কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর প্রেক্ষাপটে একাকীত্বকে বোঝা

কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর প্রেক্ষাপটে একাকীত্বকে বোঝা

এই সময় একা লাগা স্বাভাবিক। সক্রিয়ভাবে নিজেকে ব্যস্ত রাথার উপায় খোঁজার মাধ্যমে এই অনুভূতি নিয়ন্ত্রিত করা সম্ভব

একাকীত্ব একটি সাধারণ অভিজ্ঞতা যা অনেক সময় মানুষের অনুভূতিকে সরাসরি প্রভাবিত করে। কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর ফলে একাধিক লকডাউন হয়েছে যার কারণে আমাদের সামাজিক মেলামেশা কমে গিয়েছে এবং আমাদের জীবনে এমন পরিবর্তন এসেছে যা আমরা আগে কল্পনাও করতে পারিনি।

এই দূরত্ব অনিচ্ছাকৃত এবং এতে একাকীত্ববোধ এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে তা মানুষের শারীরিক ও মানসিক কল্যাণকে প্রভাবিত করছে। হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশনের আরতি কান্নান টরোন্টোয় বসবাস করা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ওমার বাজ্জার সাথে কথা বলে জানতে চেয়েছেন যে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মানুষের একাকীত্বের অভিজ্ঞতা কেমন হয় এবং এর সাথে মোকাবিলা করার উপায় কী।

Q

আমি নিজের পরিবারের থেকে দূরে অন্য একটি শহরে একা থাকি। এই পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব আমার জন্য খুবই কষ্টকর হয়ে উঠেছে কারণ আমাকে সারাদিন একা কাটাতে হচ্ছে। এই অবস্থায় আমি নিজের মানসিক আর অনুভূতিগত স্বাস্থ্যের যত্ন কীভাবে করব?

A

নিজের যত্ন নেওয়া এই সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবনে এই প্রথম আমাদের হাতে এতটা সময় রয়েছে। আমাদের এই সময়ের সদব্যবহার করা উচিত নিজেদের যত্ন এমনভাবে করে যা একইসাথে করতে ভাল লাগবে এবং ফলপ্রসূ হবে। সেটা বাড়িতে ব্যায়াম করা হতে পারে অথবা আয়েস করে চা বা হট চকলেট খেয়ে হতে পারে। যা করতে ভাল লাগে সেটা করার এটাই সঠিক সময়, বিশেষ করে যদি আপনার মনে হয় যে নিজের এনার্জির পুরোটা আপনি কাজে লাগাতে পারছেন না।

Q


সামাজিক দূরত্বের ফলে আমার মনে হচ্ছে যেন আমার জীবনে নতুন কোনও কিছুই আর ঘটছে না। এমন কিছু ঘটার সম্ভাবনাও নেই। এই পরিস্থিতিতে আমার কী কিছু করার আছে?

A

একঘেয়ে লাগা সামাজিক বিছিন্নতার একটি কুপ্রভাব এবং আমাদের মনে হতে পারে যে আমাদের জীবনে কিছুই ঘটছে না। এর ফলে আমাদের উদ্বেগ এবং মেজাজ প্রভাবিত হতে পারে কারণ “আমাদের নিজেদের চিন্তার সাথে একা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে”। নতুন সিনেমা, শো বা গেমস নিয়ে চর্চা করার এটাই শ্রেষ্ঠ সময়। এমন অনেক ভার্চুয়াল গেমস আছে যা আপনি অন্যদের সাথে খেলতে পারেন। নতুন কোনও আক্টিভিটি করতে পারেন, অনলাইন ক্লাসে যোগ দিতে পারেন বা আপনার মনের মতো কোনো কাজ করলে ফল ভাল হবে।

Q

নিজের সম্প্রদায়ের সাথে জুড়ে থাকা আমার ভাল থাকার জন্য জরুরী এবং আমার মনে হচ্ছে যেন আমি সম্প্রদায় থেকে বাদ পড়েছি। এর সাথে আমি কীভাবে মানিয়ে নেবো?

A

বাড়ির বাইরে না বেরিয়েও কমিউনিটির সাথে জুড়ে থাকা সম্ভব। সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা সেইসব হাসপাতাল বা প্রথম সারির সংগঠনদের আর্থিকভাবে সাহায্য করতে পারি যারা এই মহামারীর সাথে লড়াই করে চলেছেন। আমরা নিজেদের প্রতিবেশীদের মেসেজ করে বা ফোন করে খোঁজখবর নিতে পারি। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা এমন খবর শেয়ার করতে পারি যা অন্যদের কাজে লাগতে পারে। সম্প্রদ্রায় এবং নিজের সামাজিক পরিচিতির সাথে জুড়ে থাকার নানা উপায় রয়েছে।

Q

মানুষের সংস্পর্শের অভাব আমাকে এতটাই ব্যথিত করছে যে আমার কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এটা কি স্বাভাবিক? এটা কি আমি কাটিয়ে উঠতে পারব?

A

হিউম্যান কন্টাক্ট বা মানুষের সংস্পর্শের অভাব অনুভব করা একেবারেই স্বাভাবিক। আমরা তো সামাজিক প্রাণী। এইভাবেই আমাদের বিবর্তন হয়েছে। সমাজচ্যুত হয়ে একা চলতে থাকা আমাদের ধাত নয়। মন কেমন করা, কান্না পাওয়া খুবই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, বিশেষ করে তাদের ক্ষেত্রে যাদের কোয়ারেন্টাইন-এর সময় একা থাকতে হচ্ছে। লকডাউন যখন আর থাকবে না তখন এটা আমরা কাটিয়ে উঠবো। কিন্তু এই সময় আমরা যেটা করতে পারি সেটা হলো (যদি এমনটা করা সম্ভব হয়) সক্রিয়ভাবে নিজেদের প্রিয়জনের সাথে যতটা সম্ভব যোগাযোগ বজায় রাখা। এতে মনের একাকীত্ব অনেকটাই কমবে।

Q


আমার বরাবরই মনে হতো যে আমার ব্যক্তিত্ব অন্তর্মুখী। এই পরিস্থিতিতে আমার এতটা কষ্ট হচ্ছে দেখে আমি নিজেই চমকে গিয়েছে। এটা কী প্রত্যাশিত? আমার কী করা উচিত?

A

অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষদের পক্ষেও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার মধ্যে থাকা সহজ নয়। এমন লোকেরা কিছুটা সময় একা কাটানো পছন্দ করেন নিজেদের সোশ্যাল ব্যাটারি আর এনার্জি রিচার্‌জ করার জন্য। এর মানে এই নয় যে তারা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা বাড়িতে আবদ্ধ হয়ে থাকা পছন্দ করেন। সবচাইতে ভাল হয় যদি ভার্চুয়াল উপায়ে পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখা যায়। মেসেজ, ইমেল বা ফোন – মাধ্যম যাই হোক না কেন, সবার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখাটাই হলো মোদ্দা কথা। আমরা নিজেদের সুবিধা এবং পছন্দ মতো যোগাযোগ মাধ্যম বেছে নিতে পারি এবং সেটা ব্যবহার করে নিজেদের প্রিয়জনদের সাথে জুড়ে থাকতে পারি।

Q


আমার অনুভূতি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যদের লকডাউনে কাটানো জীবন নিয়ে আমার মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে যে তাদের জীবনে কত রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটছে আর আমি প্রত্যেকটা দিন গুণে গুণে কাটাচ্ছি। আমি জানি যে আমরা সবাই একই পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি কিন্তু আমার খুব একা লাগে। আমার কী করা উচিত?

A

সোশ্যাল মিডিয়া খুবই মজার জায়গা। আমরা শুধু অন্যদের জীবনের ভাল দিকগুলো দেখতে পাই। হতেই পারে যে সারাদিনে তাদের জীবনে মাত্র ১০ মিনিট ধরে কোনও রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটেছে এবং তারা শুধু ওইটুকুই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত করেছেন। দেখে মনে হতেই পারে যে তাদের জীবনে কত কিছু ঘটছে কিন্তু এমনটা নাও হতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের সম্পূর্ণ জীবনের প্রতিচ্ছবি নয় এবং আমরা ওখানে শুধু ততটুকুই জানাই যতটা সুন্দর। যদি সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে মানসিক অস্থিরতা বেড়ে যায় তাহলে সেগুলো ব্যবহার করা কমিয়ে দিয়ে ভাল থাকার জন্য আপনি নিজের যত্নের দিকে মনোনিবেশ করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন
bengali.whiteswanfoundation.org