অবসাদ: ভুল ধারণা এবং বাস্তব
ভুল ধারণা: ডিপ্রেশন বা অবসাদ একধরনের দুর্বলতা। এটি কোন রোগ নয়।
বাস্তব: ডিপ্রেশন দুর্বলতা বা আলস্য না। এটি একপ্রকারের গম্ভীর মানসিক সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। ডিপ্রেশন বা অবসাদ যে কোন মানুষের যে কোন বয়েসে হতে পারে।
ভুল ধারণা: অপুষ্টি আর দারিদ্রের সঙ্গে ডিপ্রেশনের কোন সম্পর্ক নেই।
বাস্তব: অপুষ্টি ডিপ্রেশনের একটি কারণ। শালীজাতীয় খাবার (কার্বোহাইড্রেট) শরীরে সেরোটোনিন এবং ট্রিপ্টোফ্যান রসায়ন সঞ্চারে সাহায্য করে যা সুস্থ থাকার জন্য দরকারি।
ভুল ধারণা: ডিপ্রেশন বা অবসাদ বংশগত এবং ডিপ্রেশনে ভোগা ব্যক্তিদের বিয়ে করা উচিৎ না।
বাস্তব: এই ধারনা কোন গবেষণা দ্বারা এখন অবধি প্রমাণিত হয়নি। ডিপ্রেশনে আক্রান্ত মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক বিবাহিত জীবনযাপন করা সম্ভব। তবে বিয়ের আগে ভাবী স্বামী বা স্ত্রী-কে এই সমস্যার কথা জানিয়ে দেওয়া উচিৎ।
ভুল ধারণা: ডিপ্রেশন বিশেষ ধরনের জীবন ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
বাস্তব: জীবনে ঘটা সব ধরনের ঘটনা থেকেই ডিপ্রেশন হবে এমন ভাবনার কোন যুক্তি নেই। সামাজিক অসহযোগিতা, তাচ্ছিল্য বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা যেমন হৃদরোগ, ক্যানসার, এইচ আই ভী, থাইরএড ইত্যাদি থেকে ডিপ্রেশনের সূত্রপাত হতে পারে।
ভুল ধারণা: অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ খেলেই ডিপ্রেশন সেরে যায়।
বাস্তব: ডিপ্রেশনের প্রাথমিক পর্যায়ে ওষুধ খেতে নাও হতে পারে। সাইকোথেরাপি বা কাউন্সেলিং-এর সাহায্যে ডিপ্রেশন আয়ত্তের মধ্যে রাখা সম্ভব।
ভুল ধারণা: আত্মহত্যার সঙ্গে ডিপ্রেশনের কোন সম্পর্ক নেই।
বাস্তব: প্রথমত আত্মহত্যার সঙ্গে জড়িত নানা ধরনের ভুল ধারনা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হওয়া উচিৎ। ডিপ্রেশনের চূড়ান্ত পর্যায়েই যে আত্মহত্যার কথা রোগীর মাথায় আসবে, এমন নয়। তাই রোগীর পরিবারবর্গ এবং বন্ধুবান্ধবদের সব সময় সজাগ এবং সতর্ক থাকতে হবে যাতে কথাবার্তা বা ব্যাবহারে সামান্যতম পরিবর্তনের দিকে লক্ষ্য রাখা হয়। রোগী কোন মারাত্মক পদক্ষেপ নেওয়ার আগেই যেন তাঁকে আটকানো যায়।
ভুল ধারণা: ডিপ্রেশনে আক্রান্ত বেশীরভাগ মানুষ কোন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেন।
বাস্তব: যদিও বেশি সংখ্যক ডিপ্রেশনের রোগী চিকিৎসার সাহায্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন, দুই-তৃতীয়াংশ রোগীই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে সঙ্কোচ বোধ করেন। এমনকি, যারা গভীরভাবে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত, তাঁরাও মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে চান না। অনেক রোগী এক দশক বা তাঁর বেশি সময় ধরে ডিপ্রেশনের সাথে একলা লড়াই করে তবেই বিশেষজ্ঞের কাছে যান। ডিপ্রেশনের রোগী যত তাড়াতাড়ি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন, সাইকো থেরাপি, ওষুধ এবং অন্যান্য পদ্ধতির সাহায্যে তত তাড়াতাড়ি ডিপ্রেশনকে আয়ত্তের মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব।