যাপ্ত সহযোগিতা নাও পেতে পারেন। এক্ষেত্রে এমন একজনকে বিশ্বাস করতে হবে যিনি কোনওরকম মতামত বা আদেশ-উপদেশ না দিয়ে আপনার পাশে থাকবেন। আর এই কাজ একজন প্রকৃত বন্ধুর পক্ষেই করা সম্ভব।
কাজ হারানোর ফলে যদি আপনি দিশাহারা বোধ করেন তাহলে আপনাকে অবিলম্বে একজন কাউন্সেলর বা হেল্পলাইনের সাহায্য নিতে হবে।
এই প্রবন্ধটি লিখতে প্রভূত সাহায্য করেছেন ব্যাঙ্গালোর নিবাসী কাউন্সেলর মল্লিকা শর্মা