কর্মক্ষেত্র

কর্পোরেট সেক্টরে মানসিক সমস্যাকে কীভাবে দেখা হয়

ললিতাশ্রী গণেশ

গোটা বিশ্বে মনোরোগ এক প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং অবিলম্বে কর্মক্ষেত্রেও এর গুরুত্ব বোঝার, এবং কর্মীদের মানসিক সুস্থতার দিকে মন দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

দেশের প্রথম সারির বনিকসভা অ্যাসোচ্যাম-এর রিপোর্ট (এপ্রিল,২০১৫তে ২১০জন কর্পোরেট চাকরিজীবীদের উপরে করা একটি সমীক্ষার ভিত্তিতে) অনুযায়ী ৪৮% কর্মী দুশ্চিন্তার কারণে ক্লান্তবোধ করলেও খুব কম ক্ষেত্রেই কোনও চিকিৎসকের পরমর্শ নিয়েছেন। অপটাম নামে একটি সংস্থা কর্মচারীদের সহায়তা জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকেন। ২০১৬য় করা একটি অনলাইন সমীক্ষায় তাঁরা লক্ষ্য করেন যে ৪৬% ভারতীয় কর্মীরাই কোনও না কোনও রকমের মানসিক চাপের শিকার।

প্রাক্তন সামরিক অফিসার মেজর বন্দনা শর্মা কর্পোরেট জগতে দু’টি দশক কাটিয়েছেন এবং মানব সম্পদ বিভাগ, রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, সাধারণ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালন বিভাগ সামলেছেন এবং স্টার্টআপ পিপল কনসাল্টিং নামে একটি সংস্থাও শুরু করেছেন। হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশনের ললিতাশ্রী গণেশ কে তিনি জানালেন যে কর্পোরেট জগৎ মানসিক স্বাস্থ্যকে কীভাবে দেখে এবং মানবসম্পদ বিভাগ কীভাবে কর্মক্ষেত্রগুলোকে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে পারে।


কর্মক্ষেত্রে কি মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়?

শুধু কর্মক্ষেত্রেই নয়, আমাদের সমাজেও মানসিক স্বাস্থ্যকে এখনও কুণ্ঠার চোখে দেখা হয়। লোকে এই নিয়ে কথা বলতে ভয় পান কারণ তাঁরা মনে করেন যে তাহলে সমাজে তাঁদেরকে আলাদা চোখে দেখা হবে। বিশেষ করে তাঁদের ঘনিষ্ট লোকজন যেমন বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীরা হয়ত নেতিবাচক, বিষন্ন বা জটিল কোনও আলোচনা এড়িয়ে যাবে। ফলে তাঁরা নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে যেতে থাকেন যাতে কেউ তাঁদেরকে ভুল না বোঝেন।

কর্মক্ষেত্রে কি মনোরোগের সুত্রপাত হতে পারে?

কিছু কিছু সমস্যা যেমন অবসাদ, দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ নিঃসন্দেহে কর্মক্ষেত্রে মাথাচাড়া দিতে পারে। এর পেছনে কাজের জায়গায় সহযোগিতা  পাওয়া, মনের কষ্ট কাউকে বলার সুযোগ না পাওয়া, মেজাজি ম্যানেজার, সংস্থায় প্রচলিত বদভ্যাস যেমন অতিরিক্ত কাজের চাপ যার ফলে শারীরিক অবসাদ ও বেহিসেবি কাজের বণ্টনের মত কারণ থাকতে পারে। এই সবের ফলে কর্মীদের উপরে অহেতুক চাপ সৃষ্টি হয় যা তাঁদেরকে মানসিক অসুস্থতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। এই জন্য ম্যানেজারদের  যেমন দায়িত্ব হল সমান ভাবে সবাইকে কাজ দেওয়া তেমনই মানবসম্পদ বিভাগের দায়িত্ব হল এই বিষয়গুলিকে ক্রমাগত চোখে রাখা।

আমি এই রকম অনেক কেসে দেখেছি যেখানে কর্মীরা বেশি রোজগারের লোভে অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন এবং নিজেদের স্বাস্থ্যের মোটেই যত্ন নেন না। দুর্ভাগ্যবশত পরিস্থিতি হাতের বাইরে না যাওয়া পর্যন্ত সংস্থার কেউ বিষয়টি নিয়ে মাথাই ঘামাননি।

কাজের জায়গায় সুস্থতা বজায় রাখতে কী করা উচিৎ?

বিবেক সম্পন্ন যে কোনও কাজের জায়গায় সহমর্মিতা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিচালন গোষ্ঠী বা ম্যানেজমেন্ট টিমের দায়িত্ব হল কর্মীদেরকে ভাল রাখা, যাতে তাঁরা স্বীকৃতি আর সাহায্যের ভরসায় কাজের গুণমান বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই জন্য কিছু সংস্থা যেমন ভারতে টাটা, ফ্লিপকার্ট, অ্যামাজন‌ এবং বিশ্ব দরবারে গুগল, ফেসবুক, বিসিজি, বেইন অ্যান্ড কোম্পানি আছে যাঁদের মূল লক্ষ্যই হল কর্মীদের সাথে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং কর্মীদের দিকে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া যাতে কাজের সার্বিক উন্নতি হয়।

মানবসম্পদ বিভাগ কীভাবে কর্মক্ষেত্রগুলোকে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে পারে?

কর্মীদের মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে মানবসম্পদ বিভাগের ভূমিকা খুবই গুরত্বপূর্ণ।

  • অফিসে একটা স্বচ্ছ ও খোলাখুলি ভাবে কথা বলার পরিস্থিতি রাখা যাতে কর্মীরা তাঁদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।

  • কর্মীদের জন্য বিশ্রাম ও বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা এবং নানারকম মজার কাজ যেমন গানবাজনার সুযোগ দেওয়া যাতে তাঁদের সৃজনশীলতা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।

  • সদ্য মা বা বাবা হয়েছেন এরকম কর্মীদের সুবিধার্থে বাচ্চাদের দেখাশোনা করার ব্যবস্থা (ক্রেশ জাতীয় সুবিধা থাকলে মা-বাবারা এক বিশাল দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হন) আর প্রার্থনা করার জন্য একটি ঘর বরাদ্দ রাখতে পারলে ভাল।

  • অনেক সংস্থাই তাঁদের কর্মীদের জন্য দিনরাত স্বাস্থ্যকর ও সুষম আহারের ব্যাবস্থা রাখেন, যার ফলে কর্মীরা সময় মত খাবার খেতে পারেন।

  • এছাড়া কর্মীদের শরীর সুস্থ্য রাখতে জিম, জুম্বা, যোগব্যায়াম, রোমাঞ্চকর ক্রিয়াকলাপের আয়োজন করলে তাঁদের সবাইকে একসাথে এবং অভিন্ন হয়ে কাজ করতে শেখানো যায়।

প্রাক্তন সামরিক অফিসার মেজর বন্দনা শর্মা একজন পুরস্কারপ্রাপ্ত কর্পোরেট গুরু টেডেক্স বক্তা। অন্ট্রাপ্রনর বন্দনা স্টার্টআপ পিপল কনসাল্টিং নামে একটি সংস্থাও শুরু করেছেন যেখানে তিনি তরুণ প্রজন্ম স্টার্টআপদের বৈচিত্র্য সংস্কৃতি নিয়ে পরামর্শ দেন।