এপিলেপ্সি (মৃগী রোগ) এবং মানসিক স্বাস্থ্য
Santanu

এপিলেপ্সি (মৃগী রোগ) এবং মানসিক স্বাস্থ্য

Published on

এপিলেপ্সি বা মৃগী রোগ মানুষের মস্তিষ্কের একপ্রকার স্নায়ুতান্ত্রিক সমস্যা, যার ফলে একজন মানুষের মধ্যে বারবার খিঁচুনি হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য যথাযথ চিকিৎসা ও ওষুধ রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই সমস্যার ফলে একজন মানুষের জীবনে সামাজিক বিপর্যয় ঘটতে দেখা যায়। এই প্রসঙ্গে ব্যাঙ্গালোরের একজন নিউরোলজিস্ট বা স্নায়ুবিদ ডঃ এইচ ভি শ্রীনিবাস জানিয়েছেন, ''এপিলেপ্সিতে আক্রান্ত প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে চিকিৎসা এবং ওষুধ কার্যকরী ফল দেয়। সেই সঙ্গে তাদের মধ্যে প্রায় সবাই দীর্ঘ সময়ের জন্য খিঁচুনির হাত থেকে রেহাই পায়। কিন্তু বাকি ২০ শতাংশ মানুষ এর ফলে নানারকম সমস্যার শিকার হয়, যেমন- মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া, সেরিব্রাল পালসি বা কয়েক ধরনের মস্তিষ্কের আঘাত।''

এপিলেপ্সি ও মানসিক স্বাস্থ্য

এপিলেপ্সি এমন একধরনের সমস্যা যার ফলে মানুষের মধ্যে গুরুতর মানসিক অব্যবস্থা দেখা দিতে পারে। মৃগী রোগে আক্রান্ত মানুষের আত্মনির্ভরতা খুব কমে যায় এবং মানসিক উদ্বেগ ও অবসাদের মাত্রা বেড়ে যায়।

প্রথমবার যখন একজন মানুষের এপিলেপ্সি দেখা দেয় তখন তার মধ্যে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো প্রকাশ পায়-

  • মানসিক আঘাত, ভয়, দুঃখ বা অপলাপ

  • স্কুলে, কর্মক্ষেত্রে বা সামাজিক পরিবেশে এপিলেপ্সিতে আক্রান্ত হওয়ার ভয়

  • ভয়ের কারণে শিক্ষা বা কর্মক্ষেত্র থেকে দূরে থাকার মনোভাব

এই ভয়ের কারণে রুগির পরিচর্যাকারীদের মধ্যেও বিপর্যয় দেখা দেয়।

এই প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ হল যদি কোনও মানুষের মধ্যে মানসিক বিপর্যয়জনিত অসুস্থতা দীর্ঘ সময় ধরে দেখা যায় এবং এর ফলে তাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে তাদের অবিলম্বে মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া জরুরি।

মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত মোকাবিলা

প্রায়শই এপিলেপ্সি সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান অত্যন্ত কম থাকে বা এই ধরনের মানসিক অসুস্থতা যে চিকিৎসাযোগ্য সে বিষয়ে মানুষের মধ্যে অনেক ভুল ধারণা  থাকে। সেক্ষেত্রে রুগি ও তার পরিবারের এপিলেপ্সিজনিত বিপর্যয় মোকবিলার জন্য কয়েকটি সহজ উপায়ের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হল-

  • সমস্যাকে স্বীকার করা এবং বিশ্বাস করা যে ডাক্তারের কথামতো চিকিৎসা ও ওষুধ খেলে তা দীর্ঘ সময়ের জন্য কার্যকরী ফল দেয়

  • খেলাধূলা বা কিছু শারীরিক কসরতে অংশ নেওয়া যার ফলে নিজেকে সুস্থ ও
    ব্যস্ত রাখা যায়। কিন্তু সাঁতার কাটা, গাড়ি চালানো, মোটর রেসিং বা পাহাড়ে চড়ার মতো কাজকর্ম এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ এর ফলে জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

  • পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি। অ্যালকোহলের ব্যবহার সীমিত বা এড়িয়ে চলা প্রয়োজন

  • মানসিক বিপর্যয় মোকাবিলার পথ খুঁজে বের করা

  • নিয়মিত ওষুধ খাওয়া

এপিলেপ্সি বা মৃগী রুগির পরিচর্যাকারীদের জন্য সুপারিশ হল তারা যেন অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক না হয়ে ওঠে। বরং অন্যান্য রুগিদের মতোই এই সমস্যায় আক্রান্ত রুগিদের চিকিৎসা করা জরুরি।

সূত্র-

De Boer HM1, Mula M, Sander JW. The global burden and stigma of epilepsy. Epilepsy & behavior 2008; 12:540-546.

logo
হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন
bengali.whiteswanfoundation.org