সুখকর কল্পনা মানসিক স্বস্তির মাধ্যম

সুখকর কল্পনা মানসিক স্বস্তির মাধ্যম

Published on

মনের ভিতর নানাপ্রকার সুখকর কল্পনার জাল বুনে আমরা নিজেদের মানসিক চাপের কবল থেকে মুক্ত করতে পারি। এই কৌশলের সাহায্যে একজন পরীক্ষার্থী পরীক্ষার জন্য অযথা উদ্বিগ্ন বা ভয় না পেয়ে, বিষয়টিকে সহজ, স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারে। যদি একজন পরীক্ষার্থী নিজের মনে পরীক্ষায় তার সাফল্যের ছবিটি কল্পনা করে নেয়, তাহলে তার আত্মবিশ্বাস অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে।

মনের সুখকর কল্পনা কীভাবে একজন পরীক্ষার্থীর মনের ভয় বা চাপ দূর করে তাকে মানসিক দিক থেকে স্বস্তি দেবে, তার কৌশলই এখানে আলোচনা করা হয়েছেঃ

১। বাড়ির মধ্যে এমন একটি জায়গা খুঁজে বের করতে হবে যেখানে বসে নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করা যায়। আরাম করে, হাত-পা ছড়িয়ে বসতে হবে। বসার সময়ে শরীরের মধ্যে কোনোরকম জড়তা রাখলে চলবে না। হাত দু'টিকে কোলের উপর বা পাশে রাখতে হবে। পায়ের উপর পা দিয়ে বসা যাবে না। এমনভাবে বসতে হবে যাতে শরীরে আরাম বোধ হয়। একটা গভীর শ্বাস টেনে, তা কয়েক মুহূর্তের জন্য চেপে রেখে তারপর ধীরে ধীরে ছাড়তে হবে। কিছুক্ষণ এই প্রক্রিয়া চালানো জরুরি। এইভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার মধ্য দিয়ে একজন পরীক্ষার্থী মানসিকভাবে স্বস্তি এবং আরাম বোধ করবে।

যদি কোনও পরীক্ষার্থীর মনে ভয় বা অশুভ চিন্তা আসে, তাহলে তা নিয়ে অতিরিক্ত ভারাক্রান্ত না হয়ে সেগুলির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সাধারণভাবে দেখা যায় যে, একটা নির্দিষ্ট সীমার পরে ওইসব চিন্তাভাবনা স্বাভাবিকভাবেই মন থেকে দূর হয়ে যায় এবং মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হয়।

২। নিজের লক্ষ্যের দিকে স্থিরভাবে তাকিয়ে থাকার জন্য ঘরের একটা নির্দিষ্ট জায়গাকে বেছে নিতে হবে। ঘরের একটি নির্দিষ্ট কোণে বা কোনও বস্তুর দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টে চেয়ে থাকতে হবে। তারপর সেই দিক থেকে আস্তে আস্তে চোখ সরাতে হবে। এই কাজ হয়ে যাওয়ার পরে খানিকক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে
থাকা প্রয়োজন।

৩। নিজের শরীরে উপলব্ধি করা বিভিন্ন অনুভূতির প্রতি সজাগ থাকা দরকার। যেমন— একজন পরীক্ষার্থীকে তার কাঁধ, মুখ, পিঠ, পা, পেট বা হাত-- দেহের ঠিক কোন অংশে শিহরন বা টেনশনের বোধ হচ্ছে, তা বুঝতে হবে।

৪। একজন পরীক্ষার্থীকে নিজের কাঁধের গতিবিধির উপর নজর রাখতে হবে। দেখতে হবে যে, কী করলে কাঁধে আরাম বোধ হবে, পেশিগুলি শিথিল হবে এবং কাঁধ দুটো সহজভাবে নাড়াচাড়া করা যাবে। তারপর নীচের চোয়ালের আরামের জন্য দু'পাটি দাঁতের মধ্যে মুখকে যাতে হাঁ করে রাখা যায়, তার ব্যবস্থা করা জরুরি।  এর ফলে সমগ্র মুখমণ্ডলে আরাম পাওয়া যায়। এরপর গলার স্বস্তির জন্য এমন ভাব করতে হবে যাতে টেনশনের ছিটেফোঁটা উপলব্ধি করা না যায়। টেনশনবিহীন এই অনুভূতি ধীরে ধীরে গলা থেকে শিরদাঁড়ায় ছড়িয়ে পড়বে। এইসময় যদি ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া যায়, তাহলে সারা শরীরেই একপ্রকার স্বস্তি-স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করা সম্ভব। প্রত্যেকটি শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্য দিয়ে বুকে চেপে বসে থাকা এক অজানা ভয় যেন উধাও হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে পেটের পেশি আলগা হয়ে গিয়ে পেটকে নরম করতে সাহায্য করে। কিছু সময় ধরে হাতের মুঠো একবার বন্ধ করে আবার খুলতে হবে। হাতের আঙুলগুলো ক্রমান্বয়ে কাঁপাতে ও এপাশ-ওপাশ নাড়াচাড়া করার মাধ্যমে হাত দুটির সমস্ত জড়তা কেটে যাবে।

৫। এরপর নিজের শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে যদি টেনশন অনুভূত হয়, তাহলে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ এবং বর্জনের মধ্য দিয়ে টেনশনের সমস্যা কাটানো জরুরি। এর সাহায্যে শরীরের প্রতিটি অংশে অস্বস্তি দূর হয়ে আরামের বোধ জাগে।

৬। এইভাবে একজন পরীক্ষার্থী তার শরীরে এবং মনে শান্তি ও আরাম পাবে। আর তখন সে তার পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে সুস্থ ভাবনাচিন্তা করতে সক্ষম হবে।

৭। পরীক্ষার দিন সকালে একজন পরীক্ষার্থীর নিজের সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে একটা কল্পনা করা জরুরি। পরীক্ষার জন্য তার কীরকম অনুভূতি জাগছে? তার কি উত্তেজনা হচ্ছে? পরীক্ষা কেমন হবে— এই ভাবনা থেকেই একজন পরীক্ষার্থীর ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। এই সময়ে একজন পরীক্ষার্থীকে মনে মনে কল্পনা করতে হবে যে, সে অত্যন্ত শান্তভাবে পরীক্ষার হলে ঢুকছে এবং বারবার নিজেকে বোঝাচ্ছে যে, যখন সে পরীক্ষা দিতে শুরু করবে তখন তার মানসিক উদ্বেগ নয়, একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান হবে ভালো করে পরীক্ষা দেওয়া।

একজন পরীক্ষার্থীকে মনে মনে এই কথাই ভাবতে হবে যে, সে চেয়ারে বসে ঠান্ডা মাথায়, শান্তভাবে প্রশ্নের উত্তর লিখছে। কেউ যদি পরীক্ষার বিষয়টিকে এইভাবে ভাবনাচিন্তা করতে পারে, তাহলে তার চিন্তা এবং বাস্তবের মধ্যে ফারাক খুব বেশি থাকবে না। যদি কেউ পরীক্ষার জন্য ভয় পায়, তাহলে তার উচিত গভীর শ্বাস টেনে নিজেকে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ করে এই কথাই বোঝানো যে-- ''আমি পরীক্ষায় অবশ্যই ভালো ফল করতে সক্ষম''।

৮। পরীক্ষার্থীকে কল্পনা করতে হবে যে, সে প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে তা মনোযোগ সহকারে পড়ছে। সে এ-ও দেখবে যে, ওই প্রশ্নপত্রের অনেক প্রশ্নের উত্তরই তার জানা। সে অনুভব করবে যে, প্রশ্নের উত্তর লেখার ক্ষেত্রে সে আত্মবিশ্বাসী। এই পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রেখে মনের সমস্ত উদ্বেগ দূর করে নির্ভয়ে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য একজন পরীক্ষার্থীকে নিজের কাছে শপথ করতে হবে। এছাড়া নিজেকে বোঝাতে হবে যে, ''আগের পরীক্ষার মতোই এইবারেও আমি ভালো ফল করব আর সেই চ্যালেঞ্জ নিতে আমি প্রস্তুত''।

৯। শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া এবং ছাড়ার মধ্য দিয়ে সমগ্র শরীর শিথিল হয়ে আসে ও মন ক্রমশ শান্ত হয়ে ওঠে। একজন পরীক্ষার্থীর নিজের মনকে লক্ষ্যের প্রতি স্থির থাকার কথা বোঝানো দরকার। এর ফলে প্রশ্নের উত্তর লেখার ক্ষেত্রে তাকে কোনও অসুবিধা ভোগ করতে হবে না এবং উত্তর লেখাও যথাযথ হবে।

১০। সবশেষে একজন পরীক্ষার্থীকে কল্পনা করতে হবে যে, তার পরীক্ষা দেওয়া শেষ হয়ে গিয়েছে। সমস্ত প্রশ্নের উত্তর সে ভালো করে লিখেছে। তারপর শান্তভাবে নিজের কলম বন্ধ করে খাতাপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে। মনে মনে সে তার লেখা উত্তরগুলির জন্য খুবই আত্মবিশ্বাসী।

এইভাবে একবার যদি কোনও পরীক্ষার্থী সমগ্র পরীক্ষার প্রক্রিয়াটিকে মনে মনে কল্পনা করে নিয়ে এগোতে পারে, তাহলে পরীক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে তার মানসিক প্রস্তুতি সফলভাবে সম্পূর্ণ হবে। এহেন কৌশল অনুশীলনের সাহায্যে একজন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা সংক্রান্ত সব ভয়, চিন্তা, উদ্বেগ প্রভৃতি কেটে গিয়ে শান্ত মাথায়, আত্মবিশ্বাসী হয়ে সে পরীক্ষায় বসতে সক্ষম হবে।

সূত্রঃ

J.T. Lusk, ''30 Scripts for Relaxation, Imagery and Inner Healing, Vol. 1,'' Whole Person Associates, Minnesota, 1992.

Zimmerman, B. J. (1998). Academic studying and the development of personal skill: A self-regulatory perspective. Educational Psychologist, 33, 73-86.  

logo
হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন
bengali.whiteswanfoundation.org