কর্মচারীদের সাহায্যের জন্য নেওয়া ব্যবস্থায় কেন থাকে আত্মহত্যা প্রতিরোধের বিষয়

কর্মচারীদের সাহায্যের জন্য নেওয়া ব্যবস্থায় কেন থাকে আত্মহত্যা প্রতিরোধের বিষয়

একটা কার্যকরী আত্মহত্যা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় সাধারণত কয়েকটি জানার বিষয় থাকে এবং একটা সংস্থার পক্ষে এই ব্যবস্থাটিকে একান্ত আবশ্যক বা প্রথা হিসেবে মান্য করা প্রয়োজন।

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে মানসিক চাপ ক্রমশ বেড়ে চলে। কর্মক্ষেত্র এখন আত্মহত্যা প্রতিরোধের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হয়ে উঠেছে। আত্মহত্যা প্রতিরোধের উপর  লিখিত চারটি প্রবন্ধের মধ্যে এই দ্বিতীয় প্রবন্ধে শ্রীরজ্ঞিতা জেউরকার দেখিয়েছেন, কীভাবে একটা সংস্থা আত্মহত্যা প্রতিরোধ করে এবং কর্মচারীদের মূল্যবান জীবন রক্ষা করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। অধিকাংশ কর্মক্ষেত্রে এমপ্লয়ি  অ্যাসিসট্যান্স প্রোগ্রাম (ইএপি) অর্থাৎ কর্মচারীদের সাহায্যার্থে নেওয়া ব্যবস্থা বা কর্মচারীদের শরীর-স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এই ব্যবস্থা মূলত সংস্থার কর্মচারীদের চিকিৎসা ক্ষেত্রে সাহায্য করার জন্য নেওয়া হয়। মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ব্যবস্থা বা আত্মহত্যা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা কর্মচারীদের সাহায্যার্থে নেওয়া পরিকল্পনার অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাজের জায়গায় এখন এত বেশি মানসিক  চাপ, তার ফলে যাতে কর্মচারীরা বুঝতে পারে যে, তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটিও রয়েছে। এই কারণে এই পরিকল্পনা করা হয়। মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন কয়েকটি সংস্থা রয়েছে, যেখানে এই বিষয়টা ইচ্ছাধীন নয়, বরং বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। এই ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে যাতে ঝুঁকির সম্ভাবনা বা গভীর তাৎপর্য থাকে:  

  • সংস্থার চরিত্রগত অবস্থান: সংস্থায় কী ধরনের এবং কোন পরিবেশে কাজকর্ম হয়? কতখানি মানসিক চাপের মধ্যে কর্মচারীরা কাজ করে? তাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজ করতে গিয়ে কতখানি ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয়?

  • কর্মচারীদের ব্যক্তিগত বিষয় সম্পর্কে নানা তথ্য: কোথা থেকে তারা কোম্পানিতে চাকরি করতে এসেছে? কোম্পানিতে কাজ করতে গিয়ে তাদের সবকিছুর সঙ্গে কতখানি মানিয়ে নিতে হচ্ছে (নিজের শহর, পরিবার ছেড়ে দূরে থাকা প্রভৃতি)? তাদের শক্তি ও দুর্বলতাগুলি কি কি?

  • সংস্কৃতিগত এবং জাতিগত বিভেদ বা পার্থক্য: এমন কয়েকজন কর্মচারী কি রয়েছেন, যাদের নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে? এমন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় যার জন্য তারা স্বচ্ছন্দ ও স্বস্তি বোধ করতে পারে?

প্রতিটি সংস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে আত্মহত্যা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে একে প্রথাসিদ্ধ ব্যবস্থা বলে মনে করা যুক্তিযুক্ত।

কর্মক্ষেত্রে আত্মহত্যা রোধের চেষ্টা

কেন কোনও সংস্থা আত্মহত্যা রোধের জন্য ব্যবস্থা নেবে?

আপনি বাঁচাতে পারেন আপনার সহকর্মীর জীবন

কর্মচারীদের আত্মহত্যার বিরুদ্ধে মোকাবিলা করতে শেখা

বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ মতো কর্মচারীদের সাহায্য করার জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাতে আত্মহত্যা প্রতিরোধের বিষয়টা খুব দক্ষতার সঙ্গে পরিকল্পনা করতে হয়। এই পরিকল্পনার কতগুলো নির্দিষ্ট ক্ষেত্র রয়েছে:

১. কলঙ্ক দূর করা

মানুষের মনে যখন কলঙ্কের বোধ জাগে, তখন সেই লোকের চারপাশে থাকা মানুষজনকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে হয়। যাতে যে মানুষটি সমস্যায় ভুগছে সে তার মনের কথা আরও পাঁচজনকে বলতে পারে এবং এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। আত্মহত্যা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় কলঙ্ক বোধ মানুষের মনে খুব গভীরভাবে দাগ কাটে এবং নিজের সমস্যা অন্যকে বলার সময়ে মানুষ অত্যন্ত সাবধানী হয়ে পড়ে। এই কারণে যে কোনও আত্মহত্যা প্রতিরোধের ব্যবস্থায় মানুষের মনের কালিমা দূর করা প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।

কর্মচারীদের সাহায্যার্থে নেওয়া ব্যবস্থার অংশ হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্য বা আত্মহত্যা প্রতিরোধের পরিকল্পনায় যুক্ত থাকে মূলত মানুষের মনের কালিমা দূর করা ও তার সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার সমাধান করার বিষয়টি। আর এভাবেই এই  পরিস্থিতিতে মানুষের প্রয়োজনীয় সাহায্যের সম্ভাবনা বাড়ে। একটা সংস্থার স্বাস্থ্য সুরক্ষার পরিকল্পনায় মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ব্যবস্থার বেশ কিছু সুফল রয়েছে। সেগুলি হল:

  • কর্মচারীদের বাৎসরিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার বিষয়টিও অগ্রাধিকার পায় বা মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাও করা যায়। এই ব্যবস্থায় একজন মানুষ, (তিনি মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় আক্রান্ত হন বা আত্মহত্যাজনিত সমস্যার শিকার হন) যথার্থ সাহায্য পায়।

  • এই ব্যবস্থায় অফিসের মধ্যেই মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞদের সংস্পর্শে আসা যায়। সংস্থার কর্মীদের এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত করা যায় যে, তাদের প্রয়োজনে ডাক্তারের সাহায্য সবসময়ে পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে কর্মচারীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান করার জন্যও উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যে সম্ভব, সে বিষয়েও সংস্থার কর্মীদের আশ্বস্ত করা যায়।

  • কর্মচারীদের জন্য নেওয়া মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষাজনিত পরিকল্পনা তাদের দক্ষতা বাড়াতে, দুর্বলতা কমাতে এবং আত্মহত্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। আর এসব সমস্যার পিছনে যেসব মানসিক চাপ থাকে যেমন- কাজের চাপ, প্রতিযোগিতা, কর্মক্ষেত্রে ঝগড়াঝাঁটি, অশান্তি বা অন্যান্য সমস্যা, যা মানুষকে সুস্থ থাকতে দেয় না, সেগুলো দূর করতেও এই পরিকল্পনা খুবই কার্যকরী।

  • এ ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষার পরিকল্পনায় যে স্বচ্ছ গোপনীয়তা রক্ষার ব্যবস্থা থাকে, তাতে সংস্থার কর্মীদের নিরাপত্তা বোধ সুনিশ্চিত হয়।

  • মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার সঙ্গে শারীরিক সমস্যার খুব বড় ধরনের পার্থক্য নেই। চাকরিদাতারা চায় মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা যেমন কলঙ্ক দূর করতে এবং কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের চাঙ্গা করতে।

একটা সংস্থা তার কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা, যাতে তারা আক্রান্ত, তা সরাসরি জানানোর ক্ষেত্রেও তাদের উৎসাহ দিয়ে থাকে। এবং এই সমস্যা তারা কীভাবে কাটিয়ে উঠবে সে সম্পর্কেও তাদের সঙ্গে মতের আদান-প্রদান করে। এভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা যে কোনও নিষিদ্ধ বস্তু নয় এবং এই সমস্যায় আক্রান্তরা যে অন্যদের থেকে আলাদা নয়, সে কথাও একটা সংস্থা জোরের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

২. সংবেদনশীলতা বা অনুভূতিপ্রবণ ব্যবস্থা

কর্মচারীদের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস এবং ভরসা অটুট রাখার জন্য একটা সংস্থার বা অফিসের ম্যানেজার, দলের নেতা এবং উচ্চপদস্থ অফিসারদের মধ্যে সংবেদনশীলতা থাকা একান্ত জরুরি। এই ব্যবস্থা মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা নেয়, গোপনীয়তা রক্ষা করে এবং কালিমা দূর করতে সাহায্য করে।

যখন অফিসের বড় কর্তা বা ম্যানেজার সাধারণ কর্মচারীদের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষ করে আত্মহত্যার বিষয় নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেয়, তখন সাধারণ কর্মীরা অনেক নিশ্চিন্ত বোধ করে। আত্মহত্যার চিন্তা এবং প্রবণতা রুখতে ঠিক কী ধরনের সাহায্যের প্রয়োজন, সে বিষয়ে যখন খোলাখুলি আলোচনা হয়, তখন সংস্থার কর্মচারীরা তাদের নিজেদের সমস্যা কথা প্রকাশ্যে জানাতে আগ্রহী হয় এবং এ বিষয়ে কেউ যে তাদের উপর কোনও মতামত চাপিয়ে দেবে না, তা তারা বিশ্বাস করতে পারে।

৩. সচেতনতা বৃদ্ধি

মানসিক স্বাস্থ্য এবং আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন সংস্থায় নানারকম আলাপ-আলোচনামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর জন্য পোস্টার, ব্যানার, ভাষণ, আলাপ-আলোচনা, সিনেমা দেখানো বা অন্যান্য পরিকল্পনা করা হয়। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সংস্থার কর্মীদের খোলাখুলি আলোচনা করতেও উৎসাহ দেওয়া হয়।

আত্মহত্যা সম্পর্কিত চিরাচরিত সত্য বা প্রবাদের বদল ঘটাতেও এ ধরনের পরিকল্পনা খুবই উপযোগী। প্রবাদটি হল- যাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা থাকে তারা মনের দিক থেকে খুব দুর্বল ও তারা বাঁচতে চায় না। এই সম্পর্কে আরেকটা ভ্রান্ত ধারণা হল, যদি কোনও মানুষের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে তার  আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় রয়েছে কিনা, তাহলে তাকে আত্মহত্যা করতেই এগিয়ে দেওয়া হয়।

৪. মানসিক বিপর্যস্ত মানুষকে চিহ্নিত করা

মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞদের মতে, আত্মহত্যা কখনও হঠাৎ ঘটে না। সাধারণত মানুষের জীবনে এমন কিছু ঘটনা বা পর্যায় থাকে, যার থেকে তার মনে আত্মহত্যার চিন্তা জাগে। যদি সংস্থার কর্তৃপক্ষ এরকম মানসিক বিপর্যস্ত কর্মীকে চিহ্নিত করতে পারে তাহলে আত্মহত্যার হাত থেকে তাকে বাঁচাতে এবং তাকে ভালভাবে থাকতে সাহায্য করতে পারে।

কোনও সংস্থার মানসিক বিপর্যস্ত কর্মীদের চিহ্নিত করার কাজে সেই সংস্থার কর্তৃপক্ষ দ্বাররক্ষী হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে। একজন মানুষ, যিনি দ্বাররক্ষী হিসেবে থাকেন, তিনি মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞ নাও হতে পারেন। তবে মানসিক বিপর্যয় চিহ্নিত করার কাজে তার দক্ষতা থাকা একান্ত দরকার। এবং প্রাথমিকভাবে মানসিক বিপর্যস্তকে সাহায্য করতে এবং তাকে মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে পারে সংস্থার দ্বাররক্ষীরা। একটা সংস্থা তার কর্মচারীদের দ্বাররক্ষী হিসেবে প্রশিক্ষণ দিতে পারে এবং এমন এক পরিকল্পনা গড়ে তুলতে পারে যা বৃহত্তর ক্ষেত্রে সতর্কবার্তা হিসেবে মানসিক বিপর্যস্তদের সাহায্য করতে পারে। নিমহানস্‌-এর সেন্টার ফর ওয়েলবিং কর্মশালার আয়োজন করে কর্মীদের দ্বাররক্ষী হিসেবে প্রশিক্ষণ দেয়।

সহকর্মীদের সাহায্য করার জন্য দ্বাররক্ষীদের কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি:

  • দ্বাররক্ষীদের জন্য বাস্তব এবং সাহায্যকারী তথ্য: যদি দ্বাররক্ষীরা বোঝে যে তাদের সহকর্মীদের সাহায্যের দরকার, তাহলে তারা তখন কী করবে? কার কাছে তারা সে কথা জানাবে? সহকর্মীদের তারা কী ধরনের সাহায্য করবে?

  • দ্বাররক্ষীদের জন্য অন্যান্য কয়েকটি সম্ভাব্য তথ্য: দ্বাররক্ষীদের বাধ্য বাধকতাগুলি কী কী? দ্বাররক্ষীরা যখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাবে তখন তারা কী করবে? দ্বাররক্ষীদের জন্য কী ধরনের সাহায্য পাওয়া যাবে? দ্বাররক্ষীদের নিজেদের সীমাবদ্ধতাগুলি সম্পর্কে তাদের ধারণা থাকতে হবে কি?

৫. বিপর্যয় মোকাবিলা

বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য সংস্থার একটা নিজস্ব নীতি, আদবকায়দা বা সুপারিশ মতো পরিকল্পনা থাকা উচিত— যখন কোনও কর্মী বিপর্যস্ত হবে, তখন কীভাবে তাকে সাহায্য করতে হবে? যখন কেউ খুব দুর্বল থাকবে তখন তাকে সহায়তা করতে কী ধরনের পরিকল্পনা নিতে হবে? আত্মহত্যা ঘটলে কী করতে হবে?

৬. চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং উপযুক্ত পরিষেবা

যে কোনও মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা বা আত্মহত্যা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আংশিক সময় বা পূর্ণ সময়ের জন্য একজন মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। কারণ কর্মীরা তাদের দরকার মতো এই বিশেষজ্ঞের সঙ্গে নিজেদের সমস্যা নিয়ে পরামর্শ করতে পারবে। এই বিশেষজ্ঞ সাধারণত আলাপ-আলোচনার জন্যই থাকবেন যাতে কর্মচারীরা নিজেদের প্রয়োজনে ওই বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। সংস্থার কোনও দুর্বল বা মানসিক বিপর্যস্ত কর্মচারীকে চিহ্নিতকরণ এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ানোর ক্ষেত্রেও এই বিশেষজ্ঞের ভূমিকা অপরিসীম। সংস্থার কর্তৃপক্ষ চাইলেই তারা কর্মচারীদের সাহায্যের জন্য নেওয়া ব্যবস্থায় (ইএপি) মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

সংস্থার কর্মচারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য এবং আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য কর্তৃপক্ষ খুব পরিষ্কার ভাবে তথ্য বাইরে প্রকাশ করতে পারে ( এর জন্য পোস্টার বিলি বা বিজ্ঞপ্তি জারি করা যায়; আবার ম্যানেজার-কর্মচারী বা কর্মচারী-মানবসম্পদ বিভাগের পারস্পরিক আলোচনাও হয়)। এভাবে যে সব কর্মচারীদের মনে আত্মহত্যার চিন্তা দেখা দেয় তাদের সেই চিন্তা দূর করতে এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

৭. গোপনীয়তা সংক্রান্ত বিষয়

অনেক সময় কোনও সংস্থায় কর্মরত কর্মীদের সাহায্যের প্রয়োজন, কিন্তু তারা সেই সাহায্য চাইতে দ্বিধা করে। কারণ তাদের মনে ভয় থাকে যে, তাদের সমস্যার বিষয়টা কতটা গোপন থাকবে বা সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করা হবে, সেই ভেবে। আত্মহত্যা প্রতিরোধের পরিকল্পনায় যে বৈশিষ্ট্যগুলি থাকা উচিত, সেগুলি হল—

কর্মচারীদের বিষয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখা: সংস্থার কর্মীদের ব্যক্তিগত তথ্যগুলি কে জোগাড় করবে? কোন পরিস্থিতিতে তথ্যগুলি আদান-প্রদান করা যাবে? যদি পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, কোনও কর্মচারীর মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা বা তার মনে আত্মহত্যার চিন্তা দেখা দিচ্ছে, তাহলে তার চাকরির উপরে সেই সমস্যার প্রভাব কীভাবে মোকাবিলা করা হবে?

যথাযথ তথ্যের উপর ভিত্তি করে কর্মচারীদের আশ্বস্ত করা উচিত যে, সংস্থা ওই কর্মচারীর প্রতি যত্নশীল বা দায়িত্ববান। এবং তাদের আরও বলা প্রয়োজন যে, এই সমস্যাটিকে সংস্থার কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সংবেদনশীলতার সঙ্গেই বিচার করবে ও মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার জন্য অন্যদের থেকে তাদের আলাদা করে দেখা বা গণ্য করা হবে না। এই ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে সংস্থার কর্মীরা তাদের দরকার মতো সাহায্য চাইতে সক্ষম হবে।

৮. মানসিকভাবে দুর্বল কর্মীদের চিহ্নিত করার ব্যবস্থা

সংস্থার কর্মচারীদের মধ্যে দুর্বলতা প্রকাশের কয়েকটি ক্ষেত্র হল:

  • কর্মচারীদের কাজ করার ধরনের হঠাৎ পরিবর্তন (অর্থাৎ, কাজের দক্ষতা, সময়জ্ঞান বা গুণগত মানের অবনতি)

  • কর্মীদের মনে কাজ সম্পর্কে একটা ভয় জেগে ওঠা বা কাজের দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করা

  • যে সব কর্মচারীরা তাদের বাসস্থান ছেড়ে অন্য জায়গায় কাজ করতে আসে তাদের নতুন জায়গা বা কাজের পরিবেশ মানিয়ে নিতে খুব সমস্যা হয় এবং তাদের মনে নতুন কাজের পরিবেশ নিয়ে অনেক ভয় দেখা দেয়। অনেক কর্মচারী অর্থনৈতিক বা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বোধ করে। এই বিপর্যস্ততার পিছনে চাকরি সংক্রান্ত বিষয় জড়িত থাকতেও পারে।

  • এমন অনেক সংস্থা বা অফিস থাকে যেখানে কর্মীরা প্রতিনিয়ত এমন কিছু বিষয়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে যা তাদের মানসিক শক্তিকে দুর্বল করতে সক্ষম (যেমন - সশস্ত্র কর্মী বা নিরাপত্তা রক্ষীদের ক্ষেত্রে সবসময়ে হিংসার পরিবেশে থাকতে হয়), বা এমন অনেক ক্ষেত্র থাকে যা কর্মচারীদের আত্মহত্যার দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে (ফার্মাসিউটিক্যাল বা ওষুধের কোম্পানি অথবা এমন কোনও কাজের ক্ষেত্র, যেখানে ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়)। আত্মহত্যা  প্রতিরোধের পরিকল্পনা নেওয়ার সময় এই বিষয়গুলির দিকে নজর রাখা প্রয়োজন।

৯. পরিকল্পনার বাস্তব রূপায়ণ বা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা

বাস্তবে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া একান্ত দরকার। সেগুলি হল:

  • আত্মহত্যা রোধ করার উপায়গুলি তালিকাবদ্ধ করা

  • স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ বিভাগ বা অন্যান্য বিভাগের কর্মীদের নাম নথিবদ্ধ করতে হবে, যারা বাস্তবে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে দায়িত্ব পালন করবে

  • পরিকল্পনা রূপায়ণের বাৎসরিক সময়সীমা নির্ধারণ করা

  • সংস্থার প্রত্যেকটি বিভাগ যাতে স্বাধীনভাবে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে পারে তার জন্য নির্দিষ্ট সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা। যাতে বিপদে সময় কাগজ-কলম নিয়ে সময় নষ্ট না হয়

  • এমন এক ব্যবস্থা করতে হবে যার ফলে পরিকল্পনার ফলাফল খতিয়ে দেখা সম্ভব হয়: পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিক সময়ে কাজ করার নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং কাজের দক্ষতা বা কার্যকারিতা সম্পর্কে যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।

এই ধরনের প্রবন্ধগুলির রচয়িতা হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিমহানসের এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান ড. গুরুরাজ গোপালকৃষ্ণ, নিমহানসের সাইকিয়াট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. প্রভা চন্দ্র , নিমহানসের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সীমা মেহেরোত্রা, নিমহানসের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের আরেক অধ্যাপক ড. পূর্ণিমা ভোলা এবং নিমহানসের সাইকিয়াট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেন্থিল কুমার রেড্ডি-র সক্রিয় সহযোগিতা।

logo
হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন
bengali.whiteswanfoundation.org