মানসিক অসুস্থতার জন্য নির্দিষ্ট যোগাসন
সাইকিয়াট্রিক ডিস্অর্ডার বা মানসিক বিকারের ক্ষেত্রে যোগাসনের যে একটা বড় ভুমিকা আছে তা অনেক আগে থেকেই জানা, যেহেতু ডাক্তাররা স্ট্রেস্ ডিস্অর্ডার সামলাতে বহুকাল ধরে যোগের সাহায্য নিয়েছেন। যদিও, শেষ দুই দশক ধরে যোগের এই ভুমিকার পেছনে বৈজ্ঞানিক রাস্তা ও আধুনিক গবেষণা, যোগাসনের ক্ষেত্রে নবজাগরণ ঘটিয়েছে বলা যেতে পারে।
যোগাভ্যাস, একজন মানুষের শারীরিক ও মানসিক কর্মক্ষমতার উন্নতির কারণ বলে পরিচিত। মনবিজ্ঞানে কিছু কিছু অসুস্থতা, যেমন অবসাদ, উদ্বিগ্নতা, অনিদ্রা এই সব রোগের জন্য যোগাসনকে একমাত্র বা সাহায্যকারী চিকিৎসা পদ্ধতি বলে সফলভাবে ব্যবহার করা হয়। কিছু কিছু মানসিক অসুস্থতা যেমন স্কিৎজোফ্রেনিয়া, বাচ্চাদের অ্যাটেনশন্ ডেফিসিট হাইপার-অ্যাক্টিভিটি ডিস্অর্ডার এবং বার্ধক্যজনিত সমস্যার চিকিৎসায় যোগাসন খুবই উপযোগী বলে দেখা গেছে।
যোগাভ্যাসের ফলে অবসাদের রোগীর ব্যবহারে পরিষ্কার উন্নতি, স্কিৎজোফ্রেনিয়ার রোগীর ক্ষেত্রে মানুষের আবেগকে বোঝার ক্ষমতার উন্নতি, বয়স্কদের ক্ষেত্রে স্মৃতি শক্তি, ঘুম ও জীবন যাত্রায় উন্নতি লক্ষ্য করা যায়।
নিয়মিত যোগাভ্যাস ফলে ‘স্ট্রেস্ হরমোন’ কর্টিসল-এর পরিমাণ কম নিঃসৃত হয় আর ‘কাডল্ হরমোন’ অক্সিটসিন-এর পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ব্রেনের প্লাস্টিসিটির মাপকাঠি যেমন ব্রেন ডিরাইভড্ নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (বি ডি এন্ এফ্) বেড়ে যায়। যার ফলে মস্তিস্কের অবক্ষয় আটকানো যায়, এমনকি বয়স্কদের ক্ষেত্রে, মস্তিস্কের স্মৃতি শক্তির অংশ বা হিপোক্যাম্পাস-এর পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। একজন সুস্থ মানুষের নিউরো ইমেজিং স্টাডিতে দেখা গেছে যে, ‘ওম্’ মন্ত্রের জপ মানুষের মনের যে অংশ আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে সেই অংশের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়; যা থেকে বোঝা যায় যে, এই মন্ত্রের জপ করলে আবেগের বহিঃপ্রকাশ অনেকটাই কমিয়ে মানুষকে শান্ত করে তোলে।
শারীরিক অবস্থার ওপর যোগাসনের প্রভাব
ওপরে, মানসিক বিকারে যোগাসনের সাহায্যে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় তা দেখানো হয়েছে।
যদিও, যোগকে রোগীর নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করতে গেলে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়। এর মধ্যে একটা হল যে, বিভিন্ন স্কুলে বিভিন্ন পদ্ধতিতে যোগাভ্যাস শেখানো হয়। এর সাথে পারম্পরিক যোগ-সাহিত্য ও আধুনিক চিকিৎসা-জনিত রোগ নির্ণয় পদ্ধতিতে যোগাভ্যাসের যে সকল উপকারিতার কথা আলোচনা করা হয়েছে তার সাথে সামঞ্জস্য বা মিল খুঁজে পেতে আসুবিধা দেখা যায়।
গোঁড়া যোগাভ্যাসকারী ও বিশেষজ্ঞরা যোগাভ্যাসকে খুবই পবিত্র ও আধ্যাত্মিক জীবনের অঙ্গ বলে বর্ণনা করেছেন আর তাঁরা মানসিক অসুস্থতার জন্য যোগকে ব্যবহার করার পক্ষপাতী নন। যদিও, প্রমাণভিত্তিক বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞান চায় একটা নির্দিষ্ট বিকারে একটা নির্দিষ্ট বা কতগুলি যোগআসনের কার্যকারীতা নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষার মাধ্যমেই যথাযথভাবে যাচাই করতে। বেশী সংখ্যক লোকের ওপর সব থেকে বেশী মাত্রায় উপকারীতা লাভ করার জন্য চিকিৎসক ও যোগ বিশেষজ্ঞদের এই সব পরীক্ষা-পদ্ধতি অবশ্য গ্রহণীয়।
নিমহ্যান্স ইন্টিগ্রেটেড সেণ্টার ফর্ যোগা এই বিষয়ে অনেক উদ্যোগ নিয়েছে যেখানে সাইকিয়াট্রিস্ট, নিউরোসায়েন্টিস্টরা যৌথ উদ্যোগে কাজ শুরূ করেছেন স্বামী বিবেকানন্দ যোগা অনুসন্ধান সংস্থান ও নিউ দিল্লীর মোরারজি দেশাই ন্যাশানাল ইন্স্টিটিউট অফ্ যোগার (ভারত সরকারের আয়ুষ বিভাগের অন্তর্গত একটা প্রতিষ্ঠান), যোগাসন বিশেষজ্ঞদের সাথে। এর ফলেই বিভিন্ন মানসিক বিকারে যেমন অবসাদ, বার্ধক্যজনিত সমস্যা, স্কিৎজোফ্রেনিয়া এই সব রোগীর সার্বিক উন্নতির জন্য উপযোগী যোগআসনের মডিউল-এর উদ্ভাবন ও তার বৈধতা প্রমাণিত হয়েছে। এটা শুধুমাত্র একটা সূত্রপাত, আরও এই ধরণের প্রয়াস, অর্থাৎ চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা, যৌথভাবে নিউরো সাইকিয়াট্রিক ডিস্অর্ডারে আক্রান্ত রোগীদের উপকারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এখনও যে অনেকটা পথ চলার বাকী।
ডাঃ শিবরাম ভরম্বল্লী নিমহ্যান্স ইন্টিগ্রেটেড সেণ্টার ফর্ যোগা-র উপদেষ্টা এবং নিমহ্যান্সের সাইকিয়াট্রি বিভাগের অতিরিক্ত অধ্যাপক