মানসিক রোগের ক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তির মানে কী?
মানসিক রোগের ক্ষেত্রে নিরাময়ের মানে হল সেরে ওঠা এবং এমন পরিবর্তন যার ফলে ব্যক্তি তার মানসিক সুস্থতা এবং ভাল থাকার বোধ আবার ফিরে পেয়ে আগের মতো করে জীবনযাপন করতে পারে। কিন্তু অজানা কিছু কারণের ফলে মানসিক রোগের কিছু লক্ষণ আবার দেখা দিতে পারে যা নিরাময়ের পথে বাধা সৃষ্টি করে। স্কিৎজোফ্রেনিয়া এবং বাইপোলার ডিসঅর্ডার-এর মতো গুরুতর মানসিক রোগের ক্ষেত্রে আজীবন পরিচর্যার প্রয়োজন থেকেই যায় এবং এই রোগগুলির ক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা খুব বেশি। তবে পুনরাবৃত্তি সমস্যার ধরণ এবং রোগ কতটা গুরুতর তার ওপর নির্ভর করে।
অবসাদের মতো সাধারণ মানসিক রোগের ক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তির মানে হতে পারে কাজ করার ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং অনুপ্রেরণা বা সামাজিক মেলামেশা বাধিত হওয়া। গুরুতর মানসিক রোগের ক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তির মানে হতে পারে দৈনন্দিন জীবনযাপন সাংঘাতিকভাবে প্রভাবিত হওয়া, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, বিভ্রান্তি বা অলীক ধারণা অথবা মারমুখো হয়ে ওঠা।
পুনরাবৃত্তির মানে কী?
নিরাময়ের পরে আবার লক্ষণ দেখা দেওয়াকে পুনরাবৃত্তি বলা হয়। পুনরাবৃত্তি ধাপে ধাপে হয় এবং প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তির ধরণ আলাদা, মানে কিছু লক্ষণ যা প্রত্যেকবার দেখা দেয়। এমনটা যদি ব্যক্তির সাথে একবার ঘটে থাকে তাহলে লক্ষণগুলির বিষয়ে সচেতনতার মাধ্যমে তাকে সাহায্য করা সম্ভব এবং পরিচর্যাকারী তার সাথে মিলে যথাযথভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন অথবা সঠিক সময়ে সাহায্য নিতে পারবেন।
পুনরাবৃত্তি কেন ঘটে?
ওষুধ বা ওষুধের পরিমাণ বদলানো হলে বা হঠাৎ করে ওষুধ বন্ধ করে দিলে পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। মানসিক রোগ রয়েছে এমন ব্যক্তি হিসেবে যদি আপনার মনে হয় যে ওষুধ বা ওষুধের পরিমাণ বদলানো হচ্ছে তাহলে সবথেকে ভাল হয় আপনার মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের থেকে জেনে নেওয়া যে এর ফলে কোনও পরিবর্তনের বিষয়ে আপনার সচেতন থাকা উচিত কী না। আপনার ব্যবহার বা চিন্তাভাবনায় যদি কোনও পরিবর্তন লক্ষ্য করেন তাহলে তাঁর সাথে যোগাযোগ করুন। পরিচর্যাকারীর খেয়াল রাখা উচিত যে ওষুধ বদলানোর ফলে তিনি ভাল বোধ করছেন কী না এবং এই নিয়ে তার চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন।
নেশা করা, মাদক দ্রব্য বা মদের কারণেও পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। চাকরিতে পদোন্নতি, বিয়ে, গর্ভাবস্থা বা সন্তানের জন্ম বা চাকরি চলে যাওয়া বা প্রিয়জনের মৃত্যুর ফলে দেখা দেওয়া মানসিক চাপের ফলেও এমন হতে পারে।
পুনরাবৃত্তির পূর্বাভাস কি পাওয়া যায়?
পুনরাবৃত্তির পূর্বাভাস কয়েক দিন বা সপ্তাহ আগে থেকে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বা তার পরিচর্যাকারীর চোখে পড়তে। এই পূর্বাভাসগুলি হল ব্যক্তির চিন্তাভাবনায়, ব্যবহার বা ধারণায় পরিবর্তন ঘটা।
ঘুমে ব্যাঘাত
বিচ্ছিন্নতা
ক্ষুধা সংক্রান্ত পরিবর্তন
অস্বস্তি বোধ করা বা শান্ত থাকতে না পারা
চিন্তিত বা বিরক্ত বোধ করা
নিজের চেহারা এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর না দেওয়া
মনোনিবেশ না করতে পারা বা ভুলে যাওয়া
(অবসাদের ক্ষেত্রে) অকারণ ব্যথা বেদনা
পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে সাহায্যের পরিকল্পনা
পরিচর্যাকারী হিসেবে আপনার জেনে রাখা উচিত যে নিরাময়ের পরেও মানসিক রোগের লক্ষণ আবার দেখা দিতে পারে। রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তার চিকিৎসকের সাথে মিলে আপনি ছক তৈরি করতে পারেন। পুনরাবৃত্তির প্রস্তুতির আপনি এইভাবে নিতে পারেন -
গোঁড়ার দিকের/ পরিবর্তনের বিশিষ্ট সংকেত – পরিচর্যাকারীরা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ঘটা ভাবনাগত, ব্যবহারগত বা অনুভুতিগত বিশিষ্ট পরিবর্তন চিহ্নিত করতে পারেন – তিনি কি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি খিটখিটে হয়ে রয়েছেন? ঘুমের ক্ষেত্রে কি চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন ঘটেছে? পরিচর্যাকারী লক্ষণের তীব্রতা এবং তা কত ঘন ঘন ঘটছে সেটা লিখে রাখতে পারেন।
পুনরাবৃত্তি নিয়ে আলোচনা করুন – রোগে আক্রান্ত বক্তি যদি পরিচর্যাকারীর উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হন তাহলে দুজনেরই পুনরাবৃত্তি নিয়ে আলোচনা করাটা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তি যদি মোডারেট বা হাই ফাংশনিং হন তাহলে পরিচর্যাকারী তার সাথে গোঁড়ার দিকের লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করতে পারেন এবং পরিস্থিতির সাথে মোকাবিলা করার যথাযথ পরিকল্পনা করতে পারেন।
ওষুধের দিকে নজর রাখুন – তা সেটা ডোজ, ওষুধের পরিবর্তন বা কতবার নিতে হবে যাই হোক না কেন। এতে আক্রান্ত ব্যক্তি এর ফলে ঘটা পরিবর্তনগুলির বিষয়ে সচেতন থাকবেন। পরিচর্যাকারী চিকিৎসকের সাথে কথা বলে একটি অ্যাকশন প্ল্যান-ও তৈরি করতে পারেন।
মানসিক চাপ বৃদ্ধির কারণগুলির প্রতি সচেতন থাকুন –যদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনে কোনও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটতে চলেছে, সেটা ইতিবাচকই হোক না কেন, পরিচর্যাকারীর সেই বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত এবং ব্যক্তির সাথে আলোচনা করা উচিত যে লক্ষণগুলি কীভাবে নিয়ন্ত্রিত করা হবে।
পুনরাবৃত্তির পর সেরে ওঠা
পুনরাবৃত্তির পর সেরে ওঠার পর্ব চ্যালেঞ্জিং হতে পারে এবং সেই সময় পরিচর্যাকারীকে তাকে সমর্থন জানতে হবে এবং ধৈর্য রাখতে হবে। পুরোপুরি সেরে ওঠার আগেই যদি এমনটা ঘটে থাকে তাহলে পুনরাবৃত্তির ফলে ব্যক্তির অনুপ্রেরণা এবং আত্মমর্যাদা বোধ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পরিচর্যাকারী রূপে আপনি তাকে আশ্বস্ত করতে পারেন যে আপনি তার পাশে রয়েছেন। আপনি যদি মানিসকভাবে পরিশ্রান্ত বোধ করেন তাহলে এই বিষয়ে কথা বলা জন্য একজন থেরাপিস্টের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। পরিচর্যাকারী এবং রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মনে পুনরাবৃত্তি নিয়ে যা যা সংশয় রয়েছে সেইগুলো মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করে নেওয়া উচিত।
রেফারেন্স –
সিস্টেম টু এইড রিকাভারি বুকলেট, সাউথওয়েস্ট হেলথকেয়ার মেন্টাল হেলথ সার্ভিসেস, অস্ট্রেলিয়া
নিমহান্সের সাইকিয়াট্রিক রিহ্যাবিলিটেশন সার্ভিসেস বিভাগের সহকারি প্রোফেসর ডঃ কৃষ্ণা প্রসাদ এবং মুম্বাই-এর সাইকিয়াট্রিস্ট ডঃ দয়াল মিরচন্দানির থাকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে।