স্পিচ ডিসঅর্ডার
স্পিচ ডিসঅর্ডার কি?
ভাষা জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও কথা বলতে গিয়ে শব্দ সাজাতে, গলার স্বরে বা স্বাভাবিক গতিতে বাক্যালাপ করতে যখন সমস্যা হয় তাকে স্পিচ ডিসঅর্ডার বলে।
মনে রাখবেন, স্পিচ ডিসঅর্ডার আর ল্যাঙ্গুয়েজ ডিসঅর্ডার এক না। প্রথমটায় শব্দের উচ্চারণে সমস্যা হয়, কিন্তু পরেরটায় ভাষা বুঝতে বা ব্যবহার করতে সমস্যা হয়।
স্পিচ ডিসঅর্ডার কত রকমের হয়
এপ্রাক্সিয়াঃ এই সমস্যাতে মস্তিষ্কের নির্দেশ অনুযায়ী মুখী মাংসপেশি, ঠোঁট এবং জিহ্বা কাজ করে না। ফলে কথা বলতে অসুবিধা হয়।
ডিসারথ্রিয়াঃ প্যারালিসিস অথবা নাকের সমস্যার জন্য কথা বলতে সমস্যা।
কোনটি স্পিচ ডিসঅর্ডার নয়?
কথা বলা শেখার সময় নতুন শব্দ শিখতে সময় লাগে। তখন নতুন শব্দ বলতে বাচ্চারা দেরী করে। তাঁকে স্পিচ ডিসঅর্ডার ভেবে জোরাজুরি করবেন না। তাতে তোতলামো এসে যেতে পারে।
স্পিচ ডিসঅর্ডারের লক্ষণ কি?
প্রত্যেক রোগীর ক্ষেত্রে, তাঁর অবস্থা অনুযায়ী, উপসর্গ আলাদা হয়। তাই ক্ষেত্রবিশেষে তা চিনতে সমস্যা হতে পারে। উপসর্গ খুবই সামান্য হলে এই সমস্যা নিজে থেকেই সেরে যায়।
শব্দভাণ্ডারে ঘাটতি, পড়তে সমস্যা, চাবাতে বা গিলতে সমস্যা হলেও কথা বলতে অসুবিধা হয়।
খুব ছোট বাচ্চা - ০-৫ বছর
চুপচাপ থাকে
সঠিক ক্রমে স্বরধ্বনি সাজাতে পারে না
কথা বলতে বলতে ধ্বনির স্পষ্ট উচ্চারণ করে না
কথা বলতে বলতে থেমে যায়। বাক্য গঠনে সময় নেয়
কঠিন শব্দ এড়িয়ে চলে
খাবার খেতে অসুবিধা
৫-১০ বছর বয়স
মুখ দিয়ে অসংলগ্ন আওয়াজ করে
স্পষ্ট বুঝতে পারে কিন্তু বলতে গেলে আটকে যায়
বড় শব্দ বা লম্বা বাক্য এড়িয়ে চলে
বাক্য সাজানো শুনতে একঘেয়ে লাগা
কথা বলতে গিয়ে একই উচ্চারণের ভুল বার বার করে
স্পিচ ডিসঅর্ডার কেন হয়?
গবেষকদের মতে, মুখের মাংসপেশিতে সমস্যা, ক্লেফট প্যালেট, কানের সমস্যা বা সেরিব্রাল পলসির জন্য এই রোগ হতে পারে।
রোগ নির্ণয়ের উপায়
একটা নির্দিষ্ট বয়সের আগে শিশুকে পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। কারণ পরীক্ষার জন্যে ডাক্তারের নির্দেশ বুঝতে পারাটাও জরুরি।
এই রোগের নির্ণয়ে নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে।
ডেনভার আর্টিকুলেশন স্ক্রিনিং এগজাম্পেল
আর্লি ল্যাঙ্গুয়েজ মাইলস্টোন স্কেল
ডেনভার ২
পি-বডি পিকচার ভোকাবুলারি টেস্ট, রিভাইজড এডিশন
শ্রবণশক্তির পরীক্ষা বা অডিওমেট্রি টেস্ট
স্পিচ টেস্টের সাহায্যে বাচ্চার কথা বলার ভঙ্গিমা এবং ইতিহাস পর্যালোচনা করা হয়
এ এ সি বা অগমেন্টিভ অ্যান্ড অল্টারনেটিভ কমিউনিকেশন: কম্পিউটার, আই প্যাড ইত্যাদির সাহায্যে কথা বলতে শেখানো হয়
চিকিৎসা পদ্ধতি
এই রোগের কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। শিশুর প্রতিক্রিয়ার ওপর বিচার করে বিভিন্ন থেরাপির সাহায্যে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়।
বাবা মায়ের তরফ থেকে সাহায্য পেলে বাচ্চা আরো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। সেই সুবিধার্থে সন্তানের চিকিৎসার সময় বাবা মার সেখানে উপস্থিত থাকা বাঞ্ছনীয়।
চিকিৎসার সময় বাচ্চার শারীরিক সুস্থতার কথাও মাথায় রাখা উচিত। আস্থমা, অ্যালার্জি, সাইনাস, টনসিল ইত্যাদির সমস্যায় ভুগলে চিকিৎসাতে উন্নতি ঘটতে সময় লাগে।
বিনা চিকিৎসার পরিণাম
সময় মত স্পিচ ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা না করা হলে, নিম্নলিখিত সমস্যাগুলি দেখা দিতে পারে:
কথা বলা শিখতে সমস্যা
শব্দ নির্বাচনে সমস্যা
নার্ভের মোটর মুভমেন্টে অসুবিধা
পড়াশোনায় বাধা
মুখের মধ্যে অতি সংবেদনশীলতা না অ-সংবেদনশীলতার কারণে দাঁত মাজা বা মুচমুচে খাবার খাওয়াতে আপত্তি
শিশুর যত্ন নিন
চিকিৎসার সময়, বাড়িতে থেরাপিগুলো ওকে অভ্যাস করান যাতে ওর সঠিক উচ্চারণ শিখতে সুবিধা হয়।
সহজ প্রশ্ন করুন যাতে ও নিজে নিজে বাক্য গঠন করে উত্তর দিতে পারে।
ধীরে ধীরে কথা বলতে উৎসাহ দিন।
তাকে বুঝতে দিন যে আপনি সর্বদা তার পাশে আছেন।