মহিলাদের ক্ষেত্রে অবসাদের ঝুঁকি কি বেশি থাকে?
গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে অবসাদ ও উদ্বেগের মতো মানসিক অসুখে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা প্রায় দ্বিগুণ বেশি। এর পিছনে রয়েছে কতগুলো নির্দিষ্ট কারণ-
১. হরমোন: পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের মধ্যে হরমোনের তারতম্য বেশি ঘটে। শরীরে এই হরমোনের তারতম্যের সঙ্গে মানসিক অবসাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। একজন মহিলার জীবনের বিশেষ অধ্যায়ে যেমন- বয়ঃসন্ধি ও মেনোপজের সময়ে তাদের শরীরে হরমোনের তারতম্য বেশি হয়। ঋতুস্রাবের সময়ে হরমোনের পরিবর্তনের জন্য মহিলাদের মেজাজ-মর্জির বদল ঘটে এবং এর সঙ্গে মানসিক অবসাদের অনেক মিল রয়েছে।
২. জিন: যমজ এবং সমজাতীয় সন্তান-সংক্রান্ত গবেষণায় দেখা গিয়েছে মহিলাদের মধ্যে মানসিক অবসাদের জিনগত প্রবণতা খুবই শক্তিশালী। মহিলাদের মধ্যে বংশানুক্রমিকভাবে জিনের এমন কতগুলি নির্দিষ্ট রূপান্তর ঘটে, যা তাদের মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।
৩. পারিপার্শ্বিক উপাদান বা পরিবেশগত কারণ: লিঙ্গ বৈষম্যের পিছনে সামাজিক এবং পরিবেশগত উপাদানের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। সামাজিক ক্ষেত্রে মহিলাদের জীবনে নানারকম বিপর্যয় ঘটতে দেখা যায়। যেমন- শিশুদের যৌন হেনস্থা, পারিবারিক হিংসা বা পূর্ণবয়স্ক মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতন প্রভৃতি। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, মহিলাদের জীবনে ঘটা এসব বিপর্যয়ের কারণে তাদের মধ্যে মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবসময়েই বেশি থাকে।
এছাড়াও শিশু বা বয়স্ক অভিভাবকদের পরিচর্যাকারী হিসেবে মহিলারাই অধিকাংশ সময়ে দায়িত্ব পালন করে। যদিও এই দায়িত্ব পালনের জন্য তাদের মধ্যে মানসিক চাপের পরিমান বেশি না হলেও, একনাগাড়ে সেই চাপ চলতে থাকার কারণে তাদের মধ্যে অবসাদের প্রবণতা দেখা দেয়।
অন্যান্য পারিপার্শ্বিক কারণ, যেমন - দারিদ্র্য, সন্তানের একমাত্র দেখভালকারী হিসেবে দায়িত্বপালন, পারিবারিক দায়দায়িত্ব ও চাকরি ক্ষেত্রে লড়াই প্রভৃতির জন্যও মহিলাদের ক্ষেত্রে মানসিক অবসাদের লক্ষণ বেশি দেখা যায়।
৪. রোগ নির্ণয়: উভয় লিঙ্গের অভিব্যক্তির ফারাকের কারণেও মহিলাদের মধ্যে মানসিক অবসাদ বেশি পরিমাণে চিহ্নিত হয়। মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা তাদের অনুভূতি অন্যদের সঙ্গে খুব কম ভাগ করে নিতে পারে অথবা মেজাজগত সমস্যার জন্যও তাদের অন্যের সাহায্য তেমন দরকার হয় না। পুরুষদের মানসিক অবসাদ তাদের হিংসাত্মক আচরণ এবং মদ্যপানের মতো অভ্যাসের আড়ালে লুকিয়ে থাকে।
৫. দৈহিক স্বাস্থ্য: হাইপোথাইরয়েডের সমস্যা মহিলাদের মধ্যে মানসিক অবসাদের প্রবণতা বাড়ায়। তাছাড়া কম শারীরিক কসরত বা পরিশ্রম মানসিক অবসাদের অন্যতম কারণ।
সূত্র: