বর্ণনা: অতীতের মানসিক আঘাত যেন আপনার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ জীবনের গুণমানকে প্রভাবিত না করে

বর্ণনা: অতীতের মানসিক আঘাত যেন আপনার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ জীবনের গুণমানকে প্রভাবিত না করে

প্রাথমিক পর্যায়েই পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিস‌অর্ডারের চিকিৎসা করানো উচিৎ

অঞ্জনা আর তাঁর স্বামী দীনেশ মনোবিদের কাছে যান। দীনেশ জানান যে কোন চিকিৎসকের কাছে যেতে ওরা সঙ্কোচ বোধ করছিলেন এই ভেবে যে ওদের সমস্যার সমাধান আদৌ কেউ করতে পারবেন কি না। অথচ ওরা সহ্যের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছেন আর তাই চেষ্টা করে দেখতে চান যে এই সমস্যার কোন নিস্তার আছে কি না।

অঞ্জনা বলেন যে ৪ মাস আগে ঘরে ডাকাতির ঘটনা ঘটার পর থেকে উনি রাতে ঘুমোতে পারেন না এবং মানসিকভাবে নিজের পরিবারের থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছেন। অঞ্জনা স্বীকার করেন যে ওই ঘটনার আলোচনা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য উনি সমস্ত পারিবারিক অনুষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন ।

প্রথম দিকে যখন উনি রাতে ঘুমোতে পারতেন না বা ঘুমিয়ে পড়লে দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে উঠতেন, তখন তাঁর মনে হতো এইগুলো বাড়িতে ডাকাত ঢোকার ভয়াবহ আকস্মিকতার প্রতিক্রিয়া। দুর্ভাগ্যবশত মানসিক চাপ সময়ের সাথে বাড়তেই থাকে।

তাঁর মনের মধ্যে ডাকাতদলের ঘরে ঢুকে ওনাকে মারধোর করার ছবিগুলোর সবসময় পুনরাবৃত্তি হতে থাকে। সিনেমা দেখার সময় ওই ধরনের দৃশ্য উনি সহ্য করতে পারেন না। এগুলো দেখলে উনি প্রচণ্ড ভাবে ঘামতে আরম্ভ করেন আর টিভি বন্ধ করে দেন। এই ঘটনা ঘটার আগে অবধি যে বিনোদন কাজগুলিতে আনন্দ পেতেন এখন সেইসবের প্রতি অরুচি তাঁকে আরও বেশি ঘাবড়ে দিয়েছে। তাঁর স্বামীর চিন্তা যে অঞ্জনা নিজেকে সমস্ত পরিবারের থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছেন।

অঞ্জনা ডাক্তার কে জানান যে তাঁর মনে হচ্ছে উনি আস্তে আস্তে পাগল হয়ে যাচ্ছেন। কোন কিছু সঠিকভাবে মনে রাখতে পারছেন না, সহজে রেগে যাচ্ছেন, যে কোন আওয়াজে চমকে উঠছেন। দীর্ঘ সময় ধরে রাতে ভালো করে না ঘুমানোর ফলে সবসময় ক্লান্ত অনুভব করছেন। তাঁর মনে হতে আরম্ভ করেছে যে পৃথিবীটা বিপজ্জনক জায়গা।

অঞ্জনার সব কথা শুনে আর কিছু পরীক্ষা করে ডাক্তার এই নির্ণয়ে পৌঁছান যে অঞ্জনা পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিস‌অর্ডারে ভুগছেন। উনি ওদের দুজনকে এই সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারে বোঝান এবং চিকিৎসা পদ্ধতির বিষয়ে জানান। ডাক্তার অঞ্জনাকে আশ্বস্ত করেন যে এই সমস্যা অনেকের মধ্যেই দেখা যায় এবং প্রাথমিক পর্যায়েই পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা করানো উচিৎ। ডাক্তার অঞ্জনার চিকিৎসা শুরু করে দেন এবং ওষুধ খাওয়ার সাথে থেরাপিস্টের সঙ্গে সমস্যার উপাচারের জন্য আলোচনা (কাউন্সেলিং) করার পরামর্শ দেন।

পরের এক বছর চিকিৎসা চলাকালীন অবস্থায় অঞ্জনার মনে হল উনি আগের চেয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। পরিবারের সবার সাথে আবার মেলামেশা করতে শুরু করলেন। এখন তাঁর আর আগের মতো ক্লান্ত এবং উদ্দেশহীন লাগে না। অঞ্জনাকে সুস্থ হয়ে উঠতে দেখে দীনেশের খুব ভালো লাগছে। কিছু সময় পর থেরাপির আর প্রয়োজন রইল না তাঁর। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ধীরে ধীরে ওষুধ খাওয়াও বন্ধ করে দিতে পারলেন অঞ্জনা।

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় বিভিন্ন রোগীর অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এই কাল্পনিক বর্ণনাটি বাস্তব পরিস্থিতি বোঝানোর জন্যে তৈরি করা হয়েছে। এটি কোনও ব্যক্তিবিশেষের অভিজ্ঞতা নয়।

Related Stories

No stories found.
logo
হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন
bengali.whiteswanfoundation.org