এডিএইচডি: ভ্রান্ত ধারণা এবং বাস্তব ঘটনা
ভ্রান্ত ধারণা - হাইপারঅ্যাকটিভ বাচ্চা মানেই মনে করা হয় যে সে এডিএইচডি-তে আক্রান্ত।
বাস্তব ঘটনা - যদি কোনও বাচ্চার মধ্যে এডিএইচডি-র লক্ষণ দেখা যায় তাহলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল একজন বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া। ইদানীং এডিএইচডি-র বিষয়টিকে খুব হালকা ভাবে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সত্যিটা হল, একজন বাচ্চার এডিএইচডি সমস্যা চিহ্নিত করতে হলে একজন চিকিৎসককে বাচ্চাটির জীবনের তিনটি ক্ষেত্র বা অবস্থানের দিকে নজর রাখতে হয়। সেগুলো হল- বাড়ি, স্কুল এবং সামাজিক ক্ষেত্র।
ভ্রান্ত ধারণা - এডিএইচডি দূর করতে ওষুধ একেবারে ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
বাস্তব ঘটনা - সাধারণত এডিএইচডি-র ওষুধগুলোর প্রভাব ছ'ঘণ্টা স্থায়ী হয়। এই সময়ের মধ্যেই তা একটি শিশুর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল দিতে পারে। তবে এই সমস্যার কার্যকরী চিকিৎসা হিসেবে নানারকমের ওষুধ এবং আচরণগত ও জীবনযাত্রাগত নিয়মকানুন অনুসরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ভ্রান্ত ধারণা - আমাদের সবারই এডিএইচডি রয়েছে।
বাস্তব ঘটনা - আমরা সবাই মাঝে মাঝে নিজেদের কম-বেশি অমনোযোগী এবং এলোমেলো বলে মনে করি। কিন্তু যাদের এডিএইচডি-র সমস্যা চিহ্নিত হয় তাদের মধ্যে এই সমস্যার ন'টি লক্ষণের মধ্যে কমপক্ষে ছ'টি লক্ষণ ফুটে ওঠে, যেমন- ভীষণ অস্থির হয়ে পড়া (হাইপারঅ্যাকটিভিটি), হঠকারিতা (ইম্পালসিভিটি) এবং অমনোযোগিতা (ইনঅ্যাটেনশন)। এর ফলে মানুষের জীবনের দৈনন্দিন রুটিনগুলি এলোমেলো হয়ে পড়ে। যেমন- সময়মতো কোনও কাজ শেষ করতে না পারা, যথেচ্ছভাবে জীবনযাপন করা প্রভৃতি।
ভ্রান্ত ধারণা - শুধুমাত্র বাচ্চাদেরই এডিএইচডি হতে পারে।
বাস্তব ঘটনা - এডিএইচডি সাধারণত ছোটবেলাতেই, বিশেষ করে সাত বছর বয়সের আগে ধরা পড়ে। একজন বাচ্চা যত বড় হতে শুরু করে তত তার মধ্যে অস্থিরতা এবং হঠকারিতা কমতে থাকে। কিন্তু অমনোযোগের সমস্যা থেকে যেতে পারে। কিন্তু বড়দের যখন এডিএইচডি সমস্যা হয় তখন তার আলাদা বিশেষত্ব থাকে।
ভ্রান্ত ধারণা - এডিএইচডি-র সঙ্গে অন্য কোনও মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার সম্পর্ক নেই।
বাস্তব ঘটনা - এডিএইচডি-তে আক্রান্ত বাচ্চাদের যদি সঠিক চিকিৎসা করা না হয় তাহলে পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। এই সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য সমস্যাগুলো হল- আচরণগত সমস্যা (কনডাক্ট ডিসঅর্ডার), মেজাজ-মর্জিগত সমস্যা (মুড ডিসঅর্ডার), মানসিক উদ্বিগ্নতা (অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার) এবং শেখার অক্ষমতা (লার্নিং ডিসএবিলিটি)।
(এই প্রবন্ধটি নিমহান্সের সাইকিয়াট্রি বিভাগের অধ্যাপক ডাক্তার টি শিবকুমারের দ্বারা পর্যালোচিত)