পুরুষত্বের সামাজিক ধারণা পুরুষদের আবেগানুভূতির অভিজ্ঞতা অর্জন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে

পুরুষত্বের সামাজিক ধারণা পুরুষদের আবেগানুভূতির অভিজ্ঞতা অর্জন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে

Published on

আমরা যখন মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করি তখন সেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে জনসংখ্যার মুষ্টিমেয় দুর্বল একটি অংশ। মহিলা, বিচিত্রকামী মানুষ, অক্ষম মানুষ, সমাজের সুযোগ-সুবিধাহীন গোষ্ঠী এবং অন্যান্য মুষ্টিমেয় কিছু মানুষজন- যাদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন সমীক্ষার প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে যে, এই জনসংখ্যার মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার হার পুরুষদের চাইতে দুই থেকে দশ গুণ বেশি।

মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার জৈবিক কারণ অনুসন্ধান করার বদলে, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা দেখা যায় এই সমস্যার মোকাবিলায় আমাদের সমাজের নিপীড়নমূলক আচার-আচরণ নিয়ে। আমাদের সমাজ মূলত পিতৃতান্ত্রিক এবং বিভেদ সৃষ্টিকারী একপেশে, যেখানে পুরুষদের হাতেই সমস্ত সুযোগ-সুবিধা কুক্ষিগত থাকে। সমাজে তাদের ভূমিকা ও প্রাপ্তিগুলো খুবই নির্দিষ্ট বা স্পষ্ট, তারাই হল সমাজের মাথা, সামাজিক সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধার উপর তাদের নিয়ন্ত্রণই অন্য সবার চাইতে অনেক বেশি এবং তাদের সামাজিক পুরস্কারের ঝুলিও একেবারে ভরপুর। এইধরনের সমাজব্যবস্থার মধ্যেই মানুষ বসবাস করছে এবং এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধাচরণ করাও অত্যন্ত কঠিন। এই সমাজে অপেক্ষাকৃত দুর্বল জনসংখ্যার জন্য পড়ে থাকে ক্লান্তি বা অবসন্নতা, ভয়, উদ্বেগ, অবসাদ। আর এর ফলেই উদ্ভূত হয় মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সমস্যা।

'পুরুষ' বা 'পুরুষত্ব'-এর ধারণা

এই আলোচনায় পৌরাণিক পুরুষ (পুরাণে পুরুষের যে ব্যাখ্যা রয়েছে)-এর প্রসঙ্গ টানা যেতে পারে। সেই অনুসারে একজন পুরুষ হল সিসজেন্ডারড্‌ (যার লিঙ্গ পরিচিতির বৈশিষ্ট্য সে জন্মসূত্রে পেয়েছে), বিসমকামী, শক্ত-সমর্থ, নিউরোটিপিক্যাল (অটিজমের পরিভাষার আওতায় যারা পড়ে না), শিক্ষিত এবং সমাজের বৃহত্তর গোষ্ঠী। এমনকী, এসব সত্ত্বা ছাড়াও, পুরুষের ধারণা তুলে ধরতে আরেকটি শক্তিশালী ব্যাখ্যা রয়েছে আর তা হল তার স্বভাবের দমন-পীড়ন বৈশিষ্ট্য।

মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার কবল থেকে পুরুষরাও রেহাই পায় না, এমনকী, এক্ষেত্রে সামাজিক নিয়ম, রীতি বা ধারণা পুরুষের পক্ষে থাকলেও এর বিপরীত ঘটনা ঘটে না। এর কারণ হল পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় প্রায়শই পুরুষের কাছে সবারই উচ্চ প্রত্যাশা থাকে এবং তা পূরণের জন্য পুরুষকে অনেক লড়াই করতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় পুরুষ তার নিজের ব্যক্তিসত্ত্বার সত্যাসত্য গড়ে তুলতে পারে না।

সম্প্রতি, গুরুতর সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনার পর থেকে একদিকে 'আলফা' বা পৌরাণিক পুরুষ এবং অন্যদিকে 'বিটা' বা নবীন এবং সংবেদনশীল পুরুষের ধারণা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিটা পুরুষ উপলব্ধি করে যে সমাজে তারা অস্বীকৃত, নিপীড়িত এবং এই ব্যবস্থায় একমাত্র আলফা পুরুষরাই পুরস্কৃত হয়। তারা নিজেদেরকে সমাজের চরম বঞ্চিত গোষ্ঠী, বিশেষ করে যৌন সঙ্গী ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত বলে মনে করে এবং সে বিষয়ে অনেক পর্যালোচনা চলে। এই হতাশার সঙ্গে যুক্ত থাকে তাদের বিরূপ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার অক্ষমতা ও অন্যকে দমন করার মানসিকতা, যা এমন একটি পরিস্থিতি গড়ে তোলে যেখানে বিটা পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার অভিজ্ঞতা ও ক্ষমতাহীনতার বোধ তাদের মাথায় খুন চাপিয়ে দেয়। এমনকী, তথাকথিত যারা আলফা পুরুষ হয় তাদের ক্ষেত্রে সমাজের নিখুঁত হওয়ার প্রত্যাশা, প্রতিযোগী মনোভাব এবং সমাজের কাছ থেকে অনবরত প্রশংসা শোনার চাহিদা তাদের নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় কোনও বিজেতা নেই

এই ব্যবস্থায় যেখানে মহিলা, বিচিত্রকামী এবং অন্যান্যদের মধ্যে অনেক  অসামঞ্জস্য থাকে, সেখানে পুরুষকেও রেয়াত করা হয় না। বিশেষ করে যখন মানসিক স্বাস্থ্যের প্রসঙ্গ আসে তখন পুরুষত্বের ধারণাটি অত্যন্ত অনমনীয়, কঠিন-কঠোর এবং অলিখিত নিয়মে বাঁধা থাকে।

খুব কম সমাজ রয়েছে যেখানে নীচের পিতৃতান্ত্রিক নিয়মকানুনগুলোর অস্তিত্ব দেখা যায় না। এর মধ্যে কয়েকটি নিয়ম আবার অত্যন্ত কড়া বা কঠোর হয়-  

  • দুর্বল হয়ো না, 'শক্তিশালী' বা 'কঠিন' হও, যাকে এককথায় বলা যেতে পারে পুরুষোচিত

  • পুরুষ কখনও কাঁদে না: কারণ এই আবেগের বহিঃপ্রকাশ হল অপুরুষোচিত একপ্রকার আচরণ; পুরুষদের মধ্যে শুধু ক্রোধ, রাগ প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য থাকবে বলেই মনে করা হয়

  • কাজ কর: কাজ করাই হল একজন পুরুষের ধর্ম। পুরুষ হবে যুক্তিবাদী, অবিচলিত এবং বিচক্ষণতা সম্পন্ন

  • পুরুষ তার অনুভূতি কারও সঙ্গে ভাগ করে না: নিজের অনুভূতি অন্য কাউকে বলা মানে তা অপুরুষোচিত আচরণের নমুনা

  • পুরুষদের মধ্যে স্নেহ, মায়া-মমতার কোনও জায়গা নেই: অনুত্তেজনা, স্নেহ-মমতা থেকে দূরত্ব বজায় রাখাই হল পৌরুষের লক্ষণ।

এসব অলিখিত নিয়মের জন্যই সমাজ একজন পুরুষকে তাদের নিজের অনুভূতি  এবং আকাঙ্ক্ষাগুলোকে অস্বীকার করতে শেখায়, তাদের স্নেহ-ভালোবাসার বোধগুলোকে কঠোরতা, গতানুগতিকতা এবং ভাবলেশহীনতায় পরিণত বা রূপান্তরিত করতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর ফলে পুরুষদের মধ্যে নিজেদের প্রকৃত অনুভূতিগুলোকে একটা শক্তিশালী বর্ম বা মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে রাখার প্রবণতা জাগে এবং শেষমেশ তাদের পৌরুষ শূধুই শূন্যগর্ভ এবং রূঢ়তায় পরিণত হয়।

বুলিইং (মানুষের আবেগানুভূতিকে হেনস্থা করা, মানহানি ঘটানো বা অপবাদ দেওয়া, ভয় দেখানো বা ধমকানো এবং সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার হুমকি) প্রায়শই ভঙ্গুর পৌরুষ রক্ষার তাগিদে ঘটে

পুরুষের দ্বারা লালিত-পালিত পৌরুষ সরাসরি বিরুদ্ধতার মোকাবিলা করতে পারে না। এই অগভীর এবং ভঙ্গুর পৌরুষের অহংকার ভেঙে দেওয়ার জন্য যদি কোনও পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাহলেই পুরুষদের দুর্বলতা, আকাঙ্ক্ষা এবং চাহিদার বাস্তব ছবিটা প্রকাশ্যে আসে। এর ফলাফল হিসেবেই পুরুষরা মারমুখী হয়ে গিয়ে নিজেদের পৌরুষ রক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল পুরুষদের দ্বারা মহিলা, রূপান্তরকামী মানুষ এবং লিঙ্গ-সমতায় বিশ্বাসী মানুষের উপর করা বুলিইং।

পৌরুষ রক্ষার জন্য ঘটা এইধরনের বুলিইং বা আক্রমণের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো হল   নরম বা ভদ্রলোক অথবা সমকামীদের হেনস্থা এবং সেখানেও একজন পুরুষ তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চায়। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে সিঙ্গাপুরে হওয়া একটি সমীক্ষা তুলে ধরা যেতে পারে। ওই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে বাচ্চাদের মধ্যে পৌরুষ জাগানো বা তাদের 'পুরুষ' করে তোলার জন্য চারগুণ বেশি বুলিইং-এর ব্যবহার করা হয়। এইভাবে তাদের নিজেদের পুরুষোচিত শক্তি জাহির করার জন্য  বুলিইংকে একেবারে শিখরে স্থান দিয়ে পর্যায়ক্রমে তার ব্যবহার চলে।

পৌরুষকে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার ফলাফল হিসেবে ঘটে আরেকধরনের বুলিইং, যা মূলত সর্বশেষ্ঠ পুরুষসিংহের অধিকারী পুরুষদের দ্বারাই ঘটে। আর এর প্রমাণ মেলে স্কুলের খেলার মাঠে দাদাগোছের ছাত্রদের দ্বারা শারীরিকভাবে দুর্বল বা নরম স্বভাবের এবং সবজান্তা পড়ুয়া ছাত্রদের উপর করা হেনস্থা থেকে শুরু করে সমকামীতাকে ঘৃণা করা পুরুষদের দ্বারা সমকামী ও রূপান্তরকামী মানুষকে হেনস্থার মধ্যে দিয়ে।

পুরুষরা যাতে নিজেদের ভঙ্গুর পৌরুষ বা সত্ত্বাকে নিয়ে বিচার-বিবেচনা করতে পারে সেজন্য কি কোনও উপায় এবং ক্ষেত্র থাকতে পারে না? তাহলেও কি পুরুষদের পৌরুষ জাহির করার জন্য এত বেশি বুলিইং-এর ঘটনা ঘটবে? তখনও কি বুলিইং একইভাবে সমাজে তার প্রভাবশালী অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবে?

মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা দুর্বলতার লক্ষণ

অনমনীয় পিতৃতন্ত্রের মূল্যায়নের থেকে যে দুঃখজনক পরিস্থিতিটির উদ্ভব হয় তা হল বাস্তবে পুরুষরা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাটিকে কিছুতেই স্বীকার করতে চায় না। বিশেষ করে পুরুষরা চায় নিজেদেরকে একটা পৌরুষের আবরণের মধ্যে ঢেকে রেখে তাদের আলফা পুরুষত্বের বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষা করতে। পুরুষত্বের ধারণা তাদের আবেগানুভূতির অভিজ্ঞতা অর্জন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। যেখানে সমাজের অন্যান্য মানুষ বাধাহীনভাবে তাদের উদ্বেগ, মেজাজ এবং চিন্তাভাবনার মুখোমুখি দাঁড়াতে চায়, সেখানে একজন কঠোর পুরুষসিংহ এগুলোকে মানুষের দুর্বলতা হিসেবে মনে করে এবং ওই দুর্বতলতাগুলোকে মুখোশের মধ্যে ঢেকে রাখা, অস্বীকার বা অতিক্রম করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে।

এই ঘটনার ফলে পুরুষ অনেক বেশি করে মারমুখী হয়ে ওঠে। কারণ পুরুষোচিত  আচরণের মধ্যে শুধু রাগ বা ক্রোধ ছাড়া যে আর কিছু থাকতে পারে না, সেটাই একজন পুরুষ প্রমাণ করতে চায়। ব্যর্থতা মেনে নেওয়া পুরুষের ধাতে নেই তাই সেক্ষেত্রে অনেক পুরুষ ব্যর্থ হলে নিজেদের জীবন একেবারে শেষ করে দিতে চায়। কারণ তারা নিজেদের সম্পর্কে ভাবে যে একমাত্র তারাই কেবল প্রভাবশালী বৃত্তের মধ্যে থাকার যোগ্য। এভাবে অনেক পুরুষ নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে মানসিক  নরকযন্ত্রণা ভোগ করে বেঁচে থাকে। তবু অন্য কারোর কাছ থেকে সাহায্য চায় না।

যদি আমরা একটি লিঙ্গ বৈষম্যমুক্ত পৃথিবীতে থাকতে পারতাম তাহলে কী হত?

পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার গভীর অসুখগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্যই পৃথিবীতে যত উদার বা সমতায় বিশ্বাসী সমাজব্যবস্থা রয়েছে তারা এই গতানুগতিক লিঙ্গ বৈষম্যের ধারণা ভাঙার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা শুরু করেছে। লিঙ্গ সমতা আনার জন্য সামাজিক শিক্ষার প্রচলন করেছে, সব সত্ত্বার প্রতি সমানুভূতির বোধ জাগানোর চেষ্টা করছে, সমবেদনা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়াকে মূল্য দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। ইউরোপ, কানাডা-সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের স্কুল ব্যবস্থায়, বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার স্তর থেকেই অন্যান্য শিক্ষাদানের সঙ্গে পুরুষতান্ত্রিকতা ভেঙে ফেলার জন্যও শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। ওইসব দেশের আইনব্যবস্থাতেও লিঙ্গ সমতা আনা ও বৈষম্য দূর করার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ অনেক নতুন আইনও গড়ে উঠেছে।

এর তাৎক্ষণিক ফলাফল হিসেবে অল্পবয়সি ছেলে-মেয়ে বা যুবক-যুবতীদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন লিঙ্গ ও গোষ্ঠীর মধ্যে যে বিরাট শূন্যতা ছিল তা অনেকটাই কমে এসেছে। সেই সঙ্গে এই সমস্যার সমাধানে হস্তক্ষেপ করার সময়ের থেকেও এখন বুলিইং এবং আগ্রাসন বা বিনা প্ররোচনায় আক্রমণের ঘটনা ঘটার খবর অনেক কম শোনা যাচ্ছে বা দেখা যাচ্ছে।

এবিষয়ে আরও চরম পদক্ষেপ করার চেষ্টা করতে হবে এবং সামাজিক বৃত্ত ও পরিচয় গঠনের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্যের ধারণাকে একেবারে নির্মূল করতে হবে। যদি লিঙ্গ সংক্রান্ত এত ভাবনাচিন্তা আর মানুষের মধ্যে দেখা না দেয় তাহলে কী হবে? সমগ্র সমাজে যদি কোনও লিঙ্গ পরিভাষা গড়ে না ওঠে তাহলে কী হবে- যেমন কোনও গোলাপি/নীল ভাগাভাগি থাকবে না, জামাকাপড়/বেশভূষার ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকবে না, চুলের ধরন/চটি-জুতোতেও কোনও ভিন্নতা থাকবে না? যদি নিজের অনুভূতি, চিন্তাভাবনা বা আচরণ প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনও সীমাবদ্ধতা না থাকে তাহলে কী হবে?

যদি এমন একটা সমাজব্যবস্থা গড়ে ওঠে যেখানে লিঙ্গের ধারণা সম্পূর্ণ প্রবাহমান থাকবে এবং পরিচয় গঠনের ক্ষেত্রে তা নিতান্তই তুচ্ছ বিষয় হিসেবে গন্য হবে, তাহলে কি সেই সমাজে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা কম পরিমাণে দেখা দেবে? সেখানে কি বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা যেমন- যৌন হিংসা, গোষ্ঠীগত বা দলগত সমস্যার ঘটনা অনেক কম ঘটবে?

ইদানীং কিছু সমাজ পরীক্ষামূলকভাবে মানুষের পরিচয় গঠনের মূল ভিত্তি হিসেবে লিঙ্গের ধারণাটিকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ার কয়েকটি দেশে নামের ক্ষেত্রে, স্কুলে শিক্ষার ক্ষেত্রে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ পরিভাষা গড়ে তোলার জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছে। মানুষের পরিচয় গঠনের ক্ষেত্রে তার লিঙ্গ পরিচিতির প্রয়োজনীয়তা দূর করে সত্যিই পরিবর্তন আনা যায় কিনা বা কীভাবে আনা যায় এবং লিঙ্গ বৈষম্যের দেওয়াল সত্যিই ভেঙে ফেলা যায় কিনা এবং সেই ভঙ্গুর ব্যবস্থাজনিত সমস্যার সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা সরাসরি যুক্ত কিনা-  সেটাই এখনও দেখতে বাকি আছে।

সূত্র:

logo
হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন
bengali.whiteswanfoundation.org