ব্যায়াম এবং মানসিক সুস্থতা

ব্যায়াম এবং মানসিক সুস্থতা

শরীরচর্চা মনকে ভাল রাখে।

বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত ক্রীড়া মনোবিদ, ডাঃ চৈতন্য শ্রীধরের মতে, “নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে আমাদের মস্তিষ্কে ‘এন্ডোরফিন’ নিঃসরণ হয় যা দুশ্চিন্তা কমাতে ও মনমেজাজ ভাল রাখতে সাহায্য করে।” আমাদের কাছে সুস্থ শরীর মানেই কোনও অসুখ না থাকা। খুব কমজনই একই সাথে শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার প্রয়োজনীয়তা বোঝে। ব্যায়াম করলে যে শুধু আমাদের শরীর ভালো থাকে তাই নয়, আমাদের মনের উপরেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

‘স্পোর্টস মেডিসিন’ জার্নালে প্রকাশিত, ‘এক্সারসাইজ অ্যান্ড ব্রেন নিউরোট্রান্সমিশন’, নামে একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে যে নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে আমাদের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন এবং ডোপামিন নিঃসৃত হয়।  

শরীরে সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের বৃদ্ধি আমাদের মন মেজাজ খুব ভালো করে, ক্রোধ কমায়, এবং সামাজিক মেলামেশা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও সার্বিক ভাবে আমাদের খিদে, স্মৃতিশক্তি, যৌন ইচ্ছা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ঘুম ভালো হয় এবং মনঃসংযোগ বাড়ে, ফলে আপনার মধ্যে আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পায়।

নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীর মন দুটোই ভালো থাকে। কিন্তু আপনি কি জানেন যে নিয়মিত ব্যায়াম করলে সমস্ত রকমের মানসিক চাপ থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব? নীচে সেইরকমই কিছু উপকারিতা দেওয়া হল।

  • শারীরিক গঠন সুন্দর হলে দেখতে শুনতে সব দিক থেকেই ভালো লাগে।

  • নিজের জন্য একটা লক্ষ্য বানান যে আপনি প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট একটা সময় ব্যায়াম করবেন, আর সেটা পূরণ করলে দেখবেন নিজের উপরে বিশ্বাস বাড়বে।

  • নিজেকে কিছু একটাতে ব্যাস্ত রাখলে সব কিছু ইতিবাচক মনে হয় আর সহজেই নানারকম মানসিক চাপের মোকাবিলা করা যায়।

  • নিয়মিত বাইরে খেলেধুলো করলে নতুন লোকজনের সাথে মেশা যায়, ফলে মন মেজাজও ভালো থাকে।

এগুলি শুধুমাত্র ব্যায়াম করার সামান্য কিছু সুফল, আসলে ব্যায়াম আমাদের শরীরের সার্বিক বিকাশে সাহায্য করে। আমরা অনেকেই ব্যায়ামকে এড়িয়ে চলি কারণ সাধারণত ব্যায়াম বলতে আমরা বুঝি জিম’এ গিয়ে প্রচুর দৌড়ঝাঁপ করা। কিন্তু রোজ কিছুক্ষণ দৌড়ানো বা হাঁটাও আমাদের জন্য লাভদায়ক।

মন খারাপ হলে আমরা কখনো ভাবিনা যে ব্যায়াম বা যেকোনো কাজ করলে শরীর বা মন ভালো থাকবে, আমরা সব সময় উল্টোটা করি। একলা বসে মনকে আরও বিষণ্ণ করে তুলি। অথচ শারীরিক পরিশ্রমে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারলে, মন আপনা থেকেই ভাল হয়ে ওঠে। ডাঃ শ্রীধর অবধি এই কথাকে সমর্থন করেছেন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে ব্যায়াম মানুষকে তামাক, মদ বা অন্য জিনিসের নেশা থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করে। নেশার জিনিসের প্রতি লোভ পুরোপুরি কমিয়ে দেয়। যোগব্যায়ামের ফলে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা, যেমন দুশ্চিন্তা, দুঃখ, অনিদ্রা, স্কিৎজোফ্রেনিয়া এমনকি বার্ধক্য জনিত সমস্যা যেমন ডিমেনশিয়ার মোকাবিলা করা সম্ভব। শিশুদের ক্ষেত্রে নিয়মিত যোগাভ্যাস মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।

আজকাল উন্নত প্রযুক্তির জন্য আমাদের সব কাজ করা সহজ হয়ে গিয়েছে। আগেকার দিনে মানুষ অনেক বেশী পরিশ্রম করত। তাই তারা আমাদের মত অলস ছিল না। কাছেপিঠে যাওয়ার জন্য মোটরগাড়ি আছে, উঁচু বাড়িতে চলন্ত সিঁড়ি আছে, এমনকি আমাদের দাঁত মাজার ব্রাশও বিদ্যুতে চলে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে যে শুধু মানসিক শান্তি পাওয়া যায় তাই নয় বিভিন্ন মনোরোগকেও দূরে ঠেকিয়ে রাখা যায়। রোজ একটু হাঁটলেই যদি মন ভালো থাকে, তাহলে তার জন্যে একটু সময় বের করলে ভাল হয় না কি?

উদাহরণ স্বরূপ দৌড়বীরদের সম্পর্কে ডাঃ শ্রীধর বলেছেন, “যারা নিয়মিত দৌড়ান তাঁরা শুধু শারীরিক ভাবে সবল, মানসিক ভাবে সুস্থ এবং খুশীই থাকেন না, তাঁদের নিজেদের প্রতি বিশ্বাস, ভরসা, সব কিছু অর্জন করার শক্তি অনেক বেড়ে যায়। চলতি কথায় আমরা একে ‘রানার্স হাই’ বলে থাকি।”

Related Stories

No stories found.
logo
হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন
bengali.whiteswanfoundation.org