বাইপোলার ডিসঅর্ডার: ভুল ধারণা এবং বাস্তব
ভুল ধারণা: মেজাজ পরিবর্তনের (মুড সুইং) আরেক নাম বাইপোলার ডিসঅর্ডার।
বাস্তব: মুড সুইং বা মেজাজ পরিবর্তন হল রোজকার জীবনে ঘটা নানা ঘটনার কারণে মেজাজ বিগড়ে যাওয়া, মন খারাপ লাগা, রেগে যাওয়া, খিটখিটে ভাব বা কোন ব্যাপারে উৎসাহিত বোধ না করা। এই ধরনের মেজাজ পরিবর্তন স্থায়ী নয়। কিন্তু বাইপোলার ডিসঅর্ডারের সঙ্গে যুক্ত মুড সুইং একেবারেই আলাদা ধরনের যা চরম পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনধারা এবং কার্যক্ষমতা কে প্রবলভাবে প্রভাবিত করে।
ভুল ধারণা: বাইপোলার ডিসঅর্ডার একটি বিরল সমস্যা।
বাস্তব: বাইপোলার ডিসঅর্ডার বিরল মানসিক সমস্যা নয়। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের ছয় কোটি মানুষ বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগছেন। ভারতের জনসংখ্যার ৩% মানুষ বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত।
ভুল ধারণা: ওষুধ বাইপোলার ডিসঅর্ডারের একমাত্র চিকিৎসা।
বাস্তব: ওষুধের সাহায্যে বাইপোলার ডিসঅর্ডারের উপসর্গগুলো আয়ত্তের মধ্যে রাখা যায় কিন্তু ওষুধ বাইপোলার ডিসঅর্ডারের একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি না। ডাক্তারদের মতে বাইপোলার ডিসঅর্ডারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে স্বাস্থ্য-পূর্ণ জীবনযাপন করা, মাদক এবং মদ সেবন না করা, যথেষ্ট সময় ধরে এবং নিয়ম করে ঘুমানো, নিয়মিত ব্যায়াম করা, আর মানসিক চাপ কে নিয়ন্ত্রণে রাখা নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার মতোই গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস।
ভুল ধারণা: বাইপোলার ডিস্অর্ডারে আক্রান্ত রোগী মুড সুইং নিয়ন্ত্রণের যথেষ্ট চেষ্টা করেন না।
বাস্তব: সচেতনতার অভাবে বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন যে মুড সুইং এমন কোনও উপসর্গ নয় যেটাকে রোগী চেষ্টা করলে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। এইধরনের অজ্ঞ জনেদের ধারনা যে বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত রোগী নিজে চেষ্টা করলেই নিজের মেজাজকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন এবং চেষ্টা না করার ফলেই মুড সুইং হয়। এই মানসিকতা পোষণ করা বেশীরভাগ মানুষ জানেন না যে বাইপোলার ডিসঅর্ডার একটি গুরুতর মানসিক ব্যাধি এবং এর জন্য চিকিৎসা প্রয়োজন।
ভুল ধারণা বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত রোগী সবসময় উন্মাদনা বা মানসিক অবসাদে ভোগেন।
বাস্তব বাইপোলার ডিসঅর্ডারের বেশি সংখ্যক রোগীর মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে কোন উপসর্গ লক্ষ করা যায় না এবং তাঁরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করেন। নিয়মিত ওষুধ সেবন আর থেরাপির সাহায্যে অনেক রোগীই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।
ভুল ধারণা বাইপোলার ডিসঅর্ডার শুধু রোগীর মেজাজের ওপর প্রভাব ফেলে।
বাস্তব বাইপোলার ডিসঅর্ডার শুধু ব্যক্তির মেজাজ নয়, তাঁর যুক্তি ক্ষমতা, স্ফূর্তি, একাগ্রতা, স্বাস্থ্য, নিদ্রা, খাদ্যাভ্যাস, যৌন তাড়না, আত্মমর্যাদা, ব্যক্তিগত সম্পর্ক, সবকিছুতেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।