মেজাজ-মর্জির সমস্যা বা মুড ডিসঅর্ডারে ভোগা সঙ্গীর যত্ন কীভাবে নেবেন
কোনও মানুষের সঙ্গী যদি অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে তাহলে তা বেশ চাপের বিষয় হয়ে ওঠে। যদিও মানুষের মধ্যে মেজাজ-মর্জির সমস্যা আজকাল প্রাশয়ই দেখা যায়। মানুষের জীবনে তার কাছের সম্পর্কগুলোর প্রতি অবহেলা বা ঠিকঠাক মনোযোগ না দেওয়ার ফলে এইধরনের সমস্যা গড়ে ওঠে। এই সমস্যার স্বাভাবিক লক্ষণ, যেমন- পাঁচজনের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা, সামাজিক মেলামেশা কমিয়ে দেওয়া এবং দৈনন্দিন কাজকর্মের প্রতি আগ্রহের অভাব প্রভৃতি কারণে মানুষের সম্পর্কগুলো প্রশ্নের মুখোমুখি হয়।
একজন মানুষের জীবনে এই ঘটনার ক্ষতিকারক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ কোনও মানুষ যাকে ভালোবাসে তার যদি এই সমস্যা দেখা দেয় তাহলে তাদের জীবন থেকে আনন্দ হারিয়ে যায় এবং মানুষ তখন নিজের অজান্তেই তার চাওয়া-পাওয়াগুলোকে অগ্রাহ্য করতে শুরু করে। মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় আক্রান্ত সঙ্গীর দেখভাল করা ক্রমশ অত্যন্ত জটিল হয়ে ওঠে। যখন কোনও একজন মানুষের সঙ্গী মানসিক অসুস্থতার শিকার হয় তখন সেই সঙ্গী তার নিজের যত্ন নিতে পারে না। সেক্ষেত্রে তার সঙ্গীকে সেই দায়িত্ব নিতে হয়। তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে
আসতে হয়।
এই বিষয়ে নীচে এমন কয়েকটি কৌশলের কথা আলোচনা করা হয়েছে যা এই পরিস্থিতিতে খুবই সাহায্যকারী।
সমস্যাকে অস্বীকার না করা
এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় যে অসুস্থ মানুষের সঙ্গীটি প্রথমে সমস্যাকে অগ্রাহ্য করে এবং সমস্যার অস্তিত্বকে স্বীকার করতে চায় না। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু যদি সমস্যাকে তাড়াতাড়ি স্বীকার করে নেওয়া যায় এবং নিজের অসুস্থ সঙ্গীর জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে তাতে সুফল মেলা সম্ভবপর হয়।
সমস্যাকে অস্বীকার করার বদলে প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করার চেষ্টা করা এবং অসুস্থ সঙ্গীর সঙ্গে স্বাস্থ্যকর আলোচনা বজায় রাখা জরুরি। এভাবে সঙ্গীর প্রতি বিশ্বাস ও ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখা যায়। সঙ্গীকে খোলাখুলি প্রশ্ন করার চেষ্টা করা উচিত, যেমন- ''আমি তোমার আচরণে ও মেজাজে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করছি। তুমি কি কিছু বুঝতে পারছ? সে বিষয়ে তুমি কিছু বলতে চাও কি?'' এভাবে সঙ্গীকে সাহায্য করাও যায় এবং তার প্রতি যত্নও নেওয়া যায়।
পরিস্থিতির মধ্যে নিজেকে যুক্ত করা
নিজের সঙ্গীর অসুস্থতার বিষয়টি ভালোভাবে বোঝা দরকার। অসুস্থতার ধরনটি কেমন হতে পারে সে বিষয়ে সচেতন থাকা এবং তার চিকিৎসার বিষয়ে ওয়াকিবহাল হওয়া জরুরি। এর ফলে সমস্যার মোকাবিলা সঠিকভাবে করা সম্ভবপর হয়। সম্পর্কের উপরে অসুস্থতার প্রভাব কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়েও সচেষ্ট হওয়া জরুরি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসুস্থতার লক্ষণগুলো একরকম বলে মনে হয়। তবে তার বহিঃপ্রকাশ প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা-আলাদা হয়। তাই সঙ্গীর অসুস্থতার নির্দিষ্ট লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। আর এজন্য ডাক্তার বা থেরাপিস্টের কাছে যাওয়ার সময়ে সঙ্গীর সঙ্গে আপনার বা আপনাদের থাকা একান্ত জরুরি।
নিজের ভালো লাগা বা আনন্দের প্রতি যত্নশীল হতে হবে
নিজের ভালো লাগে তেমন কাজ করতে হবে। কাজ থেকে একদিন ছুটি করে বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে যেতে হবে, সিনেমা দেখতে হবে। নিজের সঙ্গীর জন্য কিছু জায়গা ও সময় রাখাও প্রয়োজন।
নিজের সঙ্গে অন্যদের যুক্ত করা
পরিচর্যার দায়িত্ব অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হবে; এর ফলে নিজেকে আরও বেশি করে সময় দেওয়া যায় এবং নিজের কাঁধ থেকে দায়িত্বও কিছুটা কমানো যায়। সেই সঙ্গে অসুস্থ সঙ্গীও এটা জানবে যে তাকে সাহায্য করার জন্য তার পাশে অনেক মানুষ রয়েছে।
তাদের আনন্দ নষ্ট করার জন্য নিজেকে দায়ি না করা
মনে রাখতে হবে যে স্বাস্থ্যের কারণে তারা কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে তাদের অসুখ সারতে যে সময় লাগবে সে বিষয়েও ওয়াকিবহাল থাকা জরুরি। যদি কারও সঙ্গী বিষণ্ণ থাকে তাহলে নিজেকে দোষ দেওয়া ঠিক নয়। তাদেরকে সাহায্য করার জন্য তাদের সঙ্গে থেরাপিস্টের কাছে যাওয়াও প্রয়োজন এবং তাদের পছন্দের কাজ করতে তাদেরকে উৎসাহ দিতে হবে। কিন্তু তাদেরকে খুশি রাখার কাজটাকে যেন কখনোই বোঝা বলে মনে না হয়।
বিষয়টাকে ব্যক্তিগতভাবে না নেওয়া
অবসাদ মানুষের অনুভূতিগুলোর উপর প্রভাব বিস্তার করে। যদি তারা বোঝে যে তারা বিষণ্ণ হয়ে পড়েছে, তাহলে তা তাদের স্বাস্থ্যের জন্যই ঠিক নয়। তাই তারা যখন বিষণ্ণতার মধ্য দিয়ে দিন কাটাবে তখন তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা কমিয়ে দেওয়া জরুরি। এভাবে নিজের সঙ্গী ও নিজেকে সাহায্য করা যায়। এই পরিস্থিতিতে সঙ্গী প্রকৃতিগতভাবে বা স্বাভাবিকভাবে যা করতে পারে তাই তাকে করতে দেওয়া উচিত।
নিজের জন্য বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়া দরকার
রুগির যত্ন নিতে গিয়ে পরিচর্যাকারীদের স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়। এক্ষেত্রে যদি পরিচর্যাকারী হিসেবে আপনি দিশাহারা বোধ করেন তাহলে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে ভয় পাবেন না এবং ভেঙে পড়বেন না।
এই প্রবন্ধটি লেখার জন্য ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ডঃ রত্না আইস্যাকের সাহায্য নেওয়া হয়েছে।